প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ২৪, ২০২৫, ৭:১০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ৪, ২০২১, ১:৪৯ এ.এম
নিরেন দাস,জয়পুরহাটঃ-
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন নামধারী একটি এনজিও কয়েকটি শাখা খুলে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সনদ ছাড়ায় নানা লোভনীয় অফার দেখিয়ে দেদারছে চালিয়ে চাচ্ছে প্রতিদিন, সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তিসহ ক্ষুদ্র ঋণের চড়া সুদের ব্যবসা।
এ মিতালী ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন সংবাদ কর্মীরা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ প্রকাশ করলেও মিতালি ফাউন্ডেশনের খুঁটিরজোর নড়াতে না পারলে জাতীয় দৈনিক সূর্যোদয় এর দৃষ্টিগোচর হলে মিতালী ফাউন্ডেশনের বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দৈনিক সূর্যোদয় এর অনুসন্ধানিক টিম যে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আছে তাদের খুঁটিরজোর।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায় রাষ্ট্রীয় তফসিলভূক্ত ব্যাংক ও সংস্থাগুলোর চেয়ে দিগুনেরও বেশি মুনাফার লাভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা এফডিআর হাতিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। অনেক ভুক্তভুগীরা তাদের আমানত, সঞ্চয় ফেরত এবং ঋণ নিতে গেলে হয়রানির শিকার হয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টদের নাকের ডগায় এমআরএ’র সনদ ছাড়ায় চড়া সুদে অনিয়ম করে একযুগ থেকে এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কারন হিসাবে সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং ও উদাসীনতায়কেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা। এখনি ওই নামধারী এনজিওর লাগাম টেনে না ধরলে চরম ক্ষতির আশংঙ্কা করছেন নানা শ্রেণির পেশার মানুষ।
আরো জানা যায় এ প্রতারক বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও ১২ বছর আগে নওগাঁ থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ৩৯ টি শাখার কার্যক্রম বিদ্যমান। নওগাঁ জেলার সীমানা পেরিয়ে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর, গোপিনাথপুর, রায়কালী, চন্দনদিঘী, জিয়াপুর সহ প্রকাশ্যে কয়েকটি শাখা খুলে গ্রামের সহজ সরল দরিদ্র ও নানা শ্রেণীর পেশার মানুষের মাঝে চড়া সুদের লোভনীয় অফার প্রস্তাব দিয়ে সুকৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকার এফডিআর, ডিপিএস ও সঞ্চয় হাতিয়ে নিচ্ছেন। উল্টো দিকে তাদের গচ্ছিত আমানত, সঞ্চয় ফেরত ও ঋণ নিতে গেলে, তাদের হতে হচ্ছে নানা হয়রানির শিকার। যেখানে রাষ্ট্রীয় তফসিলভূক্ত ব্যাংক ও সংস্থাগুলো আমানত, সঞ্চয়ের মুনাফা দিচ্ছেন প্রতি লাখে ৮’শ ৭৪ টাকা।
সেখানে ওই এনজিও লাখে ২ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ওই প্রতিষ্ঠানের শাখাগুলো বন্ধ করে, সংশ্লিষ্টরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিবে এমন দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দৈনিক সূর্যোদয়ের অনুসন্ধানিক টিমের নিকট ভুক্তভুগী ও স্থানীয় শফিকুল ইসলাম, এনামুল হক, জিয়া,ইমাম ইসলাম, শহীদুলসহ অনেকেই অভিযোগ তুলে বলেন, আমাদেরকে নানা প্রলোভন দিয়ে সঞ্চয়, ডিপিএস নেয় এবং এক-দেড় বছর ঘুড়ার পর তাদের কাছে ঋণ চাইলে তারা ঋণ দেয়না। অনেক কষ্ট করে দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে এমনকি এলাকার লোকজন নিয়ে মারতে চাইলে টাকা ফেরত দিছে। এই রকম শত শত মানুষের সাথে এই রকম করেছে।
তারা ঋণ দেয়না, গ্রামগঞ্জে কর্মী ছেড়ে দিয়ে খালি টাকা নিয়ে আসতে বলে। এরা একটা প্রতারনা করছে। এই বন্ধু মিতালি ফাউন্ডেশন চলবে না, বাংলাদেশ থেকে তুলে দেওয়ার দরকার। সরকার এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেক।
বন্ধু মিতালীর ফাউন্ডেশনের ফিল্ড অফিসার আজবির হোসেন সবুজ, একাউন্ট অফিসার আলেয়া বেগম এফডিআর’র রাখার কথা শিকার করে প্রতিবেদকদের বলেন, এফডিআর রাখা হয়েছে প্রতি লাখে ২ হাজার টাকা মুনাফা দেওয়া হয়। এছাড়াও ক্ষুদ্র ঋণ চালানো হয়। ম্যানেজার এমতাজ উদ্দিন জানান, আমরা ঋণ নেই, সঞ্চয়, ডিপিএস, এসটিআর এগুলো নেই এফডিআর নেওয়ার বিষয় হেড অফিসের ব্যাপার।
এদিকে জোনাল ম্যানেজার সেকেরুল হাসান জেমস এফডিআর’র নেওয়ার বিষয় অস্বিকার করে দৈনিক সূর্যোদয়কে বলেন, আমরা জয়েন স্টক থেকে নিবন্ধন নিয়ে ১২ বছর থেকে নওগাঁ ও জয়পুরহাটে ৩৯ টি শাখা নিয়ে আমাদের ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সনদ আমরা এখনো পাইনি।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির দায়িত্বশীল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-পরিচালক কিছুটা আশ্চর্য হয়ে জানান যে, ১২ বছর থেকে এমআরএ’র সনদ ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করছে তা আইন সম্পত নয়।
স্থানীয় উপজেলা প্রসাশন, জেলা প্রসাশন তারা নিয়মিত এনজিওদের নিয়ে মাসিক মিটিং করে। তারা তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আপনারা আমাকে জানিয়েছেন লিখিত ভাবে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করুন আমি উদ্ধতনের নির্দেশে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিবো।
জয়পুরহাট জেলা এনজিও সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির যারা ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করেন তাদেরকে এমএফআই বলা হয়। এমআরএর সনদ ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করার বিধান নেই।
আক্কেলপুর উপজেলার সমাজসেবা অফিসার সোহেল রানা বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে ওই এনজিওর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত চলছে, তারা যদি অবৈধ ভাবে পরিচালনা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবে।
আক্কেলপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এসএম হাবিবুল হাসান জাতীয় দৈনিক সূর্যোদয়কে বলেন, ইতিমধ্যে এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রির্পোট পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী যৌথমূলধন কোম্পানী ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (জয়েন স্টক) সহকারী নিবন্ধক রকিবুল ইসলাম জাতীয় দৈনিক সূর্যোদয়কে বলেন, শুধু মাত্র জয়েন স্টক এর লাইসেন্স দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করতে পারবে না। যদি করে তা আইন বিরোধী কাজ হবে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্স নিয়ে ঋণ কার্যক্রম চালাতে হবে এটাই আইনে উল্লেখিত রয়েছে তিনি বলেন।