সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার জমি আছে ঘর নাই ও জমি ঘর কিছুই নাই এমন জনগনের তালিকা তৈরি করে বিনা অর্থে ঘর ও জমি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। আর এই সুযোগে সাভারের বিরুলিয়া ও আশুলিয়া ইউনিয়নের মহিলা ওয়ার্ড সদস্য ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অসহায় দরিদ্রদের কাছে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সারুলিয়া এলাকার ইউপি মহিলা সদস্য সেলিনা বেগম ও আশুলিয়ার দোসাইদ এলাকার মহিলা সদস্য সালমা বেগম প্রায় ৪০ টি পরিবারের প্রত্যেকটির কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। কথা ছিল, যাদের জমি আছে ঘর নেই ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের নির্মান করে দেওয়া হবে ঘর। কাউকে বলা হয়েছে এনজিও থেকে কাউকে বলা হয়েছে সরকারি বরাদ্দ থেকে দেওয়া হবে এসব ঘর। টাকা দিলেই তারা পাবেন ৫ লাখ টাকা মুল্যের ঘর। একটি ঘরের আশায় এসব পরিবার জনপ্রতিনিধি হিসাবে আস্থা রেখে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন সারাজীবনের কষ্টার্জিত শেষ সম্বলটুকু। বিনিময়ে পেয়েছেন আশ্বাস ও লাঞ্চনা। অনেকরই সান্ত্বনামুলক শুরু করা হয়েছিল ঘর নির্মানের কাজ। তবে মাসের পর মাস গেলেও তা পুর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।
বিরুলিয়া ইউপি’র সারুলিয়া এলাকার মহিলা সদস্য সেলিনা বেগমের প্রতি আস্থা রেখে প্রতারণা ও লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন একই এলাকার আশির্ধো বাসিন্দা আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, আমি ছোট্ট একটি ঘরে আমার জায়গাতেই ছিলাম। মহিলা মেম্বর সেলিনা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি দিচ্ছে শুনে আমিও দুইটা বাড়ির জন্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা সেলিনাকে দেই। পরের দিন সেলিনা আসেনি। তার লোকজন এসে বলে ঘর দ্রুত ভাঙ্গতে হবে। ঘর নির্মান শুরু করা হবে। পরে ঘর দ্রুত ভাঙ্গা হয়। শুরু হয় ঘর নির্মানের কাজ। তবে শুরু হতেই শেষ হয়েছে ঘর নির্মানের কাজ। প্রায় ৬ মাস যাবৎ সেলিনার দেখা নাই। এখন টাকা চাইলে সেলিনা খারাপ ব্যবহার করেন, লাঞ্চিত করেন।
অপর ভুক্তভোগী হাফিজ বলেন, ‘আমি সেলিনাকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা লোন তুলে দেই। কথা ছিলো দুটি শয়ন কক্ষ, ১ টি রান্না ঘর, একটি গেস্টরুম ও একটি শৌচাগার নির্মান করে দেওয়ার। কিন্তু সেলিনা শুধু ৩ গাড়ি ইট আর ১ গাড়ি খোয়া দেন। পরে আমি নিজে আরও ইট আর বালু দেই। এভাবে দেয়াল নির্মান প্রায় সম্পন্ন করে নিয়েছি। এখন বাকি কাজ আর সেলিনা করেও দিচ্ছে না, টাকাও দিচ্ছে না। আমি অন্যের ঘরে অতি কষ্টে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অনেক কষ্ট আছি।
এই ইউপি সদস্য শুধু ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকাই হাতিয়ে নেননি, বিনামুল্যের সরকারি ঘর দিয়ে বিনিময়ে নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। আর টাকা প্রদানের বিষয়টি কাউকে জানানো যাবে না বলে ধর্ম গ্রন্থ ছুয়ে শপথের জন্যও চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে বিরুলিয়া ইউনিয়নের বাগ্নিবাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী সমলা খাতুন বলেন, ‘আমি মেম্বার সেলিনার কাছে ঘর চাইতে গেছিলাম। দুই রুমের ঘর দিতে চেয়ে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে এক রুমের ঘর দিয়েছেন। আমাকে কোরআন শরিফ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করতে বলেছিলেন, আমি যেন টাকার বিষয়টি কাউকে না বলি। আমি কষ্ট করে টাকা ইনকাম করেছি, কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ করবো কেন। আমি শপথ করি নি।’
জনপ্রতিনিধি সেলিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে । সেলিনা বেগম ভিডিও বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও টাকা গ্রহণের বিনিময়ে ঘর প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার পাশের ইউনিয়ন আশুলিয়ার ইউপি মহিলা সদস্য সালমা কয়েকজনকে ঘর দিয়েছে। এটা আমি জানতে পারি। সামনে নির্বাচনকে ঘিরে আমিও গরীব দুঃখীদের ঘর দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি সালমার সাথে যোগাযোগ করি। সালমা বলেন, ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি বিদেশী সংস্থা ঘর দিচ্ছে। আমি তাকে বলি আমার নির্বাচনী এলাকায় আমিও ঘর দিতে চাই। পরে ৪ জনের নিকট থেকে টাকা নিয়ে তাদের ঘর নির্মানের কাজ শুরু করি। এসময় আরও প্রায় ১৬ টি এসে ঘর নেওয়ার কথা বলেন। আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সালমাকে দেই। এখন সালমা আর কাজও করছে না টাকাও দিচ্ছেন না। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিবেন। তাদের টাকা ফিরিয়ে দেবেন কিংবা ঘর নির্মান করে দিবেন। ১৫ দিনের আগে সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে অনৈতিক প্রস্তাব দেন।
এব্যাপারে সালমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, আমি ৪ জনের কাছ থেকে ৩০ হাজার করে টাকা নিয়ে ঘর নির্মান করে দিয়েছি। তার ঘর নির্মানের সত্যতা পাওয়া যায়। সেলিনা তাকে ঘর নির্মানের জন্য টাকা প্রদান করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব টাকা সেলিনাই নিয়েছেন। তিনি আমাকে কোন টাকা দেন নি।
সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভুমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, এদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এব্যাপারে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তবে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy