
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সড়কের পাশের সরকারি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে পিপলস ফার্ম কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সড়কের পাশে থাকা একাধিক সরকারী গাছ প্রকাশ্য দিবালোকে কেটে গাছের গোড়া মাটি চাপা দিয়ে তা অস্বীকার করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৬ নভেম্বর) সকালে উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের সাগরদিঘী-গারোবাজার রোড সংলগ্ন সানবান্ধা বাজারের উত্তর পার্শ্বে পিপলস পোল্ট্রি ফার্মের গেটের সামনের রাস্তায় দেদারসে গাছ কাটার দৃশ্য দেখা যায়।
মোস্তফা কামাল আকন্দ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,পিপলস পোল্ট্রি ফার্মের গেটের সামনে গাছগুলো থাকায় ফার্ম কতৃপক্ষের সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরে কোম্পানির কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই গাছ দুটি কাটা হয়েছে। এতে কোন সরকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া হয়নি।তবে লক্ষিন্দর ইউনিয়নের একাব্বর আলী চেয়ারম্যানসহ স্হানীয় প্রশাসনের অনেকের কাছ থেকেই মৌখিক অনুমতি নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তেজগাঁও ট্রাক শ্রমিক সমিতির সভাপতি ও জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি বলে নিজেকে উপস্থাপন করেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়,জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কোন সদস্যের তালিকাতেও তার নাম নেই।গাছ কাটার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন অযুহাতে কথা গুলো এড়িয়ে যান।
অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,”আমরা কোম্পানির লেবার হিসেবে কাজ করি”, তাদের কথা মতোই গাছ দুটি কাটা হইছে’। একটি মেহেগুণী ও একটি ইউক্যালেকটাস গাছ কাটার কথা স্বীকার করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়,পিপলস পোল্ট্রি ফার্মের গেটের ভিতরে গাছের কিছু অংশ রাখা রয়েছে।সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পিপলস কোম্পানির কয়েকজন এবং মোস্তফা আকন্দের লোকজন মিলে দ্রুত গাছ গুলো সরিয়ে ফেলে।কিছু সময় পিপলস কোম্পানির গেটের সামনে থাকলেও পরবর্তীতে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে স্থানীরা জানান,হয়তো কোম্পানির স্বার্থেই গাছ দুটি কর্তন করা হয়েছে। গাছের গুড়ালির চিহ্ন লোকাতে আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।
কোম্পানির ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ মুঠোফোনে গাছকাটার বিষয়টি অস্বীকার করে জাবান,ওই গাছ কাটার ব্যাপারে আমরা জড়িত নই। তবে তখন আমি জরুরী মিটিংয়ে ছিলাম।যারা গাছ কেটেছে তাদের ব্যাপারে আমাদের কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলতে পারবেন। আমি কিছু জানি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,ওই এলাকার কয়েকজনের সহায়তায় কোম্পানির এডমিন হারুন অর রশিদের নির্দেশেই ওই কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানার উপস্থিতিতে গাছ গুলো কর্তন করা হয়েছে।
পর দিন রবিবার (৭ নভেম্বর) বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদককে পুনঃরায় অফিসে ডেকে নিউজটি না করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সাথে কথা বলার শর্তে গিয়েও ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপকের হদিস মিলেনি।
সাগরদিঘী বিটের বন কর্মকর্তা সিদ্দীক হোসেন বলেন, গাছ গুলো আমাদের আন্ডারে না। এগুলো এলজিইডির আওতাধীন।
এ ব্যাপারে লক্ষিন্দর ইউপি চেয়ারম্যান একাব্বর আলী জানান,গাছ কাটার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।তাকে কেউ সরাসরি বা মোবাইল ফোনেও অবগত করেনি।
তিনি আরও বলেন,অনুমতি ছাড়া সরকারী গাছ কাটার অধিকার কারো নেই।তারপরও যদি কেউ কেটে থাকে তাহলে অবশ্যই সে সরকারি আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অপরাধ করেছে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহাগ হোসেন জানান, নিয়মবহির্ভূত ভাবে কেউ গাছ কাটতে পারেন না।কোন রাস্তার সরকারী গাছ কাটার নির্দেশ কেউ দিতে পারে না। আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে পাঠাবো। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাছ কাটার বিষয়ে টাঙ্গাইল এলজিইডি প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ গাছ কাটতে পারবে না। যদি কাটতে হয় তখন বন বিভাগের টেন্ডারের মাধ্যমে কাটতে হবে।অবশ্যই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply