টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বিখ্যাত কাঠাল এবং মিষ্টি আনারসের জন্য ঐতিহ্যপূর্ন স্থান গারোহাট। এখানে প্রতিনিয়ত ঢাকা, খুলনা, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা মাল কিনতে আসেন পাইকার এবং আড়ৎ মালিকরা। আর এর জন্যই অসাধু, দখলবাজ, দূর্নীতিবাজ, ভূমি দস্যু, সন্ত্রাসী, ক্যাডারবাহিনীর আখরায় পরিনত হতে যাচ্ছে এ গারোহাট। গারোহাট এখন আর জনগণের হাট নেই, হাট যেন কতিপয় নামধারী কিছু নেতাদের। তাদের কথাতেই হাটের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তারা সরকার বা কোন প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মন গড়া আইনেই হাট পরিচালনা করে থাকেন। কেই মুখ খুলতে গেলেই হামলা মামলা করার হুমকিসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে নিরব রাখা হয়। এবার স্থানীয় সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গারোহাটের প্রায় সারে পাঁচ একর জায়গা অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করার দাবীতে, মধুপুর উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
১৪ জুলাই বিকাল ৩টায় এ আবেদন করা হয়। মধুপুর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) এম এ করিম আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এলাকার প্রায় শতাধিক ব্যক্তির গণস্বাক্ষরসহ এ আবেদন টি করেন মোঃ শহিদুল ইসলাম সোহেল।
শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার তিনটি উপজেলার সংযোগ স্থলে এ গারোহাটের অবস্থান। মধুপুর উপজেলার পূর্ব প্রান্ত, ঘাটাইল উপজেলার উত্তরপূর্ব প্রান্ত এবং ফুলবাড়িয়া উপজেলার শেষ পশ্চিম প্রান্তের সংযোগস্থলে এ হাটের অবস্থান। হাটের অবস্থান মধুপুর অংশে হলেও কালের আর্বতে হাটটি ধীরে ধীরে ঘাটাইল অংশে বেশি প্রসার ঘটেছে। ঐতিহাসিক গুইলার পাহাড়ের এ ঐতিহ্যবাহী হাটটি এখন হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। এ হাট সপ্তাহে দুই দিন বসে। ঘাটাইল উপজেলার অংশে সরকার প্রায় অর্ধকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করার প্রকাশ পেলেও সেখানেও নানা রকম দূর্নীতি ঘটনা ঘটেছে। মধুপর পাশে বারবার সরকারের নিকট গ্রোথসেন্টারের জন্য আবেদন করেও বিফল হয়েছে এ পাশের মানুষ। মধুপুর অংশে কয়েক বছর আগে স্থানীয় ইজারাদারের মাধ্যমে এ হাটে পানীয় জলের জন্য একটি টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট করেছে। সেটাও বর্তমানে ব্যবহার অনুপোযোগী। মুল হাটটি দখল করে নিয়েছে ভুমিদস্যু, দখলবাজ এবং কিছু কতিপয় স্থানীয় ক্যাডার বাহিনীর নামধারী কিছু নেতা। এলোমেলো ঘর তুলে আবাসিক এলাকার নামে চলছে নানা অসামাজিক কার্জকলাপ। ফলশ্রুতিতে হয়রানির শিকার হচ্ছে নিরীহ লোকজন, নষ্ট হতে চলেছে সামাজিক পরিবেশ এবং স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে।
শিক্ষাদীক্ষায়ও পিছিয়ে নেই এ অঞ্চলের মানুষ। এ হাটের সখিপুর–কাকরাইদ, পোড়াবাড়ি-গারোহাট, গারোহাট-ফুলবাড়ীয়া, গারোহাট-রক্তিপাড়া, গারোহাট-মধুপুর মহাসড়কের পাশে সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে সোনালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, ব্যুরো, আশা, প্রশিকা, টি.এম,এস.এস,সি.সি.ডি.বি, আনন্দসহ এক ডজনের উপরে এনজি ও এর অফিস ও কার্যক্রম। রয়েছে একটি কলেজ, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি দাখিল মাদ্রাসা, দুটি এবতেদায়ী মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি কিন্ডাগার্টেন স্কুল। ৩৮৩২ নং দাগের ২ নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সাত একর জমি সরকার গারোহাটের নামে পেরি পেরি ভুক্ত করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জবরদখল মুক্ত করে গ্রোথসেন্টার করার প্রতিশ্রতি দিলেও নিজেদের পেট ভজন শেষে নানা বাহানায় প্রভাবশালী ভুমি দস্যুদের কাছে নতি স্বীকার করে পিছু হটেছেন।
গারোহাটটি এ বছর প্রায় সাত লক্ষ টাকা ইজারা হয়েছে। ইতিপূর্বে হাট ইজারার উন্নয়নের ১৫% টাকা ভোগ করছেন ইজারাদার নিজেই। গারোহাটের পেরিপেরি ভূক্ত জমির দখলকার রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। হাটের নেই সুশৃঙ্খল হাট পরিচালনা কমিটি।
হাটের সূধীজন মনে করেন, সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অপরদিকে স্থানীয় জনগণ পাবে সুষ্ঠ হাট ব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে হাটটি ভূমিখোর ও চাঁদাবাজদের হাত থেকে মুক্ত করতে তিনি এলাকা এবং হাটের উন্নয়নের জন্য উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা(এসিল্যান্ড)এর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এম এ করিম বলেন, অভিযোগটি এই প্রথম আমার কাছে এসেছে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।