আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধিঃ
প্রশিক্ষণে গিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পুলিশের ২১৩ এসআই শাস্তির মুখে পড়েছেন। টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে- ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অমান্য করে তিন দিন অনুপস্থিত থাকায় ওই এসআইদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা অনুপস্থিতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, পুলিশ সদর দপ্তরে মিথ্যা তথ্য পাঠিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ক নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, টাঙ্গাইল পিটিসি থেকে প্রতিদিন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো মর্নিং রিপোর্টে এসব কর্মকর্তার অনুপস্থিত থাকার প্রমাণ নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসআইদের (নিরস্ত্র) ১৯তম ডিসি কোর্সে সাড়ে আটশর বেশি প্রশিক্ষণার্থী
ছিলেন। পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেতে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণটি আবশ্যক। ১৯তম কোর্সটি শুরু হয় ২০২০ সালের ১৪ জুন। প্রথম ছয় মাস প্রাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন তারা। পরবর্তী ছয় মাস টাঙ্গাইল পিটিসিতে শারীরিক প্রশিক্ষণে যোগ দেন তারা। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর পিটিসিতে তাদের কোর্স শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ গত ১৪ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কোর্স শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে ২১৩ জনকে কোর্স থেকে বাদ দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, গত ১৩ থেকে ১৫ মে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ওই কর্মকর্তাদের পিটিসিতেই অবস্থান করতে বলা হয়। পিটিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই নির্দেশনা অমান্য করে এবং অনুমতি না নিয়ে ২১২ জন বাড়িতে চলে যান। রোলকল করে তাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এর কিছু দিন আগেও আরেকজন এ নির্দেশনা অমান্য করেন। সব মিলিয়ে ২১৩ জনের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। চিঠিতে টাঙ্গাইল পিটিসির কমান্ড্যান্ট ময়নুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ১৩ মে বিকাল ৫টা থেকে ১৫ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন প্রশিক্ষণার্থী ২১২ জন। এর পর পুলিশ সদর দপ্তর এক চিঠিতে বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করায় অভিযুক্তদের কোর্স থেকে অব্যাহতির নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে তারা পিটিসি ত্যাগ করার সুযোগ পাওয়ায় সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিঠিতে বলা হয়।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যে বিষয়টি উল্লেখ করে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটি ঠিক নয়। পিটিসিতে প্রতিদিন তিনবার রোলকল করা হয়। তারা শুধু ঈদের দিন রাতের রোলকলে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটিকে তিন দিনে পাঁচবার অনুপস্থিত দেখিয়ে সদর দপ্তরে চিঠি পাঠায়।
শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তাদের এই দাবির সত্যতা মেলে পিটিসি থেকে প্রতিদিন সকালে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো মর্নিং রিপোর্টে। টাঙ্গাইল পিটিসি কমান্ড্যান্টের পক্ষে পুলিশ সুপার সালমা সৈয়দ পলি ওই তিন দিনের মর্নিং রিপোর্ট সদর দপ্তরে পাঠান। তাতে দেখা যায়, ১৩ থেকে ১৫ মে তিন দিন প্রশিক্ষণে ৮৫৬ জন এসআই উপস্থিত ছিলেন, আর অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন ১১ জন। এ ছাড়া টাঙ্গাইল পিটিসির এসআই (ফোর্স) হাবিবুর রহমান খান এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন, ২১২ জন প্রশিক্ষণার্থী শুধু ঈদের দিন অর্থাৎ ১৪ মে রাতের রোলকলে অনুপস্থিত ছিলেন।
মর্নিং রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল পিটিসির এসপি সালমা সৈয়দ পলি গণমাধ্যমকে বলেন, সদর দপ্তরে পাঠানো রিপোর্টের বিষয়ে ফোনে কথা বলবেন না তিনি।
ডিসি কোর্স থেকে বাদ পড়া কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ঈদের দিন দুপুরের দিকে পিটিসির ভেতরের পার্কে টিকিট কেটে অনেক দর্শনার্থী প্রবেশ করেন। করোনার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এমন অবস্থা দেখে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন প্রক্ষিণার্থীরা। এ সময় তাদের জানানো হয়, ঈদ উপলক্ষে এদিন রাতে তাদের রোলকল হবে না। এ ছাড়া এদিন সকালে ও বিকালেও রোলকল হয়নি। পরে কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে পিটিসির বাইরে যান তারা।
একপর্যায়ে সহকর্মীদের কাছে শুনতে পান রাতে রোলকল হয়েছে। ওই রাতেই পিটিসিতে ফেরত আসেন তারা। তখন তাদের জানানো হয়, পর দিন সকাল থেকে প্রশিক্ষণে যোগ দিতে। কিন্তু দুদিন প্রশিক্ষণ করার পর জানানো হয় তাদের কোর্স বাতিল করা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী এসআই বলেন, ঈদের দিন বাইরে যেতে পিটিসির আরওসহ অন্য একজন কর্মকর্তাকে ২১২ জন এসআই দুই হাজার টাকা দিয়ে মৌখিক অনুমতি নিয়ে এক বেলার জন্য বাইরে যান। কিন্তু এর পর তাদের তিন দিন অনুপস্থিত দেখিয়ে কোর্স থেকে বাদ দিয়ে বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা দাবি করেন, এক বেলা রোলকলে অনুপস্থিত থাকলে একদিন অতিরিক্ত ড্রিল বা একদিন ডিটেনশনের বিধান রয়েছে। কিন্তু সেটি না করে কর্তৃপক্ষ ১১ মাস প্রশিক্ষণের পর তাদের বাদ দিয়ে দিয়েছে। তারা বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনার জন্য আইজিপির কাছে আবেদন জানান।
পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠির সঙ্গে মর্নিং রিপোর্টের মিল না থাকা প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পিটিসির কমান্ড্যান্ট ডিআইজি ময়নুল ইসলাম বলেন, মর্নিং রিপোর্টে কোনো ভুল নেই। এই রিপোর্ট দাপ্তরিকভাবে যায়। পরে ইনকোয়ারি রিপোর্ট যায়। এই দুই রিপোর্টের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। বিষয়টি জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের ট্রেনিং শাখায় যোগাযোগ করেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy