পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে ভাইয়া বাহিনীর প্রধান মশিউর রহমান শিমু মীরকে আসন্ন টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ ইং এ ফের নৌকার মাঝি করায় উপজেলা ও তৃনমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে ত্যাগী নেতাদের নৌকার মাঝি করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বরাবর একাধিক লিখিত আবেদন জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ- সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস,এম রাকিবুল আহসান, টিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি খালেক হাওলাদার। পৃথক পৃথক লিখিত আবেদনে তারা জানিয়েছেন যে, মশিউর রহমান শিমু মীর ২০১৬ সালে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে এলাকায় গড়ে তোলে বিশাল এক ভাইয়া বাহিনী। শুরু থেকেই এই ভাইয়া বাহিনীর কাজ ছিলো সাধারন মানুষের উপর নির্যাতন, চাঁদাবাজী, ভূমি দখল, অটো রিক্সা থেকে চাঁদা আদায় করা। এমনকি ভাইয়া বাহিনীর নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা।
এরআগে উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে আসন্ন নির্বাচনে নৌকার জন্য তৃনমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো তিনজনের নামের তালিকায় ১’ম ছিল শিমু মীরের নাম।
এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন তৃনমূল ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা।
উল্লেখ্য, বীরমুক্তিযোদ্ধাকে মারধর ও স্ত্রীর করা যৌতুক মামলায় জেল খাটা আসামি, চেয়ারম্যান থেকে বরখাস্থ হয়ে বেশ আলোচিত সমালোচিত হয়েছিলো টিয়াখালীর আতংক সন্ত্রাসী ভাইয়া বাহিনীর প্রধান মশিউর রহমান শিমু মীর
গত ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব সুলতান মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শিমুকে কলাপাড়া পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর বিকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহ আলম এর ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ ব্রিকসে গিয়ে ভাইয়া বাহিনীর প্রধান শিমু মিরাসহ ৮/৯ জন সন্ত্রাসী দশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলেন ভাইয়া বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। শাহ আলম ডাক চিৎকার দিলে শিমু মিরাসহ তার বাহিনীর লোকজন পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন শাহ আলমকে উদ্ধার করে মুমুর্ষ অবস্থায় আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় ঐদিন রাতেই মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের স্ত্রী বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। যার মামলা নং ৩৯০। এ মামলায় চেয়ারম্যান শিমু মিরা ১৭ দিন জেল হাজতে ছিলেন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেন।
লিখিত আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর মশিউর রহমান শিমুর বিরুদ্ধে তার ৪র্থ স্ত্রী ফাতেমা আক্তার একটি যৌতুক মামলা দায়ের করেন। যার সিআর মামলা নং-৮৪। পরে এ মামলায় শিমুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
২০২১ সালের জুনে চাদার টাকা নিয়ে চাকামাইয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান গাজীকে কুপিয়ে পঙ্গু করে এ ভাইয়া বাহিনী। এছাড়াও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বাসার সামনে হামলা, ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং ককটেল বিস্ফোরন ঘটায় শিমুর নেতৃত্বে ভাইয়া বাহিনী।
এব্যপারে মশিউর রহমান শিমু মীর জানান, আমি যুবলীগ করি আওয়ামীলীগ আমাকে বহিঃস্কার করে কিভাবে? যুবলীগতো আমাকে বহিঃস্কার করেনি। আর আমি যদি চাঁদাবাজি করতাম তাহলে তৃনমূলে আমি প্রথম হলাম কিভাবে? এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। আমার স্ত্রী চাকামইয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিল সেজন্য সেখানকার বর্তমান চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করেছে বলে জানান।