কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের উত্তর চাঁদের খামার গ্রামের দিনমজুর বাবা কানু রাম এর ছেলে ফুলকুমার।জীবনের সাথে প্রতি নিয়ত যুদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়েছিল সে।ছোট বেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার।বাবার অভাবি সংসার হলেও পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছে ও প্রচেষ্টায় এবারে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থানও পেয়েছে। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর স্বপ্নে বাঁধ সাধে টাকা।অর্থের অভাবে ভর্তি হতে না পেরে ফুলকুমারের স্বপ্নের ফুল অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে ভর্তির টাকার জন্য ঘুরতে হচ্ছে মানুষের দ্বারে দ্বারে।
জানা যায়,দিন মজুর বাবার ছেলে ফুলকুমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়ার সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না।এইচ এসসি পাশ করার পর টাকার অভাবে বাহিরে কোন কোচিং এ ভর্তি হতে পারেনি। করোনা কালীন সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় কয়েকজন ছাত্র ফুলকুমারকে বিশ্ববিদ্যালয় এর কোচিং এর ব্যবস্থা করেছিল।এছাড়াও অর্থের সংকট ও তার পড়াশুনার অতি আগ্রহ দেখে কোচিং কর্তৃপক্ষ ঢাকা, রাজশাহী ও গুচ্ছবিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করেছিল। ফুলকুমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক অনুষদে ১৩৪ তম স্কোর করে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছে।গুচ্ছবিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। এবং সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৮ ডিসেম্বর সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছে।কিন্তু টাকার অভাবে কিভাবে ঢাকা যাবে এবং ভর্তি হবে এখনও জানে না ফুলকুমার। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভর্তির টাকার জন্য। জীবনের এ অবস্থায় এসে মনে হয় থেমে যাবে সে।দিনমজুর বাবার কোন ভাবেই সন্তানের খরচ চালানের সাধ্য নেই। শুধু মাত্র তিন হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছে। নতুবা তাদের শেষ সম্বল ১০ শতক জমি বিক্রি করতে হবে। সেটিও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।অথচ ৩ দিন পরেই লাগবে ভর্তির টাকা।
ছাত্র ফুলকুমার বলেন, ছোটবেলা থেকে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছি।পরনের যে শার্ট প্যান্ট এগুলোয় মানুষের দেয়া।স্বপ্ন দেখতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো।সৃষ্টিকর্তা সেই স্বপ্ন পুরণে সহায়ক হয়েছেন কিন্তু অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছি না এটা আমাকে বড়ই পীড়া দিচ্ছে।কেউ যদি আমার পাশে দাঁড়াতো কিংবা একটা বৃত্তির ব্যবস্থা করতো।তাহলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটা পার্ট টাইম কাজ জোগাড় করে পড়াশুনাটা চালিয়ে নিতে পারতাম।
ফুলকুমার এর বাবা কানু রাম জানান, ছোট বেলা থেকে পড়াশুনার প্রতি ওর খুবই আগ্রহ।কিন্ত টাকার অভাবে কিছুই দিতে পারিনি। নিজ মেধাগুণে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। আমি দিন মজুরী করে সংসার চালাই। ফসলি জমি বন্ধক রেখে ৯ হাজার টাকা দিয়ে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছি বাকী টাকা ওকে দিয়েছি। টাকার অভাবে এখন স্ত্রীর চিকিৎসাও বন্ধ। আমি নিরুপায় কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।কোন সহৃদয়বান ব্যাক্তি যদি এই দুঃসময়ে ছেলেটার পাশে দাঁড়াতো তাহলে ছেলেটির অন্তত পড়াশুনাটা বন্ধ হতো না। অসহায় বাবা হয়ে সবাই কে অনুরোধ জানাচ্ছি আমার ফুলকুমারের পাশে এগিয়ে আসুন।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..