রাজু মন্ডলঃ
টানা কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে তাহিরপুর উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় শতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গত ৫ দিন ধরে তাহিরপুর সদর থেকে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
অপরদিকে তাহিরপুর সীমান্তের বিরেন্দ্র নগর থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত সীমান্ত সড়ক পাহাড়ী ছড়ার ঢলে একাধিক স্থানে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পাহাড়ী ছড়ার ব্যাপক ঢলে জঙ্গলবাড়ী, কলাগাঁও, চারাগাঁও, লাকমা, বাশতলা, রজনী লাইন, চানপুর, লামাকাটা সহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ী ছড়ার তীরবর্তী ঘরবাড়ী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উপজেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে দুর্গতদের জন্য ৩১ টি বন্যাশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই বন্যায় আক্রা লোকজন বন্যাশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল ও ধান নিয়ে পড়ছেন মহা বিপাকে।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উজান তাহিরপুর, ভাটি তাহিরপুর, রতনশ্রী, শাহাগঞ্জ, সুলেমানপুর, শিলানি তাহিরপুর, মন্দিয়াতা, নয়াবন্দ, তরং, শ্রীপুর, মুজরাই, বালিয়াঘাট, ডা¤েপর বাজার,বড়ছড়া, টেকেরঘাট, লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও, কলাগাঁও, বাগলী, বীরেন্দ্রনগর, দুধের আউটা, তেলীগাঁও, বিন্নাকুলী, লামাশ্রম, মোদেরগাঁও, কামালপুর, রহমতপুর, গাঘড়া, গড়কাটি, পাঠানপাড়া, কোনাটছড়া, দিঘিরপাড়, সোহালা, ইয়বপুর, নুরপুর, মল্লিকপুর, ননাই, ভোলাখালী, ভাদলারপাড়, সোনাপুর, কুকুরকান্দি, ধরুন, ইউনুছপুর, কাঞ্চনপুর, ইসলামপুর, পাতারগাঁও, দক্ষিণক‚ল, মাহতাবপুর, পিরিজপুর, নয়াহাঠ, আনোয়ারপুর, বালিজুরী, পাতারি, তিওরজালাল, বারুঙ্কা, চিকসা, জয়নগর সহ প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ সব এলাকার গ্রামীন রাস্তা ঘাট, ব্রীজ, কার্লভাট ক্ষতিগ্রস হয়ে উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পড়েছে। গত ৪ দিন বিদ্যুৎ ছিল না এসব এলাকায়।স্থানীয় গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি বা উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার বা কোন খাদ্য সামগ্রী কেউ পাননি। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে তারা কিছু কিছু গ্রামে শুকনো খাবার বিতরণ করছেন।
স্থানীয় ইউপি ওয়ার্ড সদস্য হাসান মিয়া জানান, এসব এলাকার গ্রাম, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও বাজারে পানি প্রবেশ করায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ ভোগ করছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানান, ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে গত ৭২ ঘণ্টায় ৯০২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি এবং এর আগের ৭২ ঘণ্টায় ২৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
এ কারণে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা ৭.৮ অতিক্রম করে ৮.২৬
সেন্টিমিটার এবং পাহাড়ী নদী যাদুকাটার পানি বিপদ সীমা ৮.৫ অতিক্রম করে ৮.৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি ভাল রয়েছে, নদী ও হাওরের পানি কমতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy