তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন মানুষের শেষ সম্বল টুকু!
রেখা মনি,নিজস্ব প্রতিবেদক:
Facebook Twitter share
অবশেষে তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকার পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদটি।
বৃষ্টির পানি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে মসজিদের পুরো অংশ এখন নদী গর্ভে।
Surjodoy.com
তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে এখন পর্যন্ত বজরা ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী শত শত বসতবাড়ি। এতে দিশেহারা স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিরা।
মঙ্গলবার (১ জুন) রাত পর্যন্ত মসজিদটির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে গেলেও বুধবার (২ জুন) সকালে তীব্র ভাঙনের মুখে অবশিষ্ট অংশটুকুও স্থানীয়রা সরিয়ে নিলে মসজিদটির ভিত্তি নদী গর্ভে বিলীন হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকার নদী তীরবর্তী প্রায় ৬০-৬৫টি পরিবার ভাঙনের মুখে পড়ে তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেন।
The Daily surjodoy
ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে পড়ে ওই এলাকার পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসা, পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম বজরা এলাকার পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদ।
এতে কয়েক দিনের অব্যাহত ভাঙনে গতকাল রাত পর্যন্ত পশ্চিম বজরা এলাকার পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদটির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে যায়।
বুধবার সকালে অবশিষ্ট অংশটুকু নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে সরিয়ে নেন এলাকাবাসী। পরে ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় মসজিদটির ভিত্তি।
The Daily surjodoy
এছাড়াও পশ্চিম বজরা এলাকার প্রায় ২৫-৩০ বিঘা জমির বাদাম, তোশা পাট, মরিচ ক্ষেত, সবজি ক্ষেত সহ অন্যান্য ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনের কবলে পড়ে ওই ইউনিয়নের চর বজরা এলাকার কাশিমবাজারগামী রাস্তাটির শেষ প্রান্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এবং অব্যাহত ভাঙনে হরিপুর ইউনিয়ন ভেঙে খামার বজরা এলাকায় পানি প্রবেশ করায় চর বজরা পূর্ব পাড়া গ্রামের পুরো এলাকাটাই ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বজরা জামে মসজিদ ও ওই এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক সাম্প্রতিক নির্মিত পাকা সড়কটি।
The Daily surjodoy
সড়কটি রক্ষার্থে যদি এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে সড়কটি ভেঙে বজরা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং খামার বজরা হয়ে পানি যদি পূর্ব বজরা, কালপানি বজরা এবং বজরা পূর্ব পাড়া এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে ইউনিয়নের সমস্ত বাড়িঘর, ফসলি জমি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ পুরো ইউনিয়নটি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়বে।
স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের শত শত বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে থাকায় তারা আতঙ্কে রয়েছেন।
নদী তীরবর্তী অনেকেই বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকের শেষ সম্বলটুকুও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় তারা রয়েছেন বিপাকে। অসংখ্য ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে করে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
The Daily surjodoy
একদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্ক অন্যদিকে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনের মুখে দিশেহারা এ ইউনিয়নের মানুষ। অব্যাহত ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে হুমকির মুখে পড়বে পুরো ইউনিয়ন।
বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন জানান, এখন পর্যন্ত ইউনিয়নের পনেরটি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনের মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী শত শত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবরস্থান সহ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন রক্ষার্থে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে পুরো ইউনিয়ন ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি।’
The Daily surjodoy
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ‘আমি ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, দু-তিন দিনের মধ্যে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে।
ভাঙনের কবলে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক আমাকে দেয়া হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।
Leave a Reply