রেখা মনি,নিজস্ব প্রতিবেদক
লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশন সর্ববৃহৎ আয়তনের একটি রেল সেতু। সেতুটি তিস্তা রেল সেতু নামে পরিচিত।নাট বল্টু দিয়ে নির্মিত তিস্তা রেল সেতু টির মেয়াদ উত্তীর্ণ ৭৮ বছর পেরিয়ে গেলেও দাপটের সাথে ভার বহন করে চলছে।
রেল সেতুতে ট্রেন উঠলেই পুরো সেতু কেঁপে উঠল আজও লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম রংপুর সহ সারা দেশের রেল যোগাযোগ অক্ষুন্ন রয়েছে।তবে এখনো আগের মতো সক্ষম সেতুটির উপর দিয়ে প্রতিদিন ১৮টি ট্রেন চলাচল করছেন বলে খোদ রেলওয়ে বিভাগ দাবি করছেন ।
জানা গেছে ১৮৩৪ সালে ব্রিটিশ সরকারের আমলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের মৌজার তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেল সেতু।যার ২ হাজার ১১০ফুট (৬৪৩ )মিটার দীর্ঘ তৎকালীন বৃটিশ সরকারের প্রতিষ্ঠান নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে তিস্তা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ করে। ফিশপ্লেট নাট বল্টু দিয়ে নির্মিত সেতুটির স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর।
বর্তমানে তিস্তা রেল সেতুর বয়স ১৭৮ বছর। স্থায়িত্ব কালের চেয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ ৭৮ বছর বেশি। শুরুর দিকেতিস্তা রেল সেতু কেবল লালমনিরহাট ,কুড়িগ্রাম রংপুর সহ সারা দেশের সাথে রেল যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হতো।
১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বোমা মেরে সেতুর একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত করেন। তৎকালীন রেল কর্তৃপক্ষ সেতুটি সংস্কার করার পর ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়।
তার সাথে যুক্ত হয় ১৯৭৭সালে রেলওয়ে ও সহজ বিভাগ যৌথভাবে তিস্তা রেল সেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০ টি স্টিলের তাই প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করেন। সেই সাথে ছোট-বড় বাস ও ট্রাকসহ সড়ক যোগাযোগ চালু করা হয়।
ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছিলেন স্থানীয়রা। তার ওপর আবার মেয়াদ উত্তীর্ণ ৭৮বছর হলেও জোড়াতালি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন।
এমন আশংকা থেকে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা রেল সেতুর পূর্ব পাশে নতুন করে তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেন।যার কাজ শেষ হয় ২০১২সালে তখন থেকে বাস ও ট্রাক সহ অন্যান্য যানবাহন তিস্তা সড়ক সেতু দিয়ে চলাচল করছে।
তারপর স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নেয় রেলসেতু টি।সেই থেকে রেলসেতু টি লালমনিরহাট ,কুড়িগ্রামের রেল সংযোগকারী হিসেবে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে ১৮ টি ট্রেন। বর্তমানে সেই তিস্তা রেল সেতুর কিছু কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
চুরি হয়ে গেছে ক্লিপ, মরিচা ধরেছে সেতুর দুই সারির জোড়ার ব্যবহৃত ফিস প্লেট এর নাট বল্টুতে। তবে নির্মাণের ১৭৮ বছর পরেও সেতুটি ততটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়নি বলে দাবি করছে ,বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ।
ওই এলাকার কলেজ ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, প্রেমে যোগাযোগের উত্তর অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা তিস্তা রেল সেতু। সেটিও বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে। তিস্তা রেল সেতু টি যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।
তিস্তা পাড়ের শামসুদ্দিন বলেন, প্রতিদিন অনেক ট্রেন চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। অথচ এটির কোন গুরুত্ব নেই প্রশাসনের।
আমার জন্মের আগের সেতুটি কি আর এভাবেই থাকবে?অবশ্য রেলমন্ত্রী নজরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি সময়ে বলেছেন ,ঝুঁকিপূর্ণ লালমনিরহাট রেল সেতুর পাশে আরো একটু সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সেতুটির উত্তর পাশে লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম ও দক্ষিণ পাশে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা অবস্থিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জানান, তিস্তা রেল সেতু টি মেয়াদ শেষ হলেও এটি আরো একশত বছর চালানো সম্ভব।
এটি কখনো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। প্রতিবছরের সেতুটির সংস্কার কাজ করা হয়। বর্তমানে এ সেতু দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, তিস্তা রেল সেতুর মেয়াদ শেষ হলেও ট্রেন চলাচলে কোন সমস্যা হচ্ছে না।তবে সেতুর কিছু স্থানে নাট বল্টুও প্লিপার চুরি হয়ে যাচ্ছে। এটি ট্রেন চলাচলে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিস্তা রেল সেতু রক্ষনাবেক্ষনের জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।