দর্জি মনিরের ফটোশপ তেলেসমাতি
তৌহিদ আহমেদ রেজা,
দর্জি মনিরের ফটোশপ তেলেসমাতি
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ না হতেই এবার আলোচনায় এসেছেন মো. মনির খান ওরফে দর্জি মনির। যিনি ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলটির অনেক নেতার সঙ্গেই তার ছবি রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে- ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে তার সব ছবিই ফটোশপে কারসাজি করা। তিনি ভুঁইফোড় সংগঠনটি খুলে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে টাকার বিনিময়ে পদ দিয়েছেন।
এছাড়া জমির দালালি এবং তদবির-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এখন চাইছেন কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মনির খান প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবি কারসাজি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) শাখার যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ রোববার রাতে বলেন, ‘মনির খান প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির ছবির সঙ্গে নিজের ছবি জুড়ে দিয়েছেন। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে এসব ছবি ব্যবহার করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
ফেসবুক আইডিতে মনির খানের পরিচয় অংশে লেখা আছে, ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য হন।
এছাড়া তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলার রূপসী গার্মেন্টস লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ‘বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন’ নামে একটি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টাও মনির খান।
মনির খানের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ১০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে তার। প্রোফাইল ছবিতে মুজিব কোট ও চাদর পরা একটি ছবি রেখেছেন মনির। ওই চাদরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা এবং সেই নৌকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সম্বলিত একটি ব্যাচ রয়েছে। মনির খানের কাভার ফটোতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একটি ছবি আছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও কিছু ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গেও ছবি শেয়ার করেছেন তিনি।
এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে তার ওঠা-বসার ছবি দেখা যায় ফেসবুকে। ছবিগুলো ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায়, খুব সূক্ষ্মভাবে সম্পাদনার মধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ছবির জায়গায় নিজের ছবি বসিয়ে সেগুলো প্রচার করছেন মনির খান। ফটোশপে কারসাজি করা এসব ছবির বেশির ভাগই তার চেহারা অন্যদের তুলনায় বড় দেখাচ্ছে।
চাকরিজীবী লীগ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গত ২৯ জুলাই রাতে গ্রেফতারের পরপরই আলোচনা শুরু হয় এই মনির খানকে নিয়ে।
ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ইয়াসির আরাফত রুবেল ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফটো এডিট করে শেখ হাসিনা পরিষদ নামে নামে ভুঁইফোড় সংঘঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনির খান ওরফে দর্জি মনিরকে কেন এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না, মাননীয়রা কী উত্তর দিবেন?’
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গোলাম ইরতেজা মনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে মনির খানের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশের চেয়ারে বসা এই ভদ্রলোক কী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার?’
মনির গ্লোবাল ৪১ ইঞ্জিনিরিং অ্যান্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড, পোশাক মেলা ফ্যাশন হাউস প্রাইভেট লিমিটেড এবং অটিজম বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফেসবুকে তিনি তার প্রায় সব পোস্টেই নিজেকে বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তিকারী তারেক জিয়ার মামলার বাদী দাবি করেছেন।
মনির খান তার ফেসবুকে লিখেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘এমপি পদপ্রার্থী ঢাকা-২ আসন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy