শহিদুল ইসলাম সোহেলঃ
টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া(১৫) হত্যার রহস্য ১০ ঘন্টার মধ্যেই উন্মোচন করেছে র্যাব-১২।
২৭ অক্টোবর সকাল ৯ টায় কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গায় সুমাইয়া আক্তার(১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভিকটিমের মায়ের সাথে কথা বলে জানা যায়,সকাল ৭টার সময় প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয় সুমাইয়া। এরপর সকাল ন'টায় নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলার সিরির নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।এঘটনায় টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর ঘটনাস্থলে র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার,লে কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত হয়ে হত্যার প্রকৃত কারন খুজে বের করার চেষ্টা শুরু করেন।
ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে বিশ্লেষণ করে তদন্ত এগিয়ে যেতে থাকে।ভিকটিমের পরিবার,বন্ধুবান্ধব,প্রতিবেশী ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের সাথে কথা বলে প্রথমে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।র্যাবের টীম দীর্ঘসময় তদন্ত করে জানতে পারে মনির নামে এক বখাটে ছেলের সাথে ভিকটিমের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।এই তথ্যের সূত্র ধরে র্যাবের তদন্ত টীম ছেলেটির পরিচয় বের করে এবং ভিকটিমের হত্যার সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কি না অনুসন্ধান করতে থাকে।মনিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জিজ্ঞাসা বাদে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে হত্যাকান্ডের রহস্য। মনিরের বন্ধুদের মোবাইল থেকে প্রাপ্ত কিছু ছবি ও ভিডিও এর সূত্রধরে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যের সন্নিবেশ ঘটিয়ে হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হয়।
জানা যায়,সুমাইয়ার সাথে ট্রাকের হেলপার মনিরের দীর্ঘ ২ বছর যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিল।মনির ছিলো অত্যন্ত বদমেজাজি এবং নেশাগ্রস্ত।সে ভিকটিমের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিত এবং শারীরিক নির্যাতন করত।ধীরে ধীরে ভিকটিম সুমাইয়া তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্য এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় ২ মাস পূর্বে।এতে মনির অত্যন্ত রাগান্বিত হয়।ঘটনার ৫/৭ দিন পূর্বে ভিকটিম সুমাইয়াকে মনির রাস্তায় পেয়ে মারপিট করে এতে সুমাইয়ার কান দিয়ে রক্ত চলে আসে এবং চিকিৎসাও করাতে হয়।এই চড় থাপ্পড় মারার দৃশ্য মনির ভিডিও করে রেখে বন্ধুদের দেখায়।
গত ২৬ অক্টোবর ২০২১ রাত ১০টায় মনির তার ঘনিষ্ঠ ৫/৬ জন বন্ধুদের নিয়ে এলেঙ্গা সামসুল হক কলেজে মিটিং করে এবং সুমাইয়া ও তার নতুন প্রেমিককের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে।এসময় মনির পাগলের মত আচরণ করতে থাকে এবং ২০/৩০ মিনিট পর সবাই যার যার বাড়ী চলে যায়।
ভিডিও বিশ্লেষন করে দেখা যায়,ট্রাক হেলপার মনির একটি সুইচ গিয়ার সংগ্রহ করে এবং লাইকির জন্য ভিডিও তৈরি করে।বিভিন্ন স্টাইলে মনির ঐ সুইচ গিয়ার চাকুর ব্যবহার করার ভিডিও করে,যা মনিরের বন্ধুদের কাছ থেকে র্যাব উদ্ধার করে।এই সুইচ গিয়ারের সূত্র ধরেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়।ঘটনাস্থল থেকেও একই ধরনের রক্তাক্ত সুইচ গিয়ার পুলিশ জব্দ করেছে। এভাবে ছায়া তদন্তে স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া(১৫) হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ট্রাক হেলপার মাদকাসক্ত মনিরকে সনাক্ত করে।মনিরের বর্তমান অবস্থান খোজ নিয়ে জানা যায়,আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টার সময় এলেঙ্গা হতে গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।সেখান থেকে র্যাব-১২ অপারেশন টীম সন্ধ্যা ৭টায় মনিরকে আটক করেছে।
ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে র্যাব নিশ্চত হয়, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই সুমাইয়াকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে মনির।মনিরকে পুলিশের হেফাজতে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy