সেলিম সম্রাট, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
২০১৬ সালে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর দিনবদলের হাওয়ায় দহগ্রামে উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করার কথা থাকলেও । লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে কেবল কামাল হোসেন প্রধানের দিনবদল হয়েছে।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই কামাল হোসেন স্বজন-পরিজন সহ সহযোগীরা শুরু করেন গরুর স্লিপ বানিজ্য, চোরাচালান এবং মাদক বাণিজ্য থেকে শুরু করে সর্বত্র লুটপাটের মচ্ছবে মেতে ওঠেন । কামাল গ্রুপ নামে সিন্ডিকেট বানিয়ে দহগ্রামকে রীতিমতো ‘কামাল সাম্রাজ্যে’ পরিণত করেন তিনি। এই সাম্রাজ্যে তার বিরুদ্ধে কারও টু শব্দ করার জোর নেই। সর্বত্র খবরদারি ও জুলুমবাজির কারণে এলাকায় কামাল হোসেনের জনপ্রিয়তা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে।
দহগ্রাম ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যান সাধারণ মানুষের অনাস্থা কুড়ানোর পাশাপাশি দহগ্রাম ইউনিয়নের আওয়ামী লীগকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে কামাল হোসেন আবার চেয়ারম্যান হলে , গরুর স্লিপ বানিজ্য, চোরাচালান এবং মাদক বানিজ্যে জেলার শীর্ষ স্থানে থাকবে দহগ্রাম ইউনিয়ন এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রবীণ নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ আর হতাশার সুরে বলেন, কামাল হোসেন দহগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হিসেবে দহগ্রামের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ জনগনের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু তিনি এখন টাকা আর অঢেল সম্পদ গড়ায় ব্যস্ত।
তাই আন্দোলন-সংগ্রামের সাথী, ত্যাগী নেতা কর্মীদের তিনি নানা কূটকৌশলে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। কেউ তার বিরাগভাজন হলে তাদের দুর্দশার সীমা থাকে না। মস্তান পাঠিয়ে হামলা, সহযোগীদের দিয়ে একের পর এক মামলা, পুলিশ পাঠিয়ে যাকে তাকে গ্রেফতার করানো কামাল হোসেনের কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দহগ্রামের সহিরুল ইসলাম বলেন দহগ্রাম স্বাধীন হলেও আমরা স্বাধীন নই ।
আমরা সাধারন জনগন কখনো ইচ্ছে করলেই গরু বিক্রি করতে পারিনা , চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট করে সেটি নিয়ন্ত্রন করেন । গরু প্রতি বিশহাজার টাকা না দিলে দহগ্রামেই কম দামে আমাদের গরু বিক্রি করতে হয় । দহগ্রামের এস ইসলাম ( ছদ্দনাম) নামের এক ব্যক্তি জানান, কামাল হোসেন প্রধান দহগ্রাম চোরাকারবারি সিন্ডিকেট এর একমাত্র হোতা ।
চেয়ারম্যান এর আড়ালে তিনিই মুলত ভারত-বাংলাদেশ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন বছরের পর বছর। যা থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার পাহাড় বানিয়েছেন তিনি । তার আংশিক টাকা দিয়ে তিনি পাটগ্রাম পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে উপজেলার সব থেকে বিলাসবহুল প্রাসাদ ২০ টি ইউনিট নিয়ে কামাল টাওয়ার নির্মাণ করেছেন ।
যার নির্মাণ করতে ব্যায় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি র ও বেশি টাকা। এছাড়া জমির মুল্য সহ প্রায় ১০ কোটি টাকা। শুধু কামাল টাওয়ারেই না রংপুর জাহাজ কোম্পানির মোড় এলাকায় কিনেছেন ১৬ শতাংশ জমি বাড়ি সহ আরো অনেক কিছু। রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার শত গল্পকেও হার মানিয়েছে কামাল চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে এসব বিলাসবহুল প্রাসাদ রংপুর শহরে জমি কিছুই ছিল না তার ,নেই কোন ব্যবসা বানিজ্য শুধু মাত্র গরুর স্লিপ বানিজ্য ও চোরাকারবারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ থেকেই আজ তিনি শত কোটি টাকার মালিক। স্থানীয় দেরাজ আলি জানান , পাটগ্রামে চেয়ারম্যান কোটি টাকা দিয়ে বাড়ী করলেও গ্রামের কোন জমি বিক্রির কথা আমরা কখনই শুনিনি ।
চেয়ারম্যান নিবাচিত হওয়ার পর তিনি যেন হাতে পেয়েছেন আলাদিনের চেরাক । প্রশাসন ও দুদক কে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে দিব্বি অবৈধ ভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা গরু চোরাচালান নিয়ন্ত্রন করেন চেয়াম্যান কামাল । ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ওয়াডেই রয়েছে তার সিন্ডিকেট । গরু ব্যবসায়িদের কাছ থেকে প্রতিহাটে স্লিপ বাণিজ্য করেই আয় করেন গড়ে ৩ লাখ টাকা ।
গরুর স্লিপ বানিজ্য, চোরাচালান ব্যবসা চালিয়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন কে করেছে চোরাকারবারি রাজ্য , আর হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এই ভারত বাংলাদেশের চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের গতিশীলতা ধরে রাখতে আবারো চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চান তিনি ।
দহগ্রামের সাধারন এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায় , কোটি কোটি টাকা দিয়েও এবার নৌকার প্রতিক পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, কামাল হোসেন সবাইকে কৌশলে ম্যানেজ করে ফেলে টাকার জোরে আবার স্থানীয় কেউ তার বেপারে মুখ খুললে নানান ভাবে নির্যাতন করে,কখনো কখনো চোরাকারবারি মামলায় ফাসিয়ে দেয় , যারা মুখ খুলে এমন কি হত্যা করার ও হুমকি দেয়।
এই মুহূর্তে এই চোরাকারবারির হোতা কামাল হোসেন চেয়ারম্যান এর লাগাম টেনে না ধরলে আগামী তে টেকনাফ কেও হার মানিয়ে চোরাকারবারিদের ভয়ংকর সিন্ডিকেটে পরিণত হবে দহগ্রাম ইউনিয়ন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সকল অভিয়ক অস্বীকার করে বলেন, গরুর স্লিপের সিরিয়াল মেইনটেইন করতে সমস্যা হয় ।
তাই এক দুই হাট স্লীপের জন্য অপেক্ষা করতে হয় । আর আমি কোন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনকরিনা ,আমি কোন মাদক ও চোরাচালানের সাথে কখনই জড়িত ছিলাম না এখনও নাই। পাটগ্রামের বাসা করতে আমি একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে আমি লোণ নিয়েছি । সাথে গ্রামের কিছু পতিত জমিও বিক্রি করেছি । সামনে নির্বাচন এইজন্য একটি পক্ষ বরাবরের মত এবার ও আমাকে নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে ।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..