প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ৩:৩৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৮, ২০২১, ১১:৩২ এ.এম
নিরেন দাস,জয়পুরহাটঃ-
সন্ত্রাস, মাদক, জুয়ার মত চক্রবৃদ্ধিহার সুদে দাদন ব্যবসায়ী কোন অংশে কম নয় তাই এ দাদন ব্যবসাকে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে সরকার আর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেদারে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা তাদের দাদন ব্যবসা।
এসব দাদান ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে অভিযানে নামা উচিৎ বলে মনে করেছেন সুশীল ও যুব সমাজসহ উপজেলার আপামর জনসাধারণ। জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় চক্রবৃদ্ধি সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে ফলে সুদের টাকার গরমে তারা যা ইচ্ছে তাই করছেন তারা।
সামান্য পুঁজি নিয়ে দাদন ব্যবসা শুরু করে আজ অনেকেই কোটিপতি বনে গেছেন। অনেকেই আবার এদের খপ্পরে পড়ে ব্যবসাবাণিজ্য, ভিটেমাটি ও সয়সম্বল সব হাড়িয়ে দেশান্তরিও হয়ে গেছেন।
দেশের উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সুদ, ঘুষ আর দুর্নীতি।এনজিও, ব্যাংক, বীমার বাৎসরিক সুদের হাড় ১৫-২০% টাকা। যথা সময়ে এই সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়েছে এটা নিশ্চয়ই কারই অজানা নোই। এনজিও, ব্যাংক, বীমার সুদের চাইতে বর্তমানে শতগুণ উপরেই রয়েছে দাদন ব্যবসা। এরা করোনাভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এ উপজেলায়। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা সমাজের কেহই এরা সমাজ, দেশ ও জাতীর জন্য চরম ভয়ংকর রুপ নিয়েছে।
প্রশাসনের চলমান সন্ত্রাস, মাদক ও জুয়ার মতো এখনই এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা না গেলে সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। বলে মনে করেন জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের আপামরসাধারণ। চক্রবৃদ্ধি সুদে দাদন ব্যবসা সমাজের জন্য ক্ষতিকর- সন্ত্রাস, মাদক জুয়ার মতো এরাও কোন অংশে কম নয়। একদিকে এরা বিপদে পড়া অভাবগ্রস্ত অসহায় মানুষের রক্ত তিলে তিলে চুষে খাচ্ছে।
অপর দিকে এরা মহান আল্লাহ তায়ালার আইন সুদ খাওয়া হারাম সে আইনও না মেনে টাকার নেশায় সাথে যুদ্ধ করছেন তারা। তাদের গোপন ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যায় স্থানীয় কিছু ক্ষমতাধর প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিপদে আর জনপ্রতিনিধির নির্বাচনে দাদন ব্যবসায়ীরা সবচাইতে বেশি টাকা ডোনেট করে থাকেন। ফলে সমাজে এদেরই ক্ষমতায় সবচাইতে বেশি।আবার ঐসব নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিরা সুদের টাকা আদায়ে অসহায় মানুষদের ধরে এনে বিচার শালিস করে সুদের টাকা আদায় করে থাকেন।
এদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠিন কোন ঝামেলা না থাকায় এই দাদান ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে জেলার স্বর্ন ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী সাধারণ ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী, ডিলার ব্যবসায়ী,কাউন্সিলর,ইউপি সদস্য, চাকরীজীবি,সাংবাদিক,রাজনীতিবিদ,বাজার সমিতি ও বিভিন্ন শ্রেনীপেশার নারী পুরুষ,নামধারী কথিত কয়েকজন সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার লোক এই দাদন ব্যবসায় জড়িত রয়েছে।
এদের মধ্যে এ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য দাদন ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন অসংখ্য দাদন ব্যবসায়ীরা তারা আবারো করোনাভাইরাস কালিন সময়ে মাথা চারা দিয়ে উঠেছেন। জাতীয় দৈনিক সূর্যোদয় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও আক্কেলপুর উপজেলা প্রেসক্লাব এর সাধারন সম্পাদক ২০১৯ সালে এসব দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বগুড়া থেকে আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ প্রকাশ করলে তৎকালিক সময়ে আক্কেলপুর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম এসব দাদন ব্যবসায়ীদের গুডাউন গুলোতে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল জব্দ করাসহ দাদন ব্যবসা বন্ধ করতে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু করলে প্রশাসনের আতংকে ওইসব দাদন ব্যবসায়ী আত্মগোপন সহ দেশ ছেড়েও পালিয়ে গিয়েছিলেন।
ওই সালেই বদলী করা হয় ওসি সিরাজুল ইসলাম কে আর যোগদান করেন ওসি কিরণ কুমার রায়। তার যোগদানের পরে পলাতক দাদন ব্যবসায়ীরা দেশে আবারো প্রবেশ করে শুরু হয় সেসব দাদন ব্যবসায়ীদের জমজমাট দাদন ব্যবসা যাদের প্রতিমাসের মাসোয়ারায় টাকায় চলতো থানার বিভিন্ন সাজসজ্জা, যাহা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল ওইসব দাদন ব্যবসায়ীরা টাকা সুদের টাকার বিনিময়ে ছয় কে নয়, নয় কে ছয় বানিয়ে ফেলতেন তারা যা সংবাদ প্রকাশ করাই সাংবাদিককে জাড়ানো হয় মিথ্যা মামলায়।
এমনি অবস্থায় ওসির বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হলে প্রকাশিত সংবাদটি সত্যতা প্রমাণিত হলে কিছু দিনের মাথায় বর্তমানে বদলীরত তৎকালিন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির-পিপিএম ওসি কিরণ কুমার রায় কে দুর্নীতির অভিযোগ ক্লোজ করেন। পরে থানায় যোগদান করেন ওসি আবু ওবায়েদ তাকেও কয়েক মাসের মাথাায় ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগে আক্কেলপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়।এরপরেও বন্ধ হয়নি দাদন নামের রক্ত চোষা ব্যবসা।
অপরদিকে পুরো উপজেলা ঘুরে দেখা যায় তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না- রিক্সা ওয়ালা, দিনমকজুর, কৃষক, ছাত্র- শিক্ষক, চেয়ারম্যান, মেম্বার, ঠিকাদার, রাজনীতিবিদ, চাকরী জীবিসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা। দাদন ব্যবসা পরিচালনা করার সুবিধার্থে কিছু অসাধু নেতা, কর্মী আর জনপ্রতিনিধিকে ব্যহার করেন তারা। ফলে এরা অত্যন্ত ক্ষমতাধর আর প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেহই প্রতিবাদ করার সাহস পান না। অনেকেই আবার তাদের খপ্পরে পড়ে ব্যবসাবাণিজ্য, ভিটেমাটি ও সয়সম্বল সব হাড়িয়ে দেশান্তরি হয়ে গেছেন।
দাদন ব্যবসার ধরণও ভিন্নরুপ-চুক্তি ভিত্তিক, দিন কিস্তি, সাপ্তাহিক কিস্তি ও মাসিক কিস্তি। তবে মাসিক কিস্তির চাইতে চুক্তি ভিত্তিক আর দিনকিস্তিতে সুদের হাড় সর্বোচ্চ। চুক্তি ভিত্তিতে সকালে কেউ ১ লক্ষ টাকা নিলে বিকালে বা রাতে ১ লক্ষ ২/৩ হাজার টাকা দিতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে সুদের হাড় দ্বিগুণ দিতে হবে। দিনকিস্তিতে সর্বমোট মাসিক সুদের হাড় লাখে ৩০ হাজার থেকে ৬০ টাকা। মাসিক কিস্তিতে সুদের হাড় ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
চক্রবৃদ্ধি সুদে সাধারণ টাকা নেন, শিক্ষা, চাকরী, চিকিৎসা, পাওনাদার টাকা পরিশোধের টাকার জন্য বিপদে পড়ে অসহায় মানুষজন। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার ব্যাংকে ডিডি বা টিডি করার সময় ঘন্টা চুক্তিতে চক্রবৃদ্ধি সুদে টাকা নেন। ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মাসের শেষে টার্গেট পুরনে ব্যর্থ হলে মোটরসাইকেল বন্ধন রেখে চক্রবৃদ্ধি সুদে টাকা নিয়ে থাকেন। অনেকেই আবার দাদন ব্যবসায়ীর সুদের চাপে তাদের মোটরসাইকেল ও চাকরী ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে স্বর্ণ অফেরত যোগ্য। এই শর্তে স্বর্ণ জমা রাখেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। মাসিক ১৫-২০% সুদে স্বর্ণের বাজার মুল্যের ৫০% টাকা দাদনে দিয়ে থাকেন। দাদন ব্যবসায়ীরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক আর আধাসরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাক্ষরযুক্ত চেকবহি জমা রেখে মাসিক ১৫/২০ সুদে দাদনে টাকা দিয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে দাদন ব্যবসায়ীর যোগসাজশ থাকে। ফলে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করার অন্য কোন উপায় থাকেনা।
সাধারন ব্যবসায়ীদেরকে নন জুডিশিয়াল সাদা স্টাম্প, ফাকা চেকে সাক্ষর নিয়ে চক্রবৃদ্ধি সুদে দিন কিস্তিতে টাকা দেন দাদন ব্যবসায়ীরা। কোন ব্যবসায়ীর নিয়মিত সুদের টাকা দিতে না পারলে বা তার কাছে টাকা বেশিদিন পড়ে থাকলে তাকে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ দিতে হবে।
এতে যদি কেউ ব্যর্থ হন, তাহলে সাক্ষরযুক্ত সাদা স্টাম্প বলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন দাদন ব্যবসায়ী। সেইসব স্টাম্পে সাক্ষী হিসাবে সাক্ষর করে থাকেন দাদন ব্যবসায়ীদের পোষা গুন্ডা বাহিনার সদস্যরা।
অটো রিকশা, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর মালিকদেরকে গাড়ির মুল কাগজপত্র সাদা স্টাম্পে সাক্ষর নিয়েও ২০-৩০% সুদে নির্দিষ্ট। বিস্তারিত আরও আসছে।