রাসেল চৌধুরী
গরমে প্রাণ জুড়োতে ডাবের পানি। ডাব স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী। ডিহাইড্রেশনের মোকাবিলা থেকে শুরু করে শরীরের ইমিউনিটি গড়ে তোলা, নানা গুণ রয়েছে ডাবের পানির।
রিবোফ্লেবিন, নিয়াসিন, থায়ামিন এবং পেরিডক্সিন সমৃদ্ধ ডাবের পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে ডাব। এছাড়া এর অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যকটেরিয়াল উপাদান বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ থেকেও রক্ষা করতে সহায়তা করে। ওজন কমানোর জন্য ডাবের পানি দারুন কাজ করে থাকে।
ডাবের পানির উৎস হিসাবে আস্ত ডাব দেশের বেশীরভাগ জায়গায় বিক্রি করা হয়। হাসপাতাল গুলোর সামনে এর কদর অনেকটাই বেশী। রাস্তার পাশে বিক্রেতারা আস্ত ডাব বিক্রি করে। খদ্দেরের সামনেই দা দিয়ে ডাবের মুখটি কেটে টাটকা ডাবের পানি বিক্রি করা হয়। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ আছে। ১ কাপ ডাবের পানিতে যা খনিজ পদার্থ আছে, তা অনেক স্পোর্টস ড্রিংকের চাইতেও বেশি। একটি ডাবে একটি কলার চাইতে বেশি পটাশিয়াম থাকে।
শুধু অসুস্থতায় নয়, সুস্থ ব্যক্তিকেও ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ত্বক সুন্দর রাখার পাশাপাশি সুস্বাদু ডাবের পানিতে ক্লান্তি কাটানোর রসদও লুকানো আছে।
এতগুনে গুনানিত ডাবের চাহিদা আমাদের দেশে বছরজুড়ে থাকে। আবার ডাবের কদর বেশ বেড়ে যায় গরমের দিনগুলোতে।
বাংলাদেশে লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, নাটোর অঞ্চলে নারকেল বা ডাবের চাষ হয়। স্থানীয় ভাবে জানা যায়, দেশের মোট নারকেল উৎপাদনের বড় অংশই উৎপাদন হয় উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলায়। ১৪৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ডাব বা নারকেল গাছ।
শুধুমাত্র লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ ডাব যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ব্যবসায়ীর মতে, এই ডাবের বাজারমূল্য কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা।
গরমকালে সারা দেশেই ডাবের চাহিদা থাকে। আর বিপুল এই চাহিদার কারণে বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। ফলে বেশি দামে ডাব বিক্রি হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা গাছ শূন্য করে ফেলছেন। প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে ডাব চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে নারিকেল সংশ্লিষ্ট শিল্পে। সবুজ ডাব পরিপক্ক নারিকেলে পরিণত হওয়ার পর সেই নারিকেল থেকে পাঁচ ধরনের পণ্য তৈরি হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, গাছেই ডাব বিক্রি হয়ে যাওয়ার কারণে নারিকেলের উৎপাদন কমে গেছে। নারিকেল সংকট দেখা দিয়েছে নারিকেল তেল উৎপাদন শিল্পে। এর সঙ্গে ক্ষতির মুখে পড়েছে নারিকেলজাত পণ্য, যেমন- ছোবড়া শিল্প, মশার কয়েল ফ্যাক্টরি, কোকোডাস্ট এবং মালা শিল্প।
এরইমধ্যে লক্ষ্মীপুরসহ অন্যান্য অঞ্চলেও উল্লেখিত নারিকেল কেন্দ্রিক ৫টি শিল্পে ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে কোমল পানীয় হিসেবে অতীতে সব সময়ই কম বেশি ডাবের চাহিদা ছিল। কিন্ত করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশব্যাপী প্রচুর পরিমাণে ডাবের চাহিদা তৈরি হয়েছে। আর ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ায় নারিকেল হওয়ার আগেই চাষীরা গাছ শূন্য করে ফেলছেন ডাব বিক্রি করে। এতে নারিকেল উৎপাদন প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, আগে শুধু রাস্তার পাশে ডাবের দোকান দেখা যেত; এখন ফলের দোকান ও সুপার চেইন শপগুলোতেও ডাব পাওয়া যাচ্ছে।
ডাব ব্যবসায়ী লেয়াকত জানান, আগে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ হাজার ডাব বিক্রী করতেন। গত এক বছর যাবত প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার ডাব বিক্রি হয়ে যায়।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজারের নারিকেল চাষী রহমান জানান, বর্তমানে প্রতিটি নারিকেল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫টাকায়। কিন্তু প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়।
‘যেখানে একটি ডাব উৎপাদনে সময় লাগে মাত্র দেড় থেকে দুই মাস। সেখানে একটি নারিকেল উৎপাদনে সময় লাগে কমপক্ষে ৪ মাস। আবার দামও কম। তাই কৃষকরা এখন ডাবই বিক্রি করে দিচ্ছেন,’ বলেন তিনি।
ডাব ব্যবসায়ী মো. আবদুল কাদের জানান, তিনি প্রতিদিন ঢাকায় প্রায় ২০ হাজার ডাব পাঠান। জেলাব্যাপী তার মতো আরও প্রায় ২০ জন ডাব ব্যবসায়ী রয়েছেন।
ডাব ব্যবসায়ী মো: শিপন জানান, শুধু লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত দুই লাখ ডাব বিক্রি হচ্ছেওটা। যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ৭০-৮০ লাখ টাকা।
এদিকে, গত বছর লক্ষ্মীপুর থেকে ডাবই বিক্রি হয়েছে ৫শ কোটি টাকার বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তা আবুল হোসেন।