রেখা মনি,নিজস্ব প্রতিবেদক
দিনাজপুরে আবারও ‘সূর্যশিশির’ উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিলুপ্তপ্রায় পতঙ্গভুক এ উদ্ভিদটি দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ।
বাংলায় বলা হয় সূর্যশিশির (মাংসাশী উদ্ভিদ), যার বৈজ্ঞানিক নাম- Drosera Rotundifolia, Drosera Rotundifoli এটি Carzophzllales বর্গ ও Droseraceae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। জন্মায় অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায়। এর আরেক নাম সূর্যশিশির। যে মাটিতে জন্ম নেয় সেই মাটির পুষ্টিগুণ কম থাকে। মাটির পুষ্টিগুণ ঠিক রাখার যে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন তার মধ্যে ৯টি উপাদানের ঘাটতি আছে দিনাজপুরের মাটিতে। এ কারণেই দিনাজপুরের মাটিতে বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ‘সূর্যশিশির’ জন্মাচ্ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
উদ্ভিদটির রয়েছে ঔষধিগুণ, পোকা-মাকড়, কীটপতঙ্গ খেলেও উপকারী পোকা বা কীটপতঙ্গ এই উদ্ভিদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এ কারণে উপকারী পোকা বা কীটপতঙ্গের ক্ষতি করতে পারে না এটি।
২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে সংরক্ষিত পুকুরপাড়ের পশ্চিম তীরে বিলুপ্তপ্রায় পতঙ্গভুক ‘সূর্যশিশির’উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি শনাক্ত করেন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। গত বছর এখানে তিনটি গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু গত ১ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে শত ‘সূর্যশিশির’ দেখা গেছে।
দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, গোলাকার সবুজ থেকে লালচে রঙের থ্যালাসের মতো মাটিতে লেপ্টে থাকা উদ্ভিদটি মাংসাশী উদ্ভিদসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতির। এ উদ্ভিদে রয়েছে ঔষধিগুণ, পোকা-মাকড় কীটপতঙ্গ খেলেও উপকারী পোকা বা কীটপতঙ্গ এই উদ্ভিদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। ফলে এটি উপকারী পোকা বা কীটপতঙ্গের ক্ষতি করতে পারে না। এরা জন্মায় অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায়। যে মাটিতে সূর্যশিশির জন্ম নেয় সেই মাটির পুষ্টিগুণ কম থাকে, যা মরুকরণের ইঙ্গিত বহন করে।
সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আরও জানান, ৪-৫ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাসসদৃশ উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বর্ণের ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জরি হয়। সংখ্যায় ১৫-২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতাসদৃশ মাংসাল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কাঁটা থাকে। মাংসাল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু। পাতাগুলোয় মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক এক প্রকার এনজাইম নির্গত করে। এনজাইমে পোকা পড়লে আঠার মতো আটকে রাখে। শীতের সকালে পড়া শিশিরে চকচক করে উদ্ভিদটি, তাতেই আকৃষ্ট হয় পোকারা। পোকামাকড় উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমের আঠার মাঝে আটকে যায়।
তিনি আরও জানান, কয়েক মাস থেকে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা উদ্ভিদটির সংরক্ষণ এবং বিস্তারে গবেষণা চালাচ্ছে। উদ্ভিদটি এবারই প্রথম নয়, প্রথম ক্যাম্পাসে শনাক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ রজব আলী মোল্লা এটি শনাক্ত করেন। তার উপযোগী পরিবেশের বিরূপ প্রভাবের কারণে উদ্ভিদটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
দিনাজপুরের মাটিতে অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দিনাজপুর মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মামুন আল আহসান চৌধুরী।
তিনি জানান মাটির পুষ্টিগুণ উর্বরতা ঠিক থাকার জন্য যে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন এর মধ্যে ৯টিই ঘাটতি রয়েছে দিনাজপুরের মাটিতে। ফলে অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাচ্ছে। এতে দিনাজপুর জেলা মরুকরণের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও, ঢাকার জীববিজ্ঞান গ্যালারিতে প্রদর্শিত উদ্ভিদটির প্রতিকৃতিতে দেয়া তথ্যমতে, বিলুপ্তপ্রায় এই উদ্ভিদটি বাংলাদেশে শুধু দিনাজপুর, রংপুর ও ঢাকা জেলায় পাওয়া যায়