তাজ চৌধুরী,দিনাজপুর ব্যুরো:
দিনাজপুর ল্যাম্ব হাসপাতাল ফিস্টুলা রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানসহ পূণর্বাসন করছে। গত ২০ বছরে দিনাজপুরসহ ৫ জেলার ৩০ টি উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ গরীব রোগীকে চিকিৎসার পাশাপাশি স্বচ্ছলতা ফিরে পেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রদান করেছে গরু, ছাগল, সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণ। যা ওই এলাকাসহ দিনাজপুরের সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ফিস্টুলা রোগটিকে আমাদের সমাজে এতটাই খারাপভাবে দেখা হয় যে, আক্রাদের কারও কারও সংসার ভেঙ্গে যায়। কেউ কেউ লজ্জায়, ক্ষোভে, ভিন্ন পন্থা অবলম্বনের কথাও ভাবেন। অথচ এ রোগটির চিকিৎসা রয়েছে এবং এটি মোটেও মারাত্মক কোনো রোগ নয়। লজ্জা ফেলে চিকিৎসকদের স্বরনাপন্ন হলেই মুক্তি মিলবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০ হাজার ফিস্টুলা রোগী আছে। এ ছাড়াও এ রোগে প্রতি বছর আক্রান্ত হচ্ছে ২ হাজার জন।
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ২৭ কিঃমিঃ পূর্বে পার্বতীপুর উপজেলায় একদল মিশনারী ১৯৭০ দশকের শুরুর দিকে স্থাপন করে একটি হাসপাতাল যার নাম দেয়া হয় ল্যাম্ব। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই ল্যাম্প হাসপাতালটি মা ও শিশু সেবায় কাজ করে আসছে। দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের নারীদের শিক্ষার হার অনেকটা কম ফলে অল্প বয়সে বিয়ের সংখ্যাও অনেক বেশি। অনভিজ্ঞ দাই দ্বারা বাড়ীতেই সন্তান প্রসব বা বিলম্বে প্রসব অথবা তলপেটে, জরায়ু বা অন্য কোনো অপারেশনে এ ফিস্টুলা রোগ হতে পারে। যার কারনে মায়েদের অনবরত প্রসাব ঝরতে থাকে, ফলে পরিবার বা সমাজে তারা হয় ঘৃণিত। শ্বশুর বাড়ীসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনেরা তাদের এড়িয়ে চলে।
এমন কি স্বামীরা অনত্র বিয়ে করার ফলে তারা তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যায়। সেবা থেকে বঞ্চিত এসব নারীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছে ল্যাম্ব হাসপাতাল। অল্প বয়সে বিয়ের পর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ফাতেমার মৃত বাচ্চা প্রসব হয় ফলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় তাকে। এখন সে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। একইভাবে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ধাপের বিউটি বেগমের ফিস্টুলা হলে তার স্বামী অনত্র বিয়ে করে। এরা সবাই এখন নিজেরা সুস্থ্য হয়ে তাদের মত অন্য গরীব রোগীদের খুঁজে বের করে ল্যাম্ব হাসপাতালে নিয়ে আসে। যেখানে তারা পায় প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ পূণর্বাসনের উপকরণ। মায়ের মমতায় সেবা দিয়ে যান ল্যাম্ব হাসপাতালের সেবিকা নাসিমা বেগম।
আর এই রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন বিদেশী ডা. বেয়াট্রিস আমবুয়ান বার্জার। নিজ দেশের ভালোবাসা আত্মীয় স্বজনের মায়া মমতা ছেড়ে ২০০৯ সাল থেকে হত দরিদ্র গরীব রোগীদের সেবা দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী ডাঃ বেয়াট্রিস আমবুয়ান বার্জার। ফিস্টুলা শুধু এ এলাকা থেকে নয়, সারা বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করতে চায় ল্যাম্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকার ও এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় ল্যাম্ব। তাই এখন প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা। ফিস্টুলা মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy