এ লেখাটি পড়ে কেহ ভুল বুঝে আমার প্রতি অসন্তোষ্ট হলেও, ভোক্তভোগীরা যে সাধুবাদ জানাবে তাতে দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে। আমি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি, শাসন, প্রশাসন বা অন্য কোনো সংস্থার কাহাকেও উদ্দেশ্য করে লেখিনি। তাতে সমাজের বাস্তব অবস্থা ও চালচিত্রকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রতিনিয়ত যেভাবে দেশে বেসামাল অপেন সিক্রেট ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও একশ্রেণীর দাপট বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা কারও জন্যই সুফল বা মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীও থান্ডার ও রেন্ডাম ঘুষ দুর্নীতি, অনিয়ম ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অহরহ আপোষহীন বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও থান্ডার দুর্নীতি রেন্ডাম ঘুষ সংস্কৃতি সোনামির মতো এগিয়ে চলছে। এ লেখার সময়ও দুটি ইংরেজী ও তিনটি দৈনিকে ঘুষ, দুর্নীতির লিড নিউজ ছিল।
ঘুষ, দুর্নীতি সম্পর্কে ভোক্তভোগী অনেককে বলতে শুনা যায় বাস, ট্রেন, বিমানের টিকিট, কোনো কোনো সরকারি অফিসের এলএআর (Local Arrangement Resource) টিসিবির নির্ধারিত দামের তেল, পেঁয়াজ, চিনি, আটার মতো ঘুষেরও যদি নির্ধারিত রেইট থাকত, তবে এত বিড়ম্বনা পোহাতে হত না। অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল সঞ্চালন হয় না। এক ইঞ্চিও লড়ে না। যা মরা হাতীর দৃশ্যপটের মত। অনেক ফাইল না লড়ার কারণে মাসের পর মাস তাতে ধুলা বালি জমে ফাইলের তাগে স্তুপ হয়ে পড়ে থাকার কথাও কম শুনা যায়নি। ভোক্তভোগী অনেকেই ফাইল সঞ্চালনের ব্যাপারে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় শ্রান্ত, ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে ফাইল বা নথির ডিসপোসালের আশা ছেড়ে দিয়ে এবং কোনো উপায়ন্তর না দেখে দোয়ায়ে ইউনুছ ও দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার কথাও জানা যায়।
কিছুদিন হল কলেজের জনৈক অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকের একটি চিঠি পড়ে জানা যায়, কোনো এক জেলা প্রশাসন অফিসের একজন এডিসির নিকট প্রয়োজনে তার অফিসে তিনদিন যেয়েও উক্ত এডিসিকে অফিসে পাননি। পরে চারদিনের মাথায় তাকে পেয়ে তিনি বললেন, তিন দিন পর হলেও আপনাকে অফিসে পাওয়া গেল আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আল আমীন। তাতে নাকি সেই কর্মকর্তা (এডিসি) রাগান্বিত হয়ে বলে থাকেন, আমি আপনার কোনো কথা শুনব না। আপনি যা পারেন তা করেন। যার কাছে খুশী তার কাছে যান। আমি কাহাকেও ভয় পাই না। অর্থাৎ কুছ নেহি পরোয়া, যেমন বাপের বেটা বাঘের বাচ্চা। এমন ধরণের রাবিশ আচরণ মার্কাদের আজ অভাব নেই। আবার দৃশ্যপটে ন্যায় নিষ্ঠাবান ও আদর্শিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পান থেকে চুন খসে পড়লে রাতারাতি বদলী, ওএসডি ও বরখাস্তের নজিরও কম নহে।
কয়েক বছর আগে এক নিকটাত্মীয় চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের টাকা ওঠাতে গিয়ে যে ঝক্কি ঝামেলা হয়রানীর করুন কাহিনী ব্যক্ত করেছেন সে বিষাদের অন্ত থাকেনি। এমনি অসংখ্য উপমা ও উদাহরণের যেন শেষ নেই। অনেক সময় লাল বাতি জ্বালিয়ে অফিসে গল্প, গুজব করে থাকে। অনেকেই যখন খুশী তখন ইচ্ছামাফিক অফিসে আসে এবং অফিস ত্যাগ করে থাকে। তাদের অফিসে আসা যাওয়ার যেমন টাইম টেবল থাকেনি, তেমনি জবাব দিহীতারও যেমন কেহ নেই। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে জামালপুরের সাবেক ডিসিকে অফিস সহকারিনীর সাথে অশ্লীল কর্মে জড়িত থাকার
কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেই ডিসিও তার অফিসে লাল বাতি জ্বালিয়ে অফিসের জরুরী কাজে ব্যস্ত বলে নাকি নিজেকে জাহির করতো।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের নিমিত্তে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার এত বছরেও তা প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস ও প্রজাতন্ত্রের সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ জনগণের সেবক। Government of the Peoples Republic of Bangladesh. কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, Officer are the king or zaminders are public are the servent। অর্থাৎ সব কিছু যেন বিপরীত মুখী। উল্টো জনগণ সেবক ও দেশের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যেন দেশের রাজা, জমিদার।
মন্ত্রী, সচিব ও দেশের বড় চেয়ারে সমাসীন এমন অনেকের পিএস, এপিএস, স্টাফ অফিসারের মধ্যেও এ প্রবনতার কমতি নেই। কিছুদিন আগে একজন জনবান্ধব বড় মাপের কর্মকর্তার স্টাফ অফিসারের সাথে কথা বলে সমাজের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরণের ব্যক্তিরাই জনবান্ধব ও বরেন্য ব্যক্তিদের ইমেজ অনেক সময় ক্ষুন্ন করে থাকে। যদিও এদের হাল হকিকত অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নজরে যায় না। তাদের নজরে গেলে হয়তো এমন হওয়ার কথা নয়। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের নানা কর্মপরিসরে এমন কিছু লোক রয়েছে যাদের আচরন, লেবাস ও পোশাক বদলাতে খুব দেরী হয়নি। যদিও তাদের মধ্যে অনেকেরই বাপ দাদা হানাদার বাহিনীর ধারক, বাহক ও বরকন্দাজ ছিল। এটা এখনও অনেকেই ভুলে যেতে পারে না।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর এক সময়ের মহাপরিচালক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ আন্দোলনের রূপকার মাহবুব আলম চাষী সম্পর্কে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর গণমাধ্যমে যা প্রকাশ পেয়েছে তা অনেকেরই না জানার নহে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক ধরণের সরকার এসেছে। দুইবার সামরিক শাসন, ৭৪, ২০০২ ও ২০০৭ সালে দেশে ইমার্জেন্সি আসে। তন্মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ঘরাণার কত লোক যে রাতারাতি সাপের খোলসের মতো পোশাকে, আচরণে, হাবভাবে ও লেবাছে পরিবর্তন ঘটিয়েছে যা বলার উপেক্ষা রাখেনা। এসব কিছু এখন মামুলি ব্যাপারে হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ শ্রেণীটা স্বার্থের জন্য যে কোনো সময় রূপ পাল্টাতে দ্বিধা সংকোচ করেনি। তাদের কোনো জাত নেই, দর্শন ও আদর্শ নেই। লুঠেপুটে খাওয়া, থান্ডার দুর্নীতি, রেন্ডাম ঘুষ ও স্বার্থপরতাই ওদের ভূষণ। কিছুদিন আগে একজন কর্মকর্তার পোশাকে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ শ্রেণীটা মনে করে তাদের এই ক্যামোফ্ল্যাক্স বুঝি কেহ বুঝে না। আসলে তা অনেকেই বুঝলেও অহেতুক তাদের শত্রু হওয়ার কারণে দেখে, জেনে, না জানার ভান করে বোকা হয়ে থাকে। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দেশের অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী স্বার্থের জন্য হানাদার বাহিনীর পায়রুবি করে থাকে। অনেকেই হানাদার বাহিনীর মনোনীত এমপি, এমএনএ ও মন্ত্রী হতেও দ্বিধাবোধ করেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে ওদের রূপ পাল্টাতেও অসুবিধা হয়নি। যা নজর পড়ার মতো।
এখনও এমন কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারী রূপ পাল্টিয়ে রয়েছে, যাদের মুখোশ উন্মোচিত হলে যেমন তাদের চাকরি ও রাজনীতি তলানীতে যাবে, তেমনি মানুষের কাছে তাদের মুখ দেখাতে না পারারই কথা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কোনো সরকারের আমলেই কমবেশী স্বার্থপর, চাটুকার, আজ্ঞাবাহী, জি হুজুর মার্কা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের একেবারে কম দৃশ্যমান হয়নি। তবে এ লোকগুলো অতি আজ্ঞাবাহী ও চাটুকারীতার কারণে সব সরকারের ভালো জায়গায় অবস্থান করে থাকে। যদিও এদের পিসিপিআর (Past & Present confidential Report) কালিমায় সিদ্ধহস্ত। অপরদিকে ন্যায় নিষ্ঠাবান, আদর্শিক ও ভালো কর্মকর্তা, কর্মচারীদের শ্বাসে, প্রশ্বাসে, দুঃখ, বেদনা ও কষ্টের শেষ থাকেনি।
এ প্রসঙ্গে অতি সংক্ষিপ্তভাবে এ কলামে দুটি ঘটনার উল্লেখ করা হলো। (এক) ভাসানী ন্যাপ নেতা মশিউর রহমান (যাদু ভাই) জিয়ার আমলে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী হচ্ছেন, গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হলে এক শ্রেণীর লোক, কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর মগবাজারের বাসায় ভীড় জমাতে থাকে। তিনি আমারও ভাসানী ন্যাপ নেতা ছিলেন। তখন তাঁহার জ্যেষ্ঠপুত্র সাবেক মন্ত্রী শফিকুল গনি স্বপন কোনো রাজনীতিতে আসেননি। তাঁহার সর্বাঙ্গীন সাথী ছিল তাঁহার মেয়ে রীতা রহমান। তাছাড়া ভাসানী ন্যাপের দপ্তর সম্পাদক আজাদ সুলতান, ছাত্রনেতা নূর মোহাম্মদ খানসহ আরও অনেকেই পাশে থাকতেন। একদিন তাঁর মগবাজারের বাসায় সাক্ষাৎ করতে গিয়ে দেখি লোকে লোকারন্য। যাদের কোনো দিনই মশিউর রহমান যাদু ভাইয়ের সাথে দেখি নাই। তাদের সংখ্যাই ছিল সেদিন বেশী। কোনো মতে আমার মতো আরও অনেকেই ভীড় ঠেলে নেতার কাছে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি সচিবালয়ের ৫/৬ জন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা আলাপ করছেন এবং মওলানা ভাসানীর খুব গুণকীর্তন ও প্রশংসায় মশগুল। আমি খুব মনোযোগ সহকারে তাদের কথা শুনতেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তার সাথে আমার পরিচয় ছিল। সেই ব্যক্তিও সেদিন মওলানা ভাসানীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। যদিও সেই কর্মকর্তাকে আমি মওলানা ভাসানী ও ভাসানী ন্যাপের স্বপক্ষে কথা বলতে কোনো দিনই দেখেনি। মওলানা ভাসানীকে নিয়ে সবসময়ই সমালোচনা, কমিউনিস্ট, পিকিংয়ের আজ্ঞাবাহি ও ভায়োল্যান্সের নেতা হিসেবে মন্তব্য করতে দেখেছি। তখন আমি এই কর্মকর্তাকে চামচা, চাটুকার ও সুযোগ সন্ধ্যানী হিসেবে বলতে থাকলে মশিউর রহমান (যাদু ভাই) আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলেন।
এ ধরণের সুযোগ সন্ধ্যানীরাই বারবার ক্ষমতাধরদের আষ্টেপিষ্ঠে ভীড়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়ে থাকে। এ শ্রেণীটাকে অনেকেই মাখাল ফল হিসেবেও উল্লেখ করে থাকে। ওরা আবার ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর আর পেছনে তাকিয়ে দেখে না। মশিউর রহমান যাদু ভাই ব্রেইন স্ট্রোকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন সচিবালয়ের এই কর্মকর্তাকে একদিনও চোখে পড়েনি। যদিও এই লোকটি চাকরির পদোন্নতিসহ যত সুযোগ সুবিধা তাঁর কাছ থেকে ভাগিয়ে নিতে সচেষ্ট হয়ে থাকে।
(দুই) দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুহৃদের কমতি ছিল না। কিন্তু ৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তাঁর নির্মম ও দুঃখজনক মৃত্যু হওয়ার পর অনেককেই দেখা যায়নি। তখন অনেকেই খন্দকার মোস্তাকের ডাকা পার্লামেন্ট ও মন্ত্রীসভায় যোগদান করে থাকে। পরবর্তী সময় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে প্রথমে জাগদল, তৎপরবর্তী সময় জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করলে আওয়ামী লীগের অনেকেই তাতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়। আওয়ামী লীগের আছাদুজ্জামান খান জিয়ার আমলে ৭৯ইর সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সকল প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। তখন আওয়ামী লীগ আমলের অনেক কর্মকর্তা রাতারাতি লেবাছ ও পোশাক পাল্টিয়ে বিএনপির ধ্বজাধারী হয়ে থাকে। ৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর স্বার্থপররা সরে যায়। ওদেরকে সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের সময় কিছুদিন আবজারভেশন করে চুপ থাকতে দেখা যায়। ৮২ইর ২৪ মার্চ সামরিক শাসক এইচ.এম এরশাদের ক্ষমতা নেয়ার পর সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তারা রাতারাতি লেবাছ পাল্টিয়ে সামরিক শাসক এরশাদের গুণগান গাইতে শুরু করে। পরবর্তী সময় এরশাদ ১৮ দফা, জনদল ও জাতীয় পার্টি গঠন করলে মাখাল ফল, সুবিধাভোগী ও স্বার্থপর হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত এসব কর্মকর্তারা এরশাদের গুণগান ও সাফাই গেয়ে অনেককে ডিঙিয়ে সচিবালয়ের আসনগুলো দখল করে থাকে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ১৫ দল, ৭ দল, ৫ দল ও ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এরশাদের পতন হলে রাতারাতি আওয়ামী লীগ বিএনপির কাতারে সামিল হয়ে সুযোগ সন্ধ্যানী কর্মকর্তাদের এ শ্রেণীটাই সমসুরে এরশাদকে ‘গণদুশমন’ আখ্যা দিয়ে থাকে। ৯১ সনের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে এ শ্রেণীটাই বেগম খালেদা জিয়ার গুণকীর্তন করে তাদের ফায়দা লুঠে নিতে কুন্ঠাবোধ করেনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলে এ শ্রেণীটাই লেবাছ পাল্টিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার গুণকীর্তন করে যা করার না তা করতেও কুন্ঠাবোধ করছে না। এই স্বার্থপর, সুবিধাভোগী ও ক্ষমতা পাগলদের কাছ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। পাকিস্তানী স্বৈরাশাসকরা যেমন কুছনেহি পরোয়া বলে মানুষের সাথে যা ইচ্ছা তা আচরণ করতো এখনও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের একটা শ্রেণী পাকিস্তানি আমলের মতো মানুষকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা করে কুছ নেহি পরোয়া মনে করতে বিবেকে আদৌ বাধে না। বর্তমান দেশের উন্নয়নের যাত্রাপথে অফিস, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়মের যে বেসামাল চিত্র গণমাধ্যম, মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও প্রকাশিত হচ্ছে, তা দেখে অনেক সময় যে কারও শরীর শিহড়িয়ে ওঠার মতো উপক্রম হয়ে থাকে। যদিও প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ও আপোষহীন মনোভাব ও প্রত্যয় দেখিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে দুদকের দৃষ্টি ভঙ্গিকেও খাটো করে দেখার সুযোগ না থাকারই কথা।
অপরদিকে কিছু বেরসিক কর্মকর্তাদের হাবভাব প্রজাতন্ত্রের জনগণের সাথে অশুভ আচরণ দেখে মনে হয় এখনও তাদের মধ্যে পাকিস্তান আমলের দজ্জাল ও দানবদের মতো কুছনেহি পরোয়ার ভাবাদর্শ রয়েছে। এ শ্রেণীটা স্বার্থ ছাড়া কোনো দর্শন নেই। যে কারণে অনেকেই এ শ্রেণীটাকে present government supporter বা পিজিএস হিসেবে আখ্যায়িত করতেও ভুল করে না। অর্থাৎ ওদের টাইটেল হচ্ছে স্বার্থপর, সুবিধাভোগী ও ক্ষমতার সুযোগ সন্ধ্যানী।
ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপব্যবহারের সাথে যে স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী বা যে কাহারই সম্পৃক্ততা থাকুক না কেন, তাদেরকে যথাযথ আইনের মাধ্যমে শাস্তি না দিলে ঘুষ, দুর্নীতি যেমন আরও বাড়বে, তেমনি ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজরা দেশ, জাতি ও জনগণের বুঝা হয়ে দাঁড়াবে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ১৭/৯/২০ ইং বৃহস্পতিবার অ্যানুয়েল পারফরম্যান্স এগ্রিমেন্ট ২০২০ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, দেশে একটি ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। আপনাদেরকেই এই শুদ্ধাচারের পরিকল্পনা করতে হবে। কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায়, সেই উপায় বের করতে হবে। দেশের মানুষ দুর্নীতির খনি, ঘুষের ভূত ও পাকিস্তান আমলের মতো কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কারও মুখ থেকে বেরসিক কুছ নেহি পরোয়ার হুংকার আর শুনতে চায়না। ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত দেশই মানুষের প্রত্যাশা। পরিশেষে লর্ড অ্যাকটনের Absolute power corrupts absolutely এর মর্ম কথা তুলে ধরে বলব, এই উক্তি থেকে অনেক কিছু জানার ও শিক্ষার রয়েছে। লর্ড এ্যাকটনের এ উক্তির মধ্যেই নীহিত রয়েছে থান্ডার দুর্নীতি, রেন্ডাম ঘুষ, দুর্নীতির খনি, ঘুষের ভূত ও কুছনেহি পরোয়া প্রতিফলন।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy