আশিকুর রহমান আশিক বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে, কাজ করি এক সাথে’
প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। বৈশ্বিকভাবে এটা স্বীকৃত যে, বাংলাদেশ যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এগিয়ে আছে, তেমনিভাবে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এগিয়ে। আমরা বিভিন্ন সময় বলেছি, সম্মিলিত প্রয়াসে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলা সম্ভব। এ বছর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে, কাজ করি এক সাথে।’ অর্থাৎ সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই সম্মিলিত প্রয়াস আক্ষরিক অর্থে শুধু বাংলাদেশেই চলমান। এখানে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন, গবেষক, বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংবাদমাধ্যম কাজ করছে। এর ফলে বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে।
বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার’ প্রণীত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন এটা কার্যকর ছিল না। পরে হিওগো ফ্রেমওয়ার্ক অব অ্যাকশনসহ আন্তর্জাতিক কিছু পলিসি ও রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে ২০১০ সালে এটা সংশোধন করা হয়। এই ফ্রেমওয়ার্ক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেছিল। পরে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক-২০১৫ এর পর স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টারে কিছু ঘাটতি নির্ণয় করা হয়, যেগুলোতে আরও কাজ করা দরকার। তখন বাংলাদেশ সরকার এ প্রক্রিয়ায় একামেডিশিয়ান, গবেষক, সংগঠন ও গণমাধ্যমকে যুক্ত করে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক-২০১৫ এর কর্মকাঠামো অনুযায়ী পলিসি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফলে যখন কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয় সেখানে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকে। কারণ আমরা ঘাটতিগুলো চিহ্নিতকরণে কাজ শুরু করেছি ২০১০ সাল থেকে। ২০১৫ সালে যখন আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয় সে সময় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক-২০১৫ এর ডেভেলপমেন্টে বাংলাদেশ বিশেষ অবদান রাখে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার কারণ হলো, আন্তর্জাতিকভাবে যেসব ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলো পিছিয়ে ছিল; আমরা চেষ্টা করেছি সবার আগে সেগুলো সমাধান করার। এমনকি বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দুর্যোগ হ্রাসবিষয়ক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনবদ্য ভূমিকা এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয়। তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন। তাকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন বলা হয়। তিনি এবার এসডিজি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানবিকতার দিকটি বেশ স্বীকৃত। বাংলাদেশে শরণার্থী সংকটকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট একটি মানবিক সংকট। রোহিঙ্গারা মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এটা সামাজিক দুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। বাংলাদেশ কখনও চায়নি এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হোক। বাংলাদেশ চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা যেন অতি দ্রুত, নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ সহজ না করায় এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সরকার কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করে। এখানে তাদের জন্য পরিকল্পিত আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় ব্যয়ভার মেটাতে হচ্ছিল বাংলাদেশের অর্থায়নে। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ইউএনএইচসিআরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইউএনএইচসিআর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের কল্যাণে যে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলল এ চুক্তির মাধ্যমে।
আমরা এখন কভিড-১৯ মোকাবিলা করছি। বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে। কভিডের সময় যাতে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন নারী ও শিশু সুরক্ষা এবং দরিদ্রদের সহায়তায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পরও কভিডের কারণে কর্মসংস্থান, সুশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সার্বিক যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সহযোগী বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমরা জানি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংগঠন ও দেশ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ করতে আগ্রহী। এ সুযোগ কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় চ্যাম্পিয়নের পর্যায়েই থাকবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়া এমনকি আন্তর্জাতিক বিশ্বও বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাংলাদেশ দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক নীতিমালা তো মানছেই; স্থানীয়ভাবেও করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করছে। এটাকে ধরে রাখতে হবে। আর ধরে রাখতে হলে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতেও যেন আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় গৃহীত যে কোনো পদক্ষেপ সবাই মিলে একইভাবে একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটাই কাম্য। দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রম এক দিনের কোনো বিষয় নয়। আমাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সারাবছর এ কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এটা করা গেলে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন সহজ হবে। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণেও সহায়ক হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু তথা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আমাদের আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে। পাশাপাশি কিছু বিষয় যেমন দুর্নীতি, নারীর প্রতি সহিংসতা, মাদক বিষয়ে সরকার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি ঘোষণা করেছে। এগুলো সামাজিক ঝুঁকি। এস
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy