এ আর আহমেদ হোসাইন(দেবীদ্বার-কুমিল্লা)প্রতিনিধি:
কুমিল্লার দেবীদ্বারে ফসলী খেতের পাশের নালায় পাওয়া বেওয়ারিশ এক ছেলে নবজাতকে নিয়ে তোলপাড় দেবীদ্বারের সর্বত্র।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় উপজেলার ১৬নং মোহনপুর ইউনিয়ন’র ১নং ওয়ার্ডের ভৈষেরকোট গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির পাশে একটি ফসলী ক্ষেতের পানি নিষ্কাশনের নালা থেকে পথচারীদের কানে ভেসে আসে শিশুর কান্না। থমকে দাড়ায় পথচারিরা। ধীরে ধীরে দর্শক সাড়িতে জমতে থাকে শত শত উৎসুক জনতা। কেউ শিশুটিকে উদ্ধারে এগিয়ে না আসলেও, শিশুটিকে কোলে তুলে নেন ভৈষেরকোট গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী তাজুল ইসলাম’র স্ত্রী গৃহবধূ সালমা আক্তার। অসুস্থ্য ও পোকামাকড়ের কামড়ে আক্রান্ত ক্ষতবিক্ষত শিশুটিকে মা’য়ের আদরে কোলে তুলে নেন তিনি এবং পরে দেবীদ্বার থানা পুলিশকে খবর দেন।
সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে স্থানীয় তুহিন মেম্বার’র সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ কবির, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মঞ্জুর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স’র সহযোগীতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুটির সার্বিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এরই মধ্যে শিশুটিকে দত্তক নিতে বেশ কয়েকজনের মৌখিক আবেদনও জানাতে দেখা যায়।
সংবাদ পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে দেখতে এবং তার খোঁজ খবর নিতে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট নাজমা বেগম এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া বেগম।
তবে শিশুটিকে শুরুথেকে দত্তক পাওয়ার আশায় ভৈষেরকোট বিরাম বাড়ির মাহবুব সরকার’র স্ত্রী গৃহবধূ ডলি আক্তার শিশুটিকে দেখভাল করে যাচ্ছেন। তার এক কণ্যা ও তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। তার তিনটি পুত্র সন্তানই প্রতিবন্ধি। তাই সে ছেলে শিশুটিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে দেখভাল করছেন, শিশুটির বস্ত্র ও দুধের ব্যবস্থাও করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ কবির বলেন, দত্তক নিতে হলে অনেক আইনী জটিলতাও রয়েছে, যা সমাজসেবা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পুলিশ প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তরের সম্মতি থাকতে হবে। দত্তক নিতে আগ্রহীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে তা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে হবে। তার আগে অপেক্ষা করতে হবে শিশুটির বৈধ অভিভাবক কেউ আছে কিনা।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, উদ্ধারকৃত নবজাতক শিশুটিকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সকালে খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয়দের সহায়তায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেই। শিশুটির আসল পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শিশুটির বৈধ অভিভাবকের সন্ধান পেতে স্থানীয়দের সহযোগীতা কামনা করছি, তবে আমরাও তার পরিচয় জানার চেষ্টা করছি।