প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি জামাত ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধ অপরাধী। দেশের উন্নয়ন ধ্বংস করাই বিএনপির চরিত্র। এদের ধ্বংসের হাত থেকে দেশকে রক্ষায় নৌকা মার্কাই আপনাদের সবরকমের সহযোগিতা দেবে।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচলের উদ্বোধন শেষে (১০ অক্টোবর) মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ডাঃ কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায় সেটিই আমরা করেছি। আজকে পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল উপহার দিয়ে গেলাম। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনবেন এটাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান। পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি। আমরা আজ পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল চালু করে দিলাম।
আজ সারাবিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আজ সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এটি করতে পেরেছি কারণ বাংলাদেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। তো সেই বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা পদ্মা সেতু, রেল সেতৃ করে দিয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছে। নৌকা আপনাদের কলেজ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে। নৌকাই এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে, আপনাদের কাছে আমার সেই আবেদন থাকলো। অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক চক্রান্ত; কিন্তু আমার ভরসা একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আছেন, তারা অস্ত্র নিয়ে ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।
এসময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামাতের সমালোচনা করে বলেন, ওই বিএনপি যে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে, দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগেছে, অর্থ আত্মসাৎ করেছে, অস্ত্র চোরা কারবারি। এই হলো বিএনপির নেতা।
কোরআনের সুরা কাফেরুনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, যার যার ধর্ম সে পালন করবে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো। বিএনপি ক্ষমতায় এসে কি করেছে? সকলের উপর অত্যাচার, খুনখারাবি। আওয়ামী লীগের একটি নেতাকর্মীকেও ছাড়েনি তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এই দেশকে গড়তে চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক। মন্দা কোভিড-১৯ এবং এই ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, অনেক দেশে অর্থনৈতিক ঘাটতি। বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমি যেনো অনাবাদি না থাকে। আপনারা যা পারেন কিছু ফসল ফলান। যা পারেন উৎপাদন করেন। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি কিন্তু নিজের সব জমি চাষ করা শুরু করে দিয়েছি। শুধু তাই না, গণভবনে এখন একটা খামার হয়ে গেছে। সেখানেও ধান, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ যা যা পারি সব উৎপাদন করি, তরিতরকারি ফলমুল। কাজেই সবার উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিজেদের নিশ্চিত করতে হবে। বরং আমরা অনেক দেশকে সাহায্য করতে পারবো।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খরচ হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানহীন থাকবে না। আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করে জ্ঞানবিজ্ঞানে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে, জনসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে পৌছাতে থাকেন। একপর্যায়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে পুরো স্টেডিয়ামের মাঠ। জনতার ভীর উপচে পড়ে মাঠের বাইরে রাস্তাঘাটে।
এর আগে সকাল সোয়া ১০ টার দিকে গণভবন থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১ টায় মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হন। বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি। পরে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ভাঙ্গা রেল জংশনে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছান সমাবেশস্থলে।।