ডেস্ক: উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় নিয়মিতই চলছে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভ্রমণের মহোৎসব। প্রকল্প মানেই যেন থাকতে হবে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বা বিদেশ ভ্রমণ। এবার দেশের ভেতরেই ভ্রমণের এক প্রস্তাবনা বিদেশ ভ্রমণকে হার মানিয়েছে।
ইলিশ মাছ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় ১৭৪ কর্মকর্তা দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ করবেন। এ জন্য খরচ হবে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। যেখানে জনপ্রতি খরচ ৪ লাখ এক হাজার ৭২৫ টাকা। দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের চেয়ে দেশের ভেতরেই ভ্রমণ ব্যয় বেশি।
প্রতি মাসে একটি গাড়ির ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। চার বছরে এক গাড়ির ভাড়া সোয়া কোটি টাকা। আর প্রকল্পে আইন বাস্তবায়নেই খরচ হবে ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তবে এর আগে ২০১৭ সালে ইলিশ উৎপাদন দ্বিগুণ করতে ৯২৭ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ এবং নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ, যা জিডিপির এক শতাংশ। ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণের সাথে সরাসরি নিয়োজিত। আর ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
অভিযান ও নজরদারির পরও অপ্রাপ্ত অবস্থায় ইলিশ ধরাকে বন্ধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি একশ্রেণীর মহাজন ও দালালচক্রের কাছে বন্দী আছে আমাদের জেলেরা। তাই ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সব দালালচক্রের কবল থেকে ১০ হাজার জেলে পরিবারকে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশির দশকের আগে মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ ছিল ইলিশের অবদান। ২০০০-০১ সালে ইলিশের উৎপাদন ২.২৯ লাখ মেট্রিক টন, ২০০১-০২ সালে কমে ২.২০ লাখ মেট্রিক টন, ২০০২-০৩ সালে আরো কমে ১.৯৯ লাখ মেট্রিক টন।
তবে ২০১৭-১৮ সালে উৎপাদন বেড়ে হয় ৫.১৭ লাখ মেট্রিক টন। যা এই প্রকল্প শেষে ৬ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ১৭৪ জনের জন্য ভ্রমণব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২৯টি বোট কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিটি বোটের দাম ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে মোট ১৬ হাজার ৬১৬টি অপারেশন করা হবে। যার জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সম্মিলিত বিশেষ অভিযানে ব্যয় হবে ২১ কোটি ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এখানে তিন বছরে ১ হাজার ২৭৮টি অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ ও ধ্বংসাত্মক জাল নির্মূলে জাল বিনিময়ে খরচ ৬০ কোটি টাকা। প্রতি পরিবার পাবে ৬০ হাজার টাকা। বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় ৭৫ কোটি টাকা। ৫০টি নিখোঁজ জেলে পরিবারকে সহায়তা ও ১৫ হাজার জেলেদের আইডি কার্ড দিতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। প্রতি মাসে একটি গাড়ি ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হারে ৪ বছরে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশ কমে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদী বাঁধ ও ব্রিজের কারণে। এ ছাড়া উজান থেকে পরিবাহিত পলি জমার জন্য পানিপ্রবাহ ও নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। দূষিত হয়ে পড়ছে জলজ পরিবেশ। ফলে ইলিশের পরিভ্রমণ পথ, প্রজনন ক্ষেত্র, বিচরণ ও চারণ ক্ষেত্র দিন দিন পরিবর্তিত এবং বিনষ্ট হচ্ছে। এর জন্য উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। ইলিশের জন্য খ্যাত এক সময়ের পদ্মা, ধলেশ্বরী, গড়াই, চিত্রা, মধুমতি ইত্যাদি নদীতে বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে ইলিশ মাছ প্রায় পাওয়া যায় না।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে এবং জেলেদের অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বিভিন্ন ধরনের কম্বিং অপারেশন, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম এবং অভিযান পরিচালনার সংস্থান রাখা হয়েছে।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দু’দফায় ভোলা, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় অভিযানে ২২৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৪৩৩টি অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৩২৬টি বেহন্দি জাল এবং এক হাজার ৭১টি অন্যান্য জাল যেমন- বেড় জাল, চর ঘড়া জাল, মশারি জাল, পাইজাল ইত্যাদি আটক করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, বিভিন্ন কারণে ইলিশের প্রকল্পগুলো আগে নেয়া হয়নি। এটাই প্রথম প্রকল্প। অনুমোদন পেলে দেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি করবে মৎস্য অধিদফতর।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: জাকির হোসেন আকন্দের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় তারা এই সব কাজের জন্য ভ্রমণ করবেন। এখানে খরচ হবেই।
তিনি বলেন, এর আগে কম টাকার কারণে অনেক আইন কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তাই এবার আইন বাস্তবায়নে ও মনিটরিংয়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আগে যে পরিমাণ জাল দেয়ার কথা ছিল এখন সেটার পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।