আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়: নাছিমা বেগম
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে ছেলে ও মেয়ের সম্পর্কের মাধ্যমে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে তাদের বিয়ের ব্যাপারটি ভিন্ন বিবেচনায় দেখা যেতে পারে।
করোনায় বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির কারণ নিয়ে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ আয়োজনে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাছিমা বেগম বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শাস্তির ভয়ে কাজীরা বাল্যবিয়ে পড়ান না, সেখানে বিয়ে পড়ায় নোটারি পাবলিক যেটি প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরি। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অভিভাবকদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ধর্ষণের সালিশি সমাধান মোটেই বৈধ নয়। এটি একটি ক্রিমিনাল ওফেন্স। বিচারকরা যদি মনে করেন তাহলে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের নিচের কন্যাশিশুকে বাবা-মার সম্মতিতে বিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনটি যথপোযুক্ত। তবে করোনাকালে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে প্রশাসন ব্যস্ত থাকায় আইনটির যথাযথ প্রয়োগ হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতা কমে আসবে। কিন্ত কমেনি। যে কারণে এ সময়ে বাল্যবিয়ে বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় শনিবার এফডিসিতে এই ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড গমেজ ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাল্যবিয়ে শুধু বন্ধ করলেই হবে না, বাল্যবিয়ে ঠেকানোর পর মেয়েটি পরবর্তীতে কেমন আছে, বিয়েটি কেন হচ্ছিল, মেয়েটির অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা কেমন, সে কি তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে, অন্যদিকে যে মেয়েটির বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে সেই মেয়েটি কেমন আছে, তার শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কি রকম- এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বাল্যবিয়ের শিকার সেই মেয়েগুলোর সুরক্ষায় কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত বছর গড়ে মাসে ৫৮টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের ৩১ শতাংশই গর্ভবতী হয়, যারা শারিরিক ও মানসিকভাবে সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত নয়। ৪৩ শতাংশ কিশোরী মা গর্ভজনিত সমস্যার কারণে মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বাল্যবিয়ের হার ৫৯ শতাংশ। বাল্যবিয়ে নির্মূলে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছিল, কভিড-১৯ এর অতিমারিতে নানাবিধ কারণে তা আবার পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন করোনাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তেমন নজরদারি করতে পারেনি। তাই করোনাকালে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। দরিদ্রতার কারণে অনেক কিশেরীরাই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। তাই মেয়েদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি যদি কারিগরি শিক্ষা দিতে পারা যায়, তাহলে তারা নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু আয় করতে পারবে। তখন হয়তো বাল্যবিয়ে অনেকাংশে কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আগের আইনে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল৷ নতুন ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭’-এ ১৮ বছরের নিচে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হলেও, ওই একই আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতিতে ১৮ বছর বয়সের নিচেও বিয়ের অনুমতি দেওয়া যাবে। তাহলে কি বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বাল্যবিয়ের সংস্কৃতি আমাদের দেশে চলতেই থাকবে প্রশ্ন তোলেন কিরণ।
প্রতিযোগিতায় ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়কে পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, চাইল্ড অ্যান্ড ইয়ুথ ফোরামের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. মেহরুবা, সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন, ড. শাকিলা জেসমিন ও মোর্শেদা ইয়াসমিন পিউ।