ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আজ রবিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, কেবল ফাঁসির আইন করলেই ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব হবে না, একই সঙ্গে আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিবৃতিতে ৭টি প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ’ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সম্বলিত রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করবার জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার তড়িৎ সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপে এই কাঙ্খিত পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি আমরা একথা উল্লেখ করতে চাই যে- আইনের সঠিক ও সময়োপযোগী প্রয়োগের ওপর নির্ভর করছে এর কার্যকারিতা। বাংলাদেশে অনেক আইন রয়েছে কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ ঘটছেনা। তাতে করে আইন তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রয়োগকারীর উপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় আমরা দ্রুততম তদন্ত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করার তাগিদ জানাই। বিদ্যমান আইনের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে আইনটিকে নির্যাতিত ও ধর্ষিত নারীর অনূকুলে সংশোধনী আনার জোর দাবি জানাই।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা একথাও জোর দিয়ে বলতে চাই যে শুধুমাত্র আইন সংস্কার ও শাস্তি প্রদান করে এই জঘন্য অপরাধ থামানো যাবেনা। এর জন্য প্রয়োজন দেশে সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিশুদ্ধতা। আর এ জন্য প্রথম যে কাজগুলো করা জরুরি বলে ধারণা করি তাহলো-
১. ধর্ষক ও সন্ত্রাসী যেন কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এ ঘৃণ্য অমানবিক কাজ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
২. আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শতভাগ সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করা।
৩. আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখা
৪. ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। বিভিন্ন ধর্ম সভায় মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ভুল ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ব্যাখা দিয়ে নিরন্তর নারী-অবমাননাকর বক্তব্য থেকে মৌলবাদীদের নিবৃত করতে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
৫. ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে ও নির্যাতিত নারীর সামাজিক লাঞ্চনা থেকে রক্ষাকল্পে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল সামাজিক- সাংস্কৃতিক শক্তিসমূহের কর্মসূচিকে সর্বাত্নক সহায়তা প্রদানে তৎপর হওয়া।
৬. প্রাথমিক-উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচির আধুনিকায়ন। মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রমকে সরকার নিয়ন্ত্রিত করা। এবং নারীর প্রতি সম্মানের মানসিকতা গড়ে তুলতে সকল পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে, নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা। একমুখি শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা।
৭. পেশী শক্তির বিপরীতে জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর সমাজ গড়ে তুলতে ব্যাপক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠনের দায় ও দায়িত্ব সর্বাধিক। সরকারের এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সর্বাত্নক সহযোগিতা করাও জরুরি।
উল্লেখিত কর্মোদ্যোগসমূহ বিবেচনায় এনে সরকার এই ভয়াবহ ধর্ষণ-সংস্কৃতি থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে পারে বলে বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বিবৃতিদাতারা হলেন- কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ফোকলোরবিদ শামসুজ্জামান খান, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারোয়ার আলী, নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার, অধ্যাপক আবদুস সেলিম, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, কবি নির্মলেন্দু গুন, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি মোহাম্মদ নূরুল হুদা, অধ্যাপক শফি আহমেদ, নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লাকী ইনাম, সারা যাকের, শিমূল ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুছ, মান্নান হীরা ও হাসান আরিফ।