রাসেল চৌধুরী
বাংলা নববর্ষ ১৪৩০-কে স্বাগত জানিয়ে শেষ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুক্রবার (পহেলা বৈশাখ) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়। যা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়।
ইউনেস্কো কর্তৃক ‘মানবতার স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষিত মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের স্লোগান ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। এর মাধ্যমে সবার কামনা- পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
এদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন মুখোশ, পেঁচা, ঘোড়া, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হয়। পরে ঠিক সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শুরু হয়।
এবারের শোভাযাত্রায় নতুন সংযোজন বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী নীল গাই। এর মাধ্যমে প্রাণীটিকে প্রকৃতিকে ফিরে পাওয়ার আশার পাশাপাশি বিলুপ্তির হুমকির মুখে থাকা সব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়।
আয়োজক কতৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার র্যালি প্রতিবছরের মতো চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে ঘুরে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে। তবে মাহে রমজানের পবিত্রতার কথা মাথায় রেখে বাঁশি, ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ঢোলের শব্দও সীমিত রাখা হয়েছে।
এর আগে ভৈরব সুরে শুরু হওয়া ছায়ানটের বর্ষবরণ ১৪৩০–এর অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছায়ানটের শিল্পীরা এবারের আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এদিন ভোর ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে শুরু হয় বাংলা ১৪৩০ সালকে বরণ করে নেওয়ার এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।
ছায়ানট সূত্রে জানা যায়, বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে চলতি বছর ১০টি সম্মিলিত গান, ১১টি একক গান, দুটি আবৃত্তি এবং সবশেষে জাতীয় সংগীতে সাজানো হয় অনুষ্ঠানমালা। আর আয়োজনটিতে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতি, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, আত্মবোধন আর জাগরণের সুরবাণীর বার্তা দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি রেডিও চ্যানেলগুলো। পাশাপাশি ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়েছে।
দিনের শুরুতেই পরিবেশন করা হয় আট মিনিটের আহির ভৈরব সুরের সারেঙ্গি বাদন। ছায়ানটের শিল্পীদের বাজনা মুহূর্তেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় রমনাজুড়ে। রমজান মাসের কারণে এবারের আয়োজনে অন্যান্য বারের চেয়ে মানুষের উপস্থিতি কম হলেও সকাল থেকে রমনার বটমূলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে বহু মানুষ।