তৌহিদুল ইসলাম সরকার:
১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির জন্য খুব গৌরবের। আর যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন দেশ ও মায়ের টানে। তাদের গৌরব এবং অহংকার আকাশ ছোঁয়া। এমন এক গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের কুল ধূরুয়া গ্রামের আব্দুল বারী ভূইয়া। যিনি তাঁর কর্মের পুরস্কার হিসেবে অর্জন করেছেন অসংখ্য পদক।
গত শুক্রবার আব্দুল বারী ভূইয়া নবম মৃত্যু বার্ষিকী। এই দিনটিকে স্থানীয় সুশীল সমাজ ও পারিবারিক ভাবে বিশেষ আয়োজন এর মধ্য দিয়ে স্মরণ করছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী ভূইয়া কে। তারই ধারাবাহিকতায় নান্দাইল মডেল প্রেস ক্লাবের নিজ কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধায় আব্দুল বারী ভূইয়ার নবম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে এক বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়
এবং কাঙ্গালি ভোজ করানো হয়।
মিলাদ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী ভূইয়ার স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান, অনুষ্ঠিত হয়।
স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে বারী ভূঁইয়ার বীরত্বের কথা তুলে ধরেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সাধারণ মানুষের মতো জীবন ধারণে করেছেন। প্রয়াতঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী ভূইয়া অত্যন্ত সাদা-মাটা মনের মানুষ ছিলেন।
তিনি ১৩ জানুয়ারী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। মরহুম আব্দুল বারী ভূইয়া পিতা মরহুম আবিদ হোসেন ভূঁইয়া এবং মাতা পরিমেন নেছা। ম্যাট্রিকুলেশনের প্রস্তুতির সময়ই তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের অধীনে বর্তমান নেত্রকোনা জেলার থানা মদনসহ বিভিন্ন এলাকার সম্মুখ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন যা অনস্বীকার্য। নেত্রকোনা জেলার মদন এলাকা পাকবাহিনী মুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল আব্দুল বারী ভুইয়ার, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন ও কৃতিত্বের জন্য তিনি মোট ৫টি স্মারক পদকে ভূষিত হন বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।
বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন ও কৃতিত্বের জন্য তিনি মোট ৫টি স্মারক পদকে ভূষিত হন যা ময়মনসিংহে বিভাগে বিরল। আব্দুল বারী, ভুইয়ার স্মারক পদক গুলো হলো (১) মুক্তি তারকা, (২) সংবিধান পদক, (৩) সমর পদক, (৪) আমার সোনার বাংলা জয় পদক (৫) রণ তারকা বাংলাদেশ পদক। প্রয়াত আব্দুল বারী ভূইয়া সেনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট খন্ড-৫ অনুযায়ী ইএমই নং ১৫৫৬৬, সনদ নং ১৮৫৮৫০, আর্মি অর্ডার ০৩/২০০০ অনুযায়ী ক্রমিক নং ১৭০৪০ ছিল।
মরহুম আব্দুল বারী ভূঁইয়ার কনিষ্ঠপুত্র আল-আমিন ভূইয়া রাহাত তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে বাবা ইন্তেকাল করেন।
আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাঁচটি স্মারক পদকে ভূষিত হয়েছেন যা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ভূমিকার এক অনন্য সেরা অর্জন, আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকা ২০১৭ সালের (১০ ফেব্রুয়ারি), ২০২১ সালের (৯ ফেব্রুয়ারি), ২০২১ সালের (১০ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ এবং জাতীয় দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকা ২০২১ (সালের ১৯ ডিসেম্বর)
“স্বাধীনতার ৫০ বছরেও প্রাপ্য সম্মান পেলেন না স্মারক পদকের” শিরোনাম সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি কেউ। বাবার এই সোনালি অর্জন মুক্তিযুদ্ধের স্মারক পদকের স্বকৃীত রাষ্ট্রে আজও দেয়নি। আমি বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত অতিথিবৃন্দের মাঝে মিষ্টি বিতরণ ও আব্দুল বারী ভূইয়া পারিবারিক ভাবে কাঙ্গালি ভোজ করানো হয়।