রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার অন্তর্গত ১ নং ইউসুফপুর ইউনিয়নের প্রানকেন্দ্র নওদাপাড়া গ্রামে জন্ম নেয় শাউন আরা জেসমিন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পূর্ণ করেন নিজ অঞ্চলেই তারপর ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন রাজশাহী কলেজ থেকে । উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় শাউন আরা জেসমিন। শুধু বিয়ের কারনেই লন্ডভন্ড হয় যায় লেখাপড়া করে ব্যাংকার হওয়ার সুপ্ত স্বপ্ন। কিন্তু দমে যায়নি জেসমিন, ভিন্ন ভাবে ক্যারিয়ার গড়ে হাল ধরেছেন পরিবারের। এ উদ্যমী নারী শাউন আরা জেসমিনের জীবন যুদ্ধের গল্প। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হলেও বন্ধ করেনি লেখাপড়া। সংসার ও সন্তান সামলে শেষ করেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর । এরই মধ্যে নষ্ট হয় ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন। ব্যাংকার হতে না পেরে ভেঙে পরেন কিন্তু থেমে থাকেনি। তার মাথার মধ্যে সব সময় চলতে থাকে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সাবলীলভাবে জীবনকে পরিচালনা করে নারী হিসেবে নিজেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেই ভাবনা। একসময় শুরু হয় বাসায় বসে ব্যাবসা করার চিন্তা ।
বন্ধবীর জামাতে কাজ করে ৫০০ টাকা আয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল জেসমিনের উদ্যোক্তা ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়।
তার উদ্দোক্তা হয়ে উঠার পেছনে অনুপ্রেরণা কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে নিজের প্রয়োজনেই কাজ টা করা কিন্তু আমার অনুপ্রেরণা বলতে প্রথমে আমার বান্ধবীরা বলত,পরে করোনায় আমার স্বামী সার্বক্ষণিক আমাকে সাপোর্ট করেছে।
এর সাথে ছোট ভাইয়ের পরামর্শে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিলে ”আরএস ক্লোজেট” (www.facebook.com/rsclosetbysaun) নামে ফেসবুকে পেজ তৈরি করে প্রোডাক্ট স্টক করি। প্রথমে শুধু পরিচিতদের থেকে পেতাম অর্ডার। ড্রেস আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় চরম হতাশায় কাঁটছিল দিন। করোনার লকডাউন শুরু হলে চাকরি হারায় স্বামী। এতে বাড়ে আরও বেশি হতাশা। ২৩ ফেব্রুয়ারী এক বন্ধুর আমন্ত্রণে যুক্ত হই উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপে। ১৭ মার্চ অর্ডার পাই ১১০০০ টাকার।
(উই) গ্রুপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে জানান,
আমি উই গ্রুপে আসি ২৩ শে ফেব্রুয়ারী। উইতে এসে আমি বিজনেস সম্পর্কে ধারনা পাই। এখানে রাজিব আহমেদ স্যার প্রতিনিয়ত আমাদের বিজনেস সম্পর্কে ধারনা দেন। উনার মতে, ফেসবুক বিজনেস এর ক্ষেত্রে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা প্রতিদিন ১০০ পোস্ট পড়ে ১০০ টি গঠনমূলক কমেন্ট এর মাধ্যমে আগে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করি।।এখানেই শিখেছি শুধু পেজ থাকলেই বিজনেস করা যায় না, তাই প্রয়োজন ডোমেইন। এছাড়া ও শিখি হোস্টিং, পডকাস্ট সম্পর্কে। নাসিমা আক্তার নিশা আপুর woman and e-commerce form we ও digital skill for Bangladesh এই শিখেছি বিজনেস এর খুঁটিনাটি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই নাসিমা আক্তার নিশা আপু ও রাজিব আহমেদ স্যারকে।।করোনা কালিন সময়ে আমি উইতেই সেল করেছি ৫,৫০,০০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, উইয়ের অন্যতম উপদেষ্টা রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শে পোস্ট কমেন্ট করে অ্যাক্টিভ থাকতাম গ্রুপে। এতে দিনে দিনে বাড়তে থাকে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। স্যারের একটা বাণী ছিলো “যখন অন্তত ১০ জন মানুষ কোন মেম্বারকে ট্যাগ দিবে তখন বুঝতে পারবেন তৈরি হচ্ছে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং”। বিভিন্ন পোস্ট কমেন্টে মেম্বাররা আমাকে ট্যাগ ও ম্যানশন দিতো, এতে অনেক আনন্দিত ও উৎসাহিত হতাম।
বর্তমানে শাউন আরা জেসমিন মূলত হস্তশিল্প মানে হাতের কাজের শাড়ি, থ্রি পিচ,পাঞ্জাবী, রাজশাহীর বিখ্যাত সিল্ক, মসলিন,হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি,গরুর ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তেল,কুমড়ো বড়ি ও বেবি ড্রেস নিয়ে কাজ করছেন।
করোনা সময়ে তার সেল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত আমি ৭ লাখ প্লাস সেল করেছি।
তিনি স্বপ্ন দেখেন বাড়ীর সামনে ৬ কাঠা জমি জুড়ে থাকবে নিজের ফ্যাক্টরি ও শো-রুম। দেশের ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়াবে আরএস ক্লোজেটের পণ্য।
চারঘাট উপজেলার কর্মহীন তরুনীরা কিভাবে এ ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হবেন? কিভাবে নিজেকে উদ্দোক্তা হিসেবে পরিচিত করে তুলতে পারবেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাউন আরা জেসমিন পত্রিকা কে জানান,
আমার মতে নিজে যে কাজে পারদর্শী সে কাজ দিয়েই অল্প পুঁজিতেই শুরু করতে পারে তরুনীরা আমি যেমন নিজে অন্যের জামাতে হাতের কাজ করে সেই মুজুরীর টাকা দিয়ে আস্তে আস্তে শুরু করি আমার বিজনেস। শুরুতে আমার কোনো পুঁজি ছিল না। আমি সেলাই করতে পারতাম তাই হাতের কাজটাই আমি আমার সিগনেচার পণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছি।যদি কেউ রান্না করতে পারে তাহলে সে কুকিং টাকেই বিজনেস হিসেবে নিতে পারে।আমার মতে কোনো কাজই ছোট নয়। তাই নারীদের নিজের নিজের অবস্থা থেকে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী উদ্দোগ নেওয়া উচিত।।