ডেস্ক: ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সৈন্যদলে নিয়োগ দেওয়া হতো নারীদের। প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন যুদ্ধে। এরপর এই সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়। তাদেরকে শুধু প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলি সরকার।
ইসরায়েলি নারীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতেন দেশটির সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর। তারা ‘ক্যাডার’ হতে পারতেন, রান্নার কাজ করতে পারতেন, সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে কাজ করতে পারতেন, গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে পারতেন, সৈন্যদের পড়াশোনা ও শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্য দায়িত্বশীল হতে পারতেন, অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষক হতে পারতেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় কাজ করতে পারতেন এবং তারা নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারতেন।
সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছু। ইসরায়েলি নারীবাদীরা, যারা কেবল অধিকারের জন্য নয়, দায়বদ্ধতার জন্যও লড়াই করে যাচ্ছেন, তারা অনেকবার ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ‘পুরুষ’রা দায়িত্ব পালন করতে পারেন এমন পদে নিয়োগ এবং সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়ার দাবিতে তারা নানা কার্যক্রমও চালিয়ে যান।
ফলস্বরূপ নারীদের ট্যাঙ্কক্রু হিসেবে এবং বিমান চালক হিসাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়াও বিশেষ পদাতিক ইউনিট যেমন ‘কারাকাল’ ও ‘লায়ন্স অব দ্য জর্ডান ভ্যালি’ তৈরি করা হয়েছিল। ওই ইউনিটগুলোতে সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশই পুরুষ এবং বাকি সবাই নারীরা থাকতেন।
সেনাবাহিনীতে নারীদের ভূমিকা বিদেশি মিডিয়া এবং ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম; উভয়েই অত্যন্ত অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ পায়। এই জাতীয় আলোচনাগুলো লিঙ্গ সমতা দেখানোর জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়। তখন জর্ডান ও মিশরের সঙ্গে সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান রয়েছে বলে জানানো হয় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে। বলা হয়, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধে নামবে না এবং নিম্ন মানের প্রশিক্ষণ রয়েছে তাদের। ‘কারাকাল’ ইউনিটের সৈন্যদের সঙ্গে কম অস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।
নারীরা রয়েছে এমন ইউনিটগুলোতে পুরুষদের বা নারীদের এক সঙ্গে বিছানায় যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো ধরনের সংহতি রোধ করা। কিন্তু তারা থেমে থাকেননি। এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৮ থেকে ২০ বছরের তরুণরা সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করছেন, মরুভূমিতে একাই কাজ করেন। এমন সুযোগ পেয়ে তরুণ-তরুণীরা নিজেরাই অবশ্যই খুব খুশি। কিন্তু কোনো ধরনের শৃঙ্খলা ছিল না। আর তরুণ-তরুণীরা মেলামেশা শুরু করেন অবাধে।
এদিকে, আইডিএফ নিয়মিত যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা রয়েছে। তারা এক ধরনের ‘ডগস অব ওয়ার’। তারা আসলে চায় না সেনাবাহিনীতে নারীরা নিয়মিত কাজ করুক। যুদ্ধ ইউনিটে নারীদের ভর্তি এবং নারী ক্রুদের মধ্যে সামরিক সরঞ্জাম গ্রহণের কাজে তীব্র বিরোধিতা করছে আইডিএফ।
যদি একজন নারীকে পদাতিক সদস্য বা ট্যাঙ্কার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে নিজের শারীরিক গঠনের কারণে দুর্বলতম পুরুষ সৈনিকের চেয়ে কম কাজ করতে পারবে বলে মত আইডিএফের। নারীরা কম পরিমাণে গোলাবারুদ বহন করতে পারবেন, দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, আর বেশি বেশি চোট পাবেন। তাদের শরীরে ছেঁড়া-কাটাগুলো ঠিক করে তুলতে অনকে কঠিন হয়ে যাবে। যুদ্ধে একজন শক্তিশালী মানুষও কুকুরের মতো ক্লান্ত হয়ে ওঠবে। আর একজন নারী এই ধরনের কাজ করতে পারবেন না। তাই যুদ্ধে অংশগ্রহণে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়।
যুদ্ধে ইসরায়েলি নারীদের নিষিদ্ধ করা নিয়ে আইডিএফের পক্ষে থেকে আরো কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম সামরিক তত্ত্ব জানেন। মহিলাটি কীভাবে একটি ট্যাঙ্ক শুরু করতে বা ফায়ার করতে হবে তা জানবেন, তবে যুদ্ধের ময়দানে ইউনিটগুলির মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে তার কোনও ধারণা থাকবে না, যা আরবদের উপর ইহুদিদের প্রধান সুবিধা।
নারীরা জানেন কিভাবে ট্যাঙ্ক থেকে গুলি করা হয়। তবে যুদ্ধের ময়দানে ইউনিটগুলোর মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে নারীদের কোনো ধারণা নেই। আরবে দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে এই বিষয়টিই ইসারেয়েলিদের বড় সুবিধা। সূত্র: বুলগারিয়ানমিলিটারি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy