ভুক্তভোগীরা জানান, দুই একরের পুকুরটিতে সামান্য মালিকানা থাকলেও জোর খাটিয়ে পুরো পুকুরটিই দখল করে নিয়েছে প্রদীপের পরিবার। প্রদীপরা তিন ভাই প্রশাসনে চাকরি করেন। ফলে প্রভাবশালী হওয়ায় এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চায় না কেউই। এছাড়া প্রদীপের স্ত্রীর নামেও রয়েছে বেশ কয়েকটি পুকুর।
ভুক্তভোগীদের একজন বলেন, পুকুরে আমাদের জায়গা রয়েছে। এরইমধ্যে আমরা সব কাগজপত্র বের করেছি। কিন্তু এলাকায় শোনা যাচ্ছে পুকুরটি প্রদীপের পরিবার সরকার থেকে লিজ নিয়েছে। কথাটি কতটুকু সত্য তা আমরা জানি না। তবে আইনিভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রদীপের বড় ভাই রনজিত দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই কথা বলেছেন। পুকুরটি তার ভাই দিলীপ দাশের নাম লিজ নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে অনুসন্ধানে উঠে আসে- নগরীর পাথরঘাটায় স্ত্রী চুমকি দাশের নামে চার শতক জমি কিনে ‘লক্ষীকুঞ্জ’ নামে একটি বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেছেন প্রদীপ কুমার দাশ। এছাড়া মুরাদপুরে রয়েছে তার শত কোটি টাকার জমি। যা তিনি বোনের সঙ্গে প্রতারণা করে লিখিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী- নগরীর লালখান বাজারে একটি ফ্ল্যাট, কক্সবাজারে দুটি হোটেলের মালিকানা ও বেয়ালখালীতে স্ত্রীর নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের পাশাপাশি মৎস্য খামার, ভারতের আগরতলা ও অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি আছে প্রদীপ কুমার দাশের। তার স্ত্রী চুমকি দাশ পেশায় গৃহিণী হলেও দুদকে জমা দেয়া বিবরণীতে তাকে মৎস্য খামারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়- ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা
নিয়ে মৎস্য খামার শুরু করেন চুমকি। যা থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করে কিনেছেন জমি, গাড়ি-বাড়ি।
সেই বিবরণীতে চুমকির স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগরীর পাথরঘাটায় ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা মূল্যের চার শতক জমি ও জমিটিতে গড়ে তোলা এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ছয়তলা ভবন, পাঁচলাইশে এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের ছয় গণ্ডা এক কড়া এক দন্ত জমি এবং কক্সবাজারে ঝিলংজা মৌজায় ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা মূল্যের ৭৪০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। অর্থ্যাৎ, সব মিলিয়ে তার স্থাবর সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে তিন কোটি ৫৯ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা।
এছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইভেটকার, সাড়ে ১৭ লাখ টাকা মূল্যের মাইক্রোবাস এবং ব্যাংক একাউন্টে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা দেখানো হয়েছে।
এর আগে, প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালের জুন মাসে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্যও পান দুদক কর্মকর্তারা। এরপর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হলে একই বছরের মে মাসে দুদকে বিবরণী জমা দেন তারা। একই বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে তাদের সম্পদের বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তবে বিষয়টি সেখানেই থেমে যায়। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুতে প্রদীপ কুমার দাশ প্রত্যাহার হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে পুনরায় অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।