উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
একনেকে অনুমোদনের চার বছর অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র জায়গার অভাবে নড়াইলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাজ শুরু হয়নি। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জায়গা সংক্রান্ত অনেক জটিলতার কারণে কলেজের কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হতে পারে।
একইসঙ্গে পাশ হওয়া দেশের খুলনা, বরিশাল, রংপুর এবং নওগাঁ জেলায় এ প্রকল্পের প্রযুক্তি কলেজগুলোর কাজ চলমান থাকলেও নড়াইলে এখনো জমি অধিগ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় নড়াইলের সচেতন মহল হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একনেকে ৩৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে এটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। জেলা প্রশাসন কলেজটির জন্য নড়াইল-লোহাগড়া সড়ক সংলগ্ন মালিবাগ এলাকায় সীমাখালী ও বোড়াবাদুরিয়া মৌজায় আট একর জমি নির্ধারণ করলেও স্থানীয় জমির মালিকরা এখানে কলেজ নির্মাণের বিরোধিতা শুরু করলে কাজটি পিছিয়ে। শহরের অন্য কোনো প্রান্তে ভালো জায়গা না পাওয়ায় সবশেষে এখানেই কলেজটি নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
নড়াইল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল হক জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একনেকে এ কলেজটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কলেজটির নাম দেন ‘প্রকৌশলী খান হাতেম আলী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’। জমি অধিগ্রহণে দেরি হওয়ায় এ কলেজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চার কোটি ৬৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। জুলাই মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। এর পর পর্যায়ক্রমে টেন্ডার এবং কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হবে।
তিনি জানান, একইসঙ্গে অনুমোদন হওয়া দেশের অন্য চারটি জেলায় প্রযুক্তি কলেজগুলোর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজের মধ্যে পূর্ত (অবকাঠামো) এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ২৬৫ কোটি টাকা। ক্লাস রুম ও অফিস কক্ষের চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র, হোস্টেল, ফার্নিচার, ডেকোরেশন, ল্যাবরেটরি, গাড়ি ইত্যাদি বাবদ খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা। প্রথমাবস্থায় এখানে নির্মিত হবে বহুতলবিশিষ্ট প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রত্যেকটি ৫০০ সিটের দুটি ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল, একাধিক ল্যাবরেটরি, মসজিদ, প্রিন্সিপাল ও স্টাফ কোয়ার্টার, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও সীমানা প্রাচীর ইত্যাদি। প্রথমাবস্থায় এখানে চারটি বিভাগ নিয়ে কলেজটি চালু হবে। বিভাগগুলো হলো সিভিল, ম্যাকানিক্যাল, ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং।
১৯৬৮ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নড়াইল শহরের বরাশোলা এলাকার কৃতী সন্তান হাতেম আলী খানের নামে এ প্রযুক্তি কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে। তার দুই ছেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও তাত্তি¡ক বুদ্ধিজীবী বর্তমানে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য, লেখক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হায়দার আকবর খান রনো এবং ধারার বুদ্ধিজীবী ‘বাংলাদেশ-কিউবা মৈত্রী সমিতির সহ-সভাপতি এবং গণসংস্কৃতি কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হায়দার আনোয়ার খান জুনো। তাদের নানা ছিলেন নড়াইলের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক সৈয়দ নওশের আলী।
১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ দেশের ষষ্ঠ প্রাচীন। ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলও এই জনপদের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের অন্যতম প্রাচীন শিবশংকর বালিকা বিদ্যালয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকা নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ। নড়াইলে এ ইঞ্জিনিয়ারি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হলে কিছুটা হলেও জেলাবাসীর দাবি পূরণ হবে।
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, নড়াইল-২ আসনের এমপি এবং জেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটির জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমাবস্থায় জমি নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। এখন আর সে সমস্যা নেই। জমির মালিকদের ৭ ধারামতে নোটিস দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী এক মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হবে এবং পর্যায়ক্রমে কলেজের কাজ এগিয়ে যাবে। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..