সেই তরতাজা যুবক আজ বয়সের ভারে ন্যুজ। শরীর জুড়ে ভর করেছে রোগ । এখন আর মুখ দিয়ে জয়বাংলা শ্লোগানও দিতে পারেন না। কারণ তিনি কথাও বলতে পারেন না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কাধেঁ রাইফেলের পরিবর্তে এখন পরের কাঁধে ভর করে চলতে হয় তাকে।
আর্থিক অনটনে তিনি সঠিকভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
পারিবারিকসূত্রে জানাগেছে, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শুকুর ১৯৪৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান বয়স ৭৩ বছরের বেশি। পিতার নাম মরহুম আরিফ জমাদ্দার। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, চার ছেলে ও দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। দুটি ছেলে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরী করেন। একটি মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন।
এই পরিবারটির সম্বল মাত্র ৯ শতকের ওপর দুটি টিনের ঘর। সেখানে তিনি স্ত্রী, অবিবাহিত ছোট মেয়ে ও দুটি ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। ছোট ছেলে এখনও পড়ালেখা করছে। সেজো ছেলে শাহীন জমাদ্দার বলেন, আমাদের বসতবাড়ির জমি ছাড়া কিছুই নেই। সরকার প্রদত্ত ১২ হাজার ভাতার টাকা দিয়েই আমাদের সংসারের খরচ চালাতে হয়। আমি প্রতিবন্ধী। কিছুদিন দর্জির কাজ করেছি। কিন্তু সেখানে রোজগার একেবারেই কম। আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি চাকুরীর জন্য বিভিন্ন দপ্তরে বহু ঘুরেও চাকুির হয়নি। চাকুরীর বয়স শেষের দিকে। একটি চাকুরি হলে আমার অসুস্থ্য বাবা মা ও ভাই বোনদের নিয়ে কোন রকম বেঁচে থাকতে পারতাম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শুকুরের স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন ,‘ আমি ও আমার স্বামী দুজনেই অসুস্থ। বয়সের সাথে সাথে আমার স্বামীর শরীরে রোগব্যাধি যেন মাকড়সার জালের মতো বিস্তার করেছে। মাঝে মধ্যে চিকিৎসার জন্য যশোর ও খুলনায় নিতে হয়। সরকার কর্তৃক ১২ হাজার ভাতার টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। চিকিৎসার জন্য জন্য ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। তাই ভাতার টাকা থেকে ঋনের টাকা কেটে নিচ্ছে। বর্তমানে খুবই কষ্টে ছেলে মেয়ে নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ অনুদান দিতো তাহলে আমার স্বামীর সুচিকিৎসা করাতে পারতাম।’
লোহাগড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হামিদ বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শুকুর দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। মুখ দিয়ে এখন আর কথা বলতে পারেন না। তাঁর সুচিকিৎসা প্রয়োজন। মহান এই বিজয়ের মাসে সহযোদ্ধা আব্দুস শুকুরের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানাই। পাশাপাশি আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে এই বীরের সন্তানদের বিশেষ বিবেচনায় চাকুরী দেয়ার দাবি জানান।
নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘ বর্তমান সরকার আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছেন। অস্বচ্চল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন, ভাতা বৃদ্ধি করেছেন। অসুস্থ্য এই বীরমুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য বিশেষ অনুদানের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সহযোগিতার করা হবে।
Leave a Reply