একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ে কাঁচা চা পাতার মূল্য ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সন্তোষজনক নির্ধারণ করা না হলে দূর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এখানকার চা শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন।
রবিবার ২৮ জুন পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, প্রতি মৌসুমে ১৫টি চা নিলাম বাজারের গড় মূল্যের উপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৪ টাকা। পরবর্তী সভা না হওয়া পর্যন্ত ধার্য্যকৃত মূল্যে কাঁচা চা পাতা ক্রয় অব্যাহত থাকবে। কিন্তু ১৫টি নিলাম সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই মূল্য নির্ধারণ কমিটিকে অগ্রাহ্য করে চা কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে একতরফা ভাবে গত ২৫ জুন থেকে ১২ টাকা কেজি দরে ক্রয় শুরু করেছে।
টি গার্ডেন এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন আরও বলেন, এই সিন্ডিকেট মূল্য হ্রাসের পাশাপাশি নানা অজুহাতে মনগড়া ও মর্জিমাফিক চা চাষীদের সরবরাহকৃত কাঁচা চা পাতার ওজন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে মূল্য প্রদান করছে। ফলে চা বাগান মালিক/ চা চাষীরা উৎপাদন খরচের অনেক কম মূল্যে কাঁচা চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে চাষীরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অশুভ তৎপরতা পঞ্চগড়ের সম্ভাবনাময় চা শিল্পকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পঞ্চগড়ের চা শিল্পের সংকট এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চা চাষী আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, পঞ্চগড়ের চা শিল্পের সংকট নিরসন ও পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম মার্কেট চালু করতে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করা হবে। কারখানায় সরবরাহকৃত নিজের উৎপাদিত কাঁচা চা পাতা কর্তন করা হয়েছে। চা বোর্ডের মতে এক কেজি কাঁচা চা পাতা উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ১৭ টাকা। সেখানে কর্তন করে মূল্য দাঁড়ায় ৫ থেকে ৭ টাকা।
টি গার্ডেন এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি এ বি এম আখতারুজ্জামান শাহজাহান বলেন, কারখানা মালিকরা ১২ টাকা কেজিতে চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য করছে চা চাষিদের। এছাড়া বিনা কারণে ২০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে। অকশন মার্কেটের দোহাই দিয়ে কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে কাঁচা চা পাতার মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন এবং সরবরাহকৃত চা পাতা কর্তন করছেন। কারখানা মালিকরা অতি মুনাফার লোভে নিম্নমানের চা উৎপাদন করায় কমমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরা বাজারে চায়ের মূল্য ঊর্ধ্বগতি।
এ সময় এসোসিয়েশনের জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি এডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিকসহ চা বাগান মালিক/চা চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।
চা কারখানা মালিকদের সংগঠনের সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, নিলাম মার্কেটে চায়ের মূল্য কমে গেছে। বাগান মালিক, চা চাষীরা বয়স্ক ও ভেজা কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করছে। কারখানা মালিকরা বাধ্য হয়ে কাঁচা চা পাতার মূল্য কমিয়েছে এবং কর্তন করছে।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন। এ নিয়ে সোমবার সভা আহ্বান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয়। পঞ্চগড় জেলায় বর্তমানে ৭ হাজার ৫৯৮ একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। প্রতি বছর চা চাষ বাড়ছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত বড় চা বাগান ৮টি ও অনিবন্ধিত বড় চা বাগান ১৮টি। ছোট চা বাগান ৮৯১টি রয়েছে। চা প্রক্রিয়াজাতের জন্য কারখানা চালু রয়েছে ১৮টি। গত মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৫ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এবার কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের নর্দার বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল-মামুন জানান, সর্বশেষ সভায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মূল্য হ্রাস করে কাঁচা চা পাতা কেনার বিষয় নিয়ে সোমবার জেলা প্রশাসক মূল্য নির্ধারণী কমিটির সভা আহ্বান করেছেন। চা বোর্ড নিবন্ধিত চাষিদের স্বল্পমূল্যে চা চারা দিচ্ছে। চা বাগান পরিদর্শন করে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। আমাদের এটুআই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক “দুটি পাতা একটি কুড়ি” নামে মোবাইল অ্যাপস রয়েছে। সেখান থেকে চা সম্পর্কে যেকোন তথ্যের পরামর্শ পাওয়া যাবে।