সৌমেন সরকার
পণ্য রপ্তানির আড়ালে ৩৭৯ কোটি টাকা পাচার করেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। জাল নথি তৈরি করে ১৭৮০টি চালানের বিপরীতে বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ এই টাকা পাচার করা হয়েছে।জালিয়াতি করে অর্থ পাচারকারী এই চার প্রতিষ্ঠান হলো—সাবিহা সাইকি ফ্যাশন, এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন এবং ইলহাম ট্রেডিং করপোরেশন।মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ঢাকার কাকরাইলে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ফখরুল আলম এ তথ্য জানান।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ভাষ্য, এসব প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করেছে। তবে পণ্যের রপ্তানি মূল্য (বৈদেশিক মুদ্রা) দেশে আসেনি। রপ্তানি সম্পন্ন ১৭৮০টি চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন। এর ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ১০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৭৯ কোটি টাকা।কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ঢাকার দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকায় সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি দলিলাদি জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করেছে। তবে পণ্যের রপ্তানি মূল্য (বৈদেশিক মুদ্রা) দেশে আসছে না।
‘শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি দল গত ৩১ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে রপ্তানি জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পায়। তখন ৭টি ৪০ ফিট কন্টেইনারে রক্ষিত নয়টি পণ্যচালান পরীক্ষা করা হলে সেখানে ঘোষণা বহির্ভূত একাধিক পণ্য পাওয়া যায়।’কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক জানান, রপ্তানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী টিশার্ট এবং লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও পরীক্ষায় বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, লেগিন্স, শার্ট ও শালসহ ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য পাওয়া যায়।
ফখরুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালককে প্রধান করে ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।’‘তদন্তে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন ছাড়াও এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন এবং ইলহাম ট্রেডিং করপোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংক্রান্ত জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটিত হয়। পরে প্রতিষ্ঠানসমূহের রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদি চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়।’কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘চিঠির জবাবে তখন ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিতে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ তারা জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি সম্পন্ন করেছে। আর সে জন্য রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ উপায়ে দেশে আসার সুযোগ নেই। মানে এখানে অর্থপাচার হয়েছে।’
এই চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ছাড়াও এরকম আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এরূপ কার্যক্রমের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলমান রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে তথ্য কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।