আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পরমাণু দিয়ে অস্ত্র নয়, উৎপাদন হবে বিদ্যুৎ: প্রধানমন্ত্রী
পরমাণু দিয়ে অস্ত্র নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শান্তি স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১০ অক্টোবর) পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লি স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় নিরাপত্তা বজায় রেখেই গড়ে তোলা হচ্ছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, এখানকার পরমাণু বর্জ্যও ফেরত নিয়ে যাবে রাশিয়া। অনেকে না বুঝে সমালোচনা করছেন, যা অমূলক বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘হৃৎপিণ্ড’ হিসেবে পরিচিত রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র। এটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র, এর মধ্যেই শক্তি উৎপাদন হবে, যা কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হবে বিদ্যুৎ।
এর আগে রূপপুরের কর্মকর্তারা জানান, রূপপুরে ইউনিট–১–এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্যদিয়ে এ ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ বলা যায়। এ যন্ত্রের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি রাশিয়ার জাতীয় টেলিভিশন আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের বিভাগীয় প্রধান (প্রশাসন ও অর্থ) অলক চক্রবর্তী বলেন, চাইলেই চুল্লি স্থাপন করা যায় না। এর জন্য আইইএ, রাশিয়া ও বাংলাদেশের নিমন্ত্রণকারী সংস্থা এক মাস ধরে সবকিছু যাচাই করেছে। নিরাপদভাবে প্রাথমিক কাজ শেষে সফলভাবে চুল্লি স্থাপিত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধানতম মাইলফলক অর্জন করল রূপপুর। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের পথে বড় অগ্রগতি এটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাশিয়া থেকে রূপপুরে আসেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লোশকিন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যে রূপপুরে রয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে যার প্রতিটির ক্ষমতা ১২শ’ মেগাওয়াট।
রাশিয়া থেকে এ চুল্লি দেশে আসে গত বছরের অক্টোবরে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার (আইইএ) মান অনুসরণ করে এ চুল্লিপাত্র স্থাপন করা হচ্ছে।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় রূপপুর কর্তৃপক্ষ। আর ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।
রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন। এটি রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে।
রূপপুর কর্তৃপক্ষ বলছে, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। এগুলো সময়মতো প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানো হচ্ছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব যন্ত্রপাতি দেশে চলে আসবে। দেশেও প্রতিটি কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। দিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার লোক কাজ করার কথা থাকলেও রূপপুরে ২৫ থেকে ২৬ হাজার কর্মী কাজ করছেন প্রতিদিন।
রূপপুরে বর্তমানে সাড়ে চার হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। তাদের অধিকাংশই রাশিয়ার নাগরিক। এ ছাড়া ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভারতেরও কিছু দক্ষ প্রকৌশলী আছেন রূপপুর প্রকল্পে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশের ১ হাজার ৪২৪ জনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে তাদের রাশিয়া পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy