এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় পরীক্ষা বা রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে বোর্ডে জমা দেয়া প্রায় চার শ’ কোটি টাকা ফেরত চান অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। অন্য দিকে বিভিন্ন খাতে এই টাকা খরচ হয়ে গেছে এমন তথ্য জানিয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলো বলছে তাদের হাতে কোনো টাকা জমা নেই। কাজেই শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তবে অভিভাবকদের দাবি পরীক্ষাই যেহেতু বাতিল হয়েছে কাজেই পরীক্ষা ফি হিসেবে টাকা নেয়ারও কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা ফি হিসেবে জমা দেয়া টাকা ফেরত চান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার করোনার কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ইতোমধ্যে বাতিল হয়েছে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ফরম পূরণ করা সব পরীক্ষার্থীকে অটো পাস ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে অনেকে জানতে চাইছেন পরীক্ষাই যেহেতু হলো না সে ক্ষেত্রে ফরম পূরণের টাকা তাদেরকে ফেরত দেয়া হবে কি না?
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর দেশের প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা করে পরীক্ষার ফি আদায় করা হয়েছে। অনেক কলেজ আবার বোর্ডের নির্দেশনার বাইরেও মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেছে। সেই হিসাবে পরীক্ষার্থীরা সাড়ে তিন থেকে চার শ’ বিশ কোটি টাকা বোর্ডে জমা দিয়েছে; কিন্তু পরীক্ষাই যেহেতু হলো না সে ক্ষেত্রে অভিভাবকরা এই টাকা এখন ফেরত চাইছেন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য গত বছরের নভেম্বরে কেন্দ্র ফি-সহ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের দুই হাজার ৫০০ টাকা, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীদের ১ হাজার ৯৪০ টাকা করে পরীক্ষার ফি দিতে হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানে কেন্দ্র ফি (ব্যবহারিক ফি-সহ) ৮০৫ এবং মানবিক ও বাণিজ্যে ৪৪৫ টাকা করে ফি নেয়া হয়েছে।
যদিও কেন্দ্রের ফি থেকে ট্যাগ অফিসারের সম্মানীসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে বলা হয় কিন্তু যাদের ব্যবহারিক বিষয় আছে তাদের টাকার সাথে প্রতি পত্রের জন্য আরো ২৫ টাকা করে দিতে হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহারিক উত্তরপত্র মূল্যায়নে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত পরীক্ষকের জন্য পত্রপ্রতি ২৫ টাকা করে কেটে নেয়া হয়েছে।
এই অর্থের বাইরেও ফরম পূরণের জন্য একজন নিয়মিত শিক্ষার্থীকে প্রতি পত্রের জন্য ১০০ টাকা, ব্যবহারিক প্রতি পত্রের জন্য ২৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদ ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট/গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি পাঁচ টাকা দিতে হয়েছে। বাস্তবে রাজধানীর অনেক কলেজ বোর্ডের ধার্য করা ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে। বর্তমানে এসব অর্থ ফেরত চান পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অভিভাবকদের অনেকে জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা যেহেতু বাতিল হয়েছে সে ক্ষেত্রে আদায়কৃত ফি ফেরত দেয়া প্রয়োজন। এটা ফেরত পেলে অনেকেরই সুবিধা হবে। বিশেষ করে করোনার কারণে অনেকেরই আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।
পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা ফি ফেরত দেয়া প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে জানান, আমরা ফি হিসেবে যে টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিই সেই টাকা খরচেরও নির্দিষ্ট খাত আছে। পরীক্ষা বাতিল হলো এখন; কিন্তু আমাদের খরচ তো শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কাজেই পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি ফেরত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও জানান, আমাদের পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি ছিল গত এপ্রিলেই। কাজেই ওই সময়েই আমাদের বেশির ভাগ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এ ছাড়া পরীক্ষা নেয়ার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্র (ওএমআর সিট) তৈরি, পরীক্ষার সময়সূচিসহ সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। এতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই এসব কাজ করতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি।
তিনি বলেন, জেএসসি-ডেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। করোনা পরিস্থিতির উৎকণ্ঠা নিয়ে ছয় মাস পর পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়। করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই পরীক্ষা না নিয়ে অটো পাসের দাবি তুলেছিল। অভিভাবকদেরও কেউ কেউ পরীক্ষা না নেয়ার পক্ষে মত দেন।