লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বরাদ্দকৃত প্রায় দেড় কোটি টাকার এমএসআর ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে।
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে গত মে মাসের শেষের দিকে টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ।জুনের প্রথম সপ্তাহে টেন্ডার আহবান।
ঠিকাদারের সাথে গোপন রফাদফার মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেয়ার ফঁন্দিফিকির কাজে জড়িত আছেন খোদ হাসপাতালের অনেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,
এর আগে সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে মেডিকেল এন্ড সার্জিক্যাল রিকোয়ারমেন্ট এমএসআর ক্রয় করা হত।তাতে একেকটি জেলায় ৫/৭ টা এমন কী ৮/১০ টা উপজেলার জন্য এক সাথে ৮/১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কারণে সেই মোটা অঙ্কের বরাদ্দে অসাধু কতিপয় কর্মকর্তা ভাগ বসাতেন।
এসব বিষয় বুঝতে পেরে গত অর্থ বছর থেকে প্রতিটি হাসপাতালে আলাদাভাবে বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতা,কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি ও অর্থ ছাড়ের কোড দিতে বিলম্বের কারণে মূলতঃ অপচয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী মনে করেন।করোনাকে পুঁজি করে অর্থ বছরের শেষে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সঠিক যাচাই বাছাই না করে তড়িঘড়ি করে টেন্ডার আহবান একটি জলন্ত ও বাস্তব উদাহরণ।এমন অনিয়মের দায়ভার কে নিবে?
পাটগ্রাম হাসপাতালের প্রধান সহকারী ও হিসাব শাখা থেকে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পাটগ্রাম ৫০ শয্যা হাসপাতালের এমএসআর ক্রয়ের জন্য ৮১ লাখ ৪৪ হাজার ৫ শ টাকা এবং ইডিসিএল বাবদ ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে।১০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে দহগ্রাম ২০ শয্যা হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ দেয়া ১১ লাখ টাকা।
এসব বরাদ্দ জুনের অনেক আগে দেয়া হলেও কৌশলগত কারণে অন্য সব হাসপাতালের পরে পাটগ্রামে মে মাসের শেষে টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ করে জুনের প্রথম সপ্তাহে টেন্ডার আহবান করা হয়।সময় সুযোগ থাকলে হয়তো ভাল করে যাচাই বাছাই করা যেত।অর্থ বছর শেষ হলে বরাদ্দ ফিরে যাবে এমন আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করে সব টাকা উত্তোলন করে জায়েজ করার জন্য প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। ঔষধ ক্রয় দেখানো হয় ৪২ লাখ টাকা। এমএসআর ৬ টি প্যাকেজের সিডিউল ক্রয়ে হাসপাতালের দু’একজন অ’সাধু কর্মকর্তা- কর্মচারী মিলিত হয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী লালমনিরহাটের আলেয়া কর্পোরেশনের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেন। ঠিকাদারের ভাই টিটোন সরেজমিন কাজ করলেও আসল ঠিকাদার তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম থাকেন ঢাকায়। স্বাস্থ্যবিভাগে তার উঠাবসা। কাজ বাগিয়ে নেয়া তার কাজ।
তার সাথে যোগাযোগ করার করলে সংযোগ মিলেনি।
এদিকে,জুনের শেষে তড়িঘড়ি এ টেন্ডার কাজের ঠিকাদার এখন পর্যন্ত অনেক মালামাল দিতে পারেনি। অথচ নতুন আরও একটি অর্থ বছরের দু’মাস অতিবাহিত হতে চলছে।
অনেকে ধারনা করছেন,আগের অর্থ বছরের বরাদ্দে এমএসআর ক্রয় হতে না হতেই নতুন অর্থবছরের টেন্ডার আহবান হবে।আগের অর্থবছরের বরাদ্দে অনেক সামগ্রী ক্রয় না করে শুধু খাতা কলমে ক্রয় দেখানোর পরিকল্পনা আছে।
হাসপাতালের প্রধান সহকারী সায়েমা নুর খালেদা আক্তার রিনা বলেন,টেন্ডারে কোন অনিয়ম হয়নি।যথা নিয়মে এমএসআর ক্রয় করার কাজ চলমান। অনেক মাল এখনও ঠিকাদার জমা দেননি বলে তিনি স্বীকার করেন।
পুরো হাসপাতালের কর্তা বাবুরা জানেন,১০% কমিশনে কাজ পান আলেয়া কর্পোরেশনের প্রোঃ নজরুুল ইসলাম বলে অভিযোগ ওঠেছে। ঠিকাদার সঠিক সময় বগুড়া ঠনঠনিয়া থেকে সরকারি ঔষধ কিনতে না পারায় ইডিসিএল বাবদ প্রায় ৮ লাখের অধিক টাকা ফেরত গেছে বলে জানা গেছে।
এমএসআর এর ৬ টি প্যাকেজের মধ্যে বিধিমোতাবেক মোট বরাদ্দের ৭০% টাকা সরকারি ঔষধ কেনার খাতে ব্যয় হওয়ার কথা অথচ তা মানা হয়নি। ৬ টি প্যাকেজের অন্যতম ঔষধ ক্রয় বাদে যন্ত্রপাতি ক্রয় করার কথা তা এখনও করা হয়নি। দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে ওটি।সিজার করার কোন যন্ত্রপাতি নাই বলে সিজার করা হয়না।
এরপর এখনও চোখে পরেনি নতুন লিলেন সামগ্রী।বেড শিট নাই,মশারী দেয়ার বালাই নেই।বালিশ ও বালিশ কাভার দেয়া হয়নি রোগীদের।গতকাল শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়,নতুন কোন ম্যাট্রেস কেনা হয়নি। ম্যাট্রেস, ম্যাট্রেস কাভার,
কম্বল, গাউন কোন কিছু তেমনটা আজও পরিবর্তন দেখা যায়নি।
গজ ব্যান্ডেজ তুলাসহ সার্জিক্যাল সামগ্রী কিছু কেনা হয়েছে।
এদিকে,মেডিকেলের ল্যাব ও অপারেশন থিয়েটার ওটিতে কেমিকেল অভাব দেখা দিলেও এখনও ক্রয় করার নাম নেই। হবে হবে করে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। আসবাবপত্র ক্রয়ে চলছে তুুুমুুল কান্ড!
একটি স্টিল আলমিরা ১৬ হাজার ৫ শ টাকা ধরা হয়েছে। ৮/১০ টি আলমিরা কেনার কথা থাকলেও পুরাতন গুলো রং করার কথার গোপন খবর জানা যাচ্ছে। চেয়ার টেবিল লাইট ফ্যান আলমিরাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নামে মাত্র ৫০ শয্যা হলেও আগের ৩১ শয্যায় চলে কার্যক্রম। ১৯ শয্যার নতুন ভবনটি থাকে সার্বক্ষণিক তালা দেয়া।
দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা হাসপাতালটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর উপহার অথচ সেখানে ইনডোর চিকিৎসা বলতে কিছু নেই।
আউট ডোর চিকিৎসা নেই, এমার্জেন্সীতে টুকিটাকি চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও মাঝেমধ্যে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা ফিরত চলে যায়।দহগ্রাম হাসপাতালের চেয়ে ক্লিনিক দুটোতে ভাল চিকিৎসা পায় সেখানকার লোকজন।
দহগ্রাম হাসপাতালটি নামে মাত্র ১০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে আরও ১০ বেড যুক্ত করে ২০ শয্যা করা হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও লোকবলের অভাবে সরকারের বরাদ্দগুলো অপচয় হচ্ছে। দহগ্রামের জন্য আলাদা বরাদ্দকৃত ১১ লাখ টাকার ঔষধ মালামাল এখন পর্যন্ত ক্রয় করার সত্যতা মিলেনি।