1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
পার্বত্যচট্টগ্রামে ইউপিডিএফের চাঁদাবাজিতে বন্ধ বিভিন্ন সড়ক ও ব্রীজের নির্মান কাজ
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কসবায় বিএসএফের এলোপাথাড়ি গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত! চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৩ হাজার পিস ইয়াবা সহ আটক ১ঃ মাদক পরিবহনে নিয়োজিত মোটর সাইকল জব্দ ট্রেনঃ পৃথিবীর সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ঘাতকের রহস্য এবং “হ্যাবিচুয়াল কনফিডেন্স” চট্টগ্রামে ১৪ পিছ বিদেশী স্বর্নের বার সহ আটক ১ সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ছেড়ে দিয়েছে আদালত আওয়ামীলিগের সময়ে আওয়ামীলিগের নেতা , বিএনপির সময়ে বিএনপির নেতা সেজে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা ! নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এলজিইডি কুমিল্লার মতবিনিময় কলেজ ছাত্র আব্দুল আলীম হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ! সাভারে বিরুলিয়ায় নিহত নারী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা : স্বামী গ্রেফতার । ফেসবুকে মানহানিকর লেখা প্রচারের অভিযোগ এনে এক কোটি টাকার মানহানি এবং হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পার্বত্যচট্টগ্রামে ইউপিডিএফের চাঁদাবাজিতে বন্ধ বিভিন্ন সড়ক ও ব্রীজের নির্মান কাজ

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১.২৫ এএম
  • ১৯১ বার পঠিত

পার্বত্যচট্টগ্রাম ব্যুরোঃ 

চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশেও অপরাধ ঘটেই চলছে পাহাড়ে। এখানে বাধ্য করা হয় চাঁদা দিতে, না দিলেই নেমে আসে অত্যাচার। দাবি করা চাঁদার টাকা না দিলে মালামাল লুট করা ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ক্রমাগত অভিযানের মুখে কৌশল পরিবর্তন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। যার সবটুকুর খবর পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছায় না।

জানা যায়, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ও শান্তিচুক্তির বিরোধীতাকারী সংগঠন প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের নির্মান ও পুনঃনির্মান কাজ। এতে করে যেমনি ঠিকাদাররা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারছেন না নির্মান কাজ, তেমনি থমকে যাচ্ছে পাহাড়ের উন্নয়ন কাজও। মুখ থুবড়ে পড়ছে পাহাড়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।

একটি সূত্র বলছে, পাবর্ত্য তিন জেলার বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা বছরে কমপক্ষে ৪শ’ কোটি টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হন। এর মধ্যে জেলা পরিষদের উন্নয়ন বাজেট, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, ইউনিয়ন পরিষদ, পার্বত্য মন্ত্রনালয়, উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প ছাড়াও রয়েছে নানা উন্নয়নমুখী প্রকল্পের কাজ।

তবে সম্প্রতি, পাহাড়ের প্রধান আঞ্চলিক মহাসড়ক ছাড়াও উপজেলা শহরগুলোর আন্তঃ সংযোগ সড়ক, ব্রীজ, কালবার্টসহ সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে ইউপিডিএফ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউপিডিএফের চাহিদাকৃত চাঁদার টাকা দিতে না পারায় জেলার গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের নাক্রাইপাড়ায় ৫০মিটার একটি আরসিসি গার্ডার ব্রীজ, একই ইউনিয়নে ৮৮ মিটারের আরেকটি আরসিসি গার্ডার ব্রীজ এবং ৯০ মিটারের আরো একটি আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া,  জেলার দীঘিনালা-ভাইবোনছড়া সড়কের বৌদ্ধ পাড়া আলমগীরটিলায় সড়কে ১৫শ ২০ মিটারের একটি সড়কের কাজসহ একই সড়কে ২হাজার ৩০মিটারের আরো একটি কাজ বন্ধ করেছে দিয়েছে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।

চাঁদা সংগ্রহকারী এক ব্যক্তি জানান, আগে থেকেই নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন সড়কের নির্মানকাজে যুক্ত ঠিকাদারদের কাছে নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদার দাবিতে মুঠোফোনে কিংবা চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেন তারা। নির্ধারিত সময়ে চাঁদা না পেলে দলের লিডারদের নির্দেশ মোতাবেক কাজ বন্ধ করে দেন তারা।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাবিকৃত চাঁদা না দিলে নিরস্ত্র বাঙালিদের দিনদুপুরে গুম করে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এসব সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা। শুধু তাই নয় পাহাড়ে বসবাসকারী নিরীহ উপজাতিরাও রেহাই পাচ্ছে না এদের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে। তাদের কথা মতো চাঁদা না দিলে কিংবা তাদের মনোনীত প্রার্থী বা কারবারিদের (স্থানীয় জনপ্রতিনিধি) কথা মতো না চললেই তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

চাঁদা না দিলে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মালিক- চালক- হেলপারদের মারধর, ব্যবসায়ীদের অপহরণ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হলেও এই নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। অভিযোগ না পেলে প্রশাসনও মাথা ঘামায় না।

জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলায় প্রত্যেকটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চাঁদা দিতে হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-সন্তু লারমা), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মানবেন্দ্র লারমা), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-প্রসিত), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-ডেমোক্রেটিক) নামক পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে। পাহাড়ি এই চারটি আঞ্চলিক সংগঠনের কাছে জিম্মি পুরো পার্বত্যবাসী। শুধু সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নয়, জনজীবনের প্রত্যেকটি স্তরেই তাদের দিতে হয় চাঁদা।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে পাহাড়ি প্রত্যেকটি সংগঠন গড়ে ৫ শতাংশ হারে চাঁদা দাবি করে, তবে যার থেকে যতটুকু পারে আদায় করে নেয়। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ছাড়া সমাজের প্রত্যেকটি স্তরেই চাঁদা দিতে হয়ে পাহাড়ি সংগঠনগুলোকে।

সশস্ত্র সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজির বিষয়ে ভুক্তভোগীরা ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। চাঁদাবাজির শিকার দু’জন ব্যবসায়ী দৈনিক খাগড়াছড়ির সঙ্গে কথা বলেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে। তাও জেলা শহর থেকে অনেক দূরে এক পাহারের ওপর। তাদেরই একজন বালু ও কংকর ব্যবসায়ী জানান, একবারই চাঁদার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, ফলাফল হিসেবে তার কংকর ও বালু বোঝাই ট্রাক আটকে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরে টাকার বিনিময়ে সে ট্রাক ছাড়াতে হয়। এছাড়া ব্যবসায়ীরা কোথায় কি করেন না করেন এসব সকল তথ্য সন্ত্রাসীদের কাছে থাকায় কেউ ঝুঁকি নিতে চাননা বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।

আরেক ঠিকাদার জানান, চাঁদা না দেয়াতে একবার শ্রমিকদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্ধারিত কমিশনের টাকা না দিলে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে, চাঁদার টাকা দেয়ার পর সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে দেয়া হয় ডকুমেন্ট। এরপরই মেলে কাজের অনুমতি।

অস্ত্রধারী দলের কাছে সবাই জিম্মি বলে জানান রাজনীতিবীদরা। জেলা আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সম্পাদক বলেন, ‘পাহাড়ে শস্য উৎপাদনের পর বাজারে বিক্রি করতে আসলেও চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে অনেকটা বাধ্য করা হয়। সড়ক নির্মান প্রকল্পগুলোতে সরকারী দপ্তর থেকে ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও কাজ শুরু করা যায়না, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে চাঁদা দিতেই তবে কাজ শুরু করার জন্য টোকেন নিতে হয়, এরপর কাজ করতে হয়। তা না হলে গুম, খুনের মতো ঘটনাও ঘটে নিয়মিত।

পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে ভয়ে অনেকে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করতে চাইছেনা। মানুষকে জিম্মি করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখার সুযোগ কোনও সংগঠনের নেই। পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অপহরণ-খুন-গুমসহ আইনবিরোধী কার্যক্রম যারাই পরিচালনা করবে-তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠিকাদাররা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের ভয়ে মুখ খুলতে চান না তারা। তবে সেনাবাহিনীর তদারকিতে দ্রুত কাজ শেষ করতে চান এসব ঠিকাদাররা।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যেখানে চাঁদাবাজির নামে ভয়ভীতি, আতঙ্ক থাকবে সেখানে সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়। পাহাড়ে যারাই চাঁদাবাজির চেষ্টা করবে তাদেরকে সকল প্রশাসন মিলে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করা হবে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাকমা চাকরিজীবী বলেন, পাহাড়ি সংগঠনগুলোর কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছে পাহাড়ি চাকরিজীবীরা। একই নৃগোষ্ঠীর হওয়ায় প্রত্যেকের কাছেই চাঁদা চাইতে আসে পাহাড়ি সংগঠনের চাঁদাবাজরা। এর ফলে একজন চাকরিজীবীকে প্রত্যেক সংগঠনকে বছরে ২/৩ হাজার টাকা করে দিতে হয়। চার সংগঠনের পেছনে তাদের অনিচ্ছাকৃত খরচ দাঁড়ায় ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। একইভাবে একজন প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য ওরা চাঁদা নির্ধারণ করে বছরে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। ফলে ওই শিক্ষককেও বছরে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। আবার যদি হন বিএসসি শিক্ষক, তাহলে তার চাঁদা হবে বছরে তিন থেকে চার হাজার টাকা। অর্থাৎ চার সংগঠন মিলে বছরে ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা। তবে সবার ক্ষেত্রে অবশ্য এক রকম হয় না। যদি কোনও এলাকায় কোনও পাহাড়ি সংগঠনের আধিপত্য বেশি থাকে তাহলে তারাই চাঁদা নিয়ে যায়। অন্যরা সেখানে প্রবেশে সাহস করে না। তবে কেউ সাহস করে চাঁদা দেবো না বললেই নানাভাবে হয়রানি করে সংগঠনগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড়ে এমন কোন ধরণের খাত নেই যেখানে সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়না। তবে সবচেয়ে বেশী চাঁদার পরিমান নির্ধারন করা হয় পরিবহণ ও সড়ক নির্মান খাতে। ঠিকাদারদের একপ্রকার জিম্মি করেই চাঁদার টাকা নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তবে বর্তমানে খাগড়াছড়িতে চাঁদা না দেওয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক সড়কের নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে করে স্থানীয়রা যেমন চলার পথে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন তেমনি এ জেলার অর্থনীতির চাকাও সংকুচিত হয়ে আসছে। তাই অতিদ্রুত সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তড়িৎ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব সড়কের নির্মান কাজ পুনরায় চালু করার দাবী জানান তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews