প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অসহায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের ঘর তৈরীতে নির্মান সামগ্রী দিয়ে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুপ্তশ্রী শাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি উপজেলার কয়েকটি নির্মাণাধীন ঘরে নির্মাণ সামগ্রী কম দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এদিকে অসহায় পরিবার গুলো রড, বালি ও সিমেন্ট কম দেওয়ায় ঘরগুলোতে ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন।
বিনামূল্যে জায়গাসহ পাকা ঘরের মালিক-এমন স্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে। তবে স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে ফারাক অনেক। কিন্তু কে জানত দরিদ্র মানুষের সাধ আর সাধ্যের সেতুবন্ধন গড়ে দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের এই স্বপ্নপূরণের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
রঙিন টিনে মোড়ানো পাকা ঘরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের এই উদ্যোগ প্রশংসাও পায়। কিন্তু দুর্নীতিবাজ উপজেলা পিআইও এর লোভের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়ার আশঙ্কায় নানিয়ারচর উপজেলার দরিদ্র মানুষের সোনালি স্বপ্ন। তাদের জীবনে নেমে আসতে পারে অমানিশার অন্ধকার। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তারা যে ঘর পাবেন, তা দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এতে যে কোনো বৈরী আবহাওয়ায় তা ধসে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের অভিযোগ, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় নানিয়ারচর উপজেলায় তৈরি করা হচ্ছে কয়েকটি ঘর। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এগুলো পরিণত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ আবাসস্থলে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে যে ঘর দেওয়া হবে, গরিবের সেই ঘর নির্মাণে চুরি নয়, যেন ডাকাতি হচ্ছে। আর এই অসাধু তৎপরতায় স্থানীয় উপজেলা পিআইও জড়িত।
সরেজমিন দেখা যায়, নানিয়ারচর সদর উপজেলার ২নং ইউনিয়নের বগাছড়ি এলাকায় রাস্তার পাশেই ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। কোন তত্ত্বাবধান ছাড়াই চলছে নির্মান কাজ। প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পথে। এমন অবস্থায় নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বেশকিছু তথ্য আসে প্রতিবেদকের হাতে। এই তথ্য ধরে অনুসন্ধানকালে বেরিয়ে আসে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র।
এদিকে ৩নং বুড়িঘাট ইউনিয়নে একই চিত্র দেখা গেছে। এই লিওনের এক নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুবাহান (ছদ্দনাম) জানান তার জন্য নির্মাণাধীন ঘরে দুটি রড দিয়ে লিংটন ঢালাই দেওয়া হয়েছে। কোথাও তিনটি রোড এবং কিছু অংশে রড ছাড়াই ঢালাই দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সুবিধাবাদী পরিবার দিয়ে গাছ ক্রয়, শ্রমিক জোগান এবং পানি টানিয়ে নেওয়ার ও অভিযোগ এসেছে। এসব কাজে সুবিধাবাদী পরিবারকে কোন অর্থ দেওয়া হয়নি।
প্রকল্পের নকশায় দেখা গেছে, প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা যে টাকা ধরা হয়েছে তার থেকে কম মূল্যে অধিক লাভের আশায় ঘর নির্মাণের প্রতিটি ধাপে নয় ছয়ের মাধ্যমে লুটপাট করা হচ্ছে।
অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র নিয়ে প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজন মিস্ত্রির সাথে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য তৈরি করা এই প্রকল্পটি খুবই স্পর্শকাতর। কারণ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় গরিবের মুখে হাসি ফোটাতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নে এ উপজেলা নয় ছয় করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কারো কোনো মতামত নেয়নি ।
তিনি আরও বলেন, এই ঘর নির্মাণের সব চেয়ে বিপজ্জনক দিক হচ্ছে কোনো মজবুত ভিত্তি নেই। এতে অল্পমাত্রার ভূমিকম্প কিংবা টানা বৃষ্টিতেও এই ঘর ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। আরেকটি বিপজ্জনক দিক হচ্ছে-দেওয়াল ধরে রাখার জন্য লিংটেল অপরিহার্য। অথচ ঘরের জানালার ওপর যে ছোট লিংটেল দেওয়া হয়েছে, তা-ও রড কম দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মন গরিবের জন্য কান্দে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের মন পাথরের মতো শক্ত। তাই তারা এমন খারাপ কাজ করতে পারতেছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের এই প্রকল্পে এমন লুটপাট মেনে নিতে পারছেন না সুশীল সমাজ।অনেক যায়গায় কম রড দিয়ে ঢালাই করে মিলিয়ে দিয়েছে। যা ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন সবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, নির্মাণ সামগ্রী কম দিলে আমরা কিভাবে কাজ করব। আমাদের কে যে সামগ্রী দিয়েছে তা দিয়েই কাজ করেছি।
এবিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া বলেন, সঠিক তথ্য পেলে এবিষয়ে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুপ্তশ্রী শাহা বলেন, প্রাক্কলনে ৮এম এম রড ধরা আছে। অথচ আমি ১০এম এম রড দিয়ে কাজ করছি।
ঘর গুলো ঝুঁকিপূর্ণ এক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ভবিষ্যৎ এ কোন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই।