হুমায়ুন কবির,রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
জনিকে নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন, বড় হয়ে ছেলে বড় ডাক্তার হবে৷ সেবা করবে মানুষের। বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে নিজের সবটুকু দিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছে জনি৷ হঠাৎ পারিবারিক ঝড়ে খানিকটা স্থবির হয়ে যায় তার স্বপ্ন৷ স্কুলে পড়া অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয় প্রিয় বাবাকে। বাবাকে হারিয়ে অকেজো হয়ে পড়ে পরিবারের আয়ের চাকা ৷ নিজস্ব সামান্য বসতভিটা আর মাঠে কয়েক শতক আবাদি জমি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের।একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়ে যেন দিশেহারা পুরো পরিবার। কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ঠিক সেই মহূর্তেই সংসারের হাল ধরতে হয় জনিকে৷ কৃষিকাজ করে সংসারের সকল খরচ জুগিয়ে পড়াশোনা চালানো ছিল তার পক্ষে পাহাড় সমান কষ্টকর। সব কষ্ট মানিয়ে নিয়ে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে গত ১২ মার্চ প্রকাশিত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে জনি। বৃহস্পতিবার ১৬ মার্চ সরেজমিনে গিয়ে এস তথ্য পাওয়া গেছে। জাহিদ হাসান জনি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল পৌরসভার দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম টিপু ও জরিনা বেগম দম্পতির ছেলে । রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে এবছর সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তার এমন সফলতায় প্রচন্ড খুশি তার পরিবার ও স্থানীয়রা।
স্থানীয় প্রতিবেশী সাঈদ বলেন, "তার বাবা মারা যাওয়ার পর সে খুব কষ্ট করেছে৷ সে প্রতিদিন মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রমে কৃষি কাজ করে সংসারের খরচ ও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে৷ আমরা আশা রাখছি কোন কারণে সে যেন পিছিয়ে না যায়৷ তাঁর বাবার স্বপ্ন যেন পূর্রণ হয়। সরকারসহ এলাকার বিত্তবানরা তার পাশে থেকে তাকে যেন সহযোগিতা করেন"।
কান্নাজড়িত কন্ঠে জনির মা জরিনা বেগম বলেন, "অনেক কষ্ট করে মোর ছুয়াডা পড়াশোনা করিছে। ভালো করে খাবা পারেনি। সব রকম কৃষি কাজ করিছে ফের সংসারটাও চালাইছে। আইজ ডাক্তারি পড়িবার সুযোগ পাইল। জনির বাপ বাচে থাকিলে আইজ খুবে খুশি হলেহে৷ সবাই মোর ছুয়াডার তাহানে দোয়া করিবেন, যাতে ভালো ডাক্তার হইবা পারে"।
জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী জাহিদ হাসান জনি বলেন, "ছোট বেলায় বাবা বলতেন আমাকে ডাক্তার বানাবেন। আজকে আমার বাবা বেঁচে নেই৷ তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়। মা আর একমাত্র ছোট বোন নিয়ে সংসার। বোনটাও লেখাপড়া করে। কৃষি কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া আমার কাছে অনেক কঠিন যুদ্ধ ছিল এটা। তবুও হাল ছাড়িনি কারণ স্বপ্নটা আমার বাবার। কোচিং এ এক ভাইয়ের মাধ্যমে অল্প টাকায় ভর্তি হই। তারপর বাড়িতে এসে কাজ করে আবার কোচিংয়ে চলে যেতাম৷ সব সময় আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতাম ৷ কষ্ট হলেও অসহ্য জীবনযুদ্ধে হার মানিনি৷ আজকে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কেবলমাত্র পথচলাটা শুরু করেছি। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে করে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে পরিবার,আত্নীয় স্বজনসহ দেশবাসীকে সেবা দিয়ে যেতে পারি৷
এ ব্যাপারে রাণীশংকৈল পৌরমেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "জনি আমার পৌরসভার বাসিন্দা। তার বাবার মৃত্যুর পর সে পরিবারকে চালিয়ে এবং
নিজে লেখাপড়া করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করে আজ সফল হয়েছে। তার এই বিরল সাফল্যে আমি ভিষণ খুশি হয়েছি। প্রায় তাদের খোঁজখবর নেই। আমার সর্বাত্বক সহযোগিতার হাত তার উপর থাকবে ইনশাল্লাহ"। রাণীশংকৈল ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিফ বলেন, "জনির মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগের খবরটি আমি জেনেছি। সে পিতৃহারা, গরীব ও মেধাবী। তাঁর ভর্তির ব্যাপারে আর্থিক সহয়তা করা হবে"।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy