ফারহানা বি হেনা
সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ রায়হান আহমদের মরদেহ আজ বৃহস্পতিবার কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। এরআগে বুধবার রায়হানের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুণরায় ময়না তদন্তের অনুমতি দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম। এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আমরা রায়হানের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করবো।
এরপর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই তার ময়না তদন্ত সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা হলে নিহত ব্যক্তির ময়না তদন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই ময়না তদন্ত করে রায়হানকে কবর দেওয়া হয়। এ কারণে পুণরায় ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই রায়হান আহমদের মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে বর্তমানে এই মামলাটির তদন্ত করেছে পিবিআই। মঙ্গলবার রাতেই এই মামলার নথি আনুষ্ঠানিকভাবে পিবিআইতে হস্তান্তর মহানগর পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করেন সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারায় রায়হান। পরে একইদিন রাত আড়াইটার দিকে পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় আসামিদের অজ্ঞাত রেখে হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি। প্রসঙ্গত, রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।