প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ৮:৪২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অগাস্ট ৪, ২০২১, ২:৫৯ এ.এম
পুলিশের জালে ধরা পড়ল শীর্ষ প্রতারক ভুয়া ডিসি, এসপি, আর্মি অফিসার ও এমবিবিএস ডাক্তারসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় পেশার পরিচয় দানকারী
রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভুয়া ডিসি, পুলিশ সুপার, এমবিবিএস ডাক্তার সেনাবাহিনীর অফিসার, বড় ব্যবসায়ীসহ আরো বিভিন্ন আকর্ষণীয় পেশার পরিচয় দানকারী শীর্ষ প্রতারক কামরুল হাসান সাদ্দাম(৩০) গতকাল নওগাঁ জেলা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সাদ্দামের বাড়ী যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার আটুলিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম কাওছার আলী। কাওছার আলীর দুই ছেলের মধ্যে সাদ্দাম ছোট। বড় ছেলে সুমন ফ্রান্স এ থাকে।
সাদ্দাম ছোট বেলা থেকেই বখাটে। কোন রকমে স্কুলের গন্ডি পেরোলেও সে প্রতারণার সকল কলা কৌশল রপ্ত করে। অত্যন্ত সুচতুর এবং ধুরন্ধর সাদ্দামের বখাটেপনায় অতিষ্ঠ হয়ে বাবা একই এলাকায় সাদ্দামকে বিয়ে দেন।
সেখানে সাদ্দামের ঘরে একটি কন্যা সন্তান এবং একজন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। সে প্রথমে স্থানীয় একজনকে পোল্যান্ড নিয়ে যাওয়ার নাম করে ঢাকার একটি নামীদামী হোটেল উঠায় এবং তাকে ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে ভিডিও করিয়ে ফেস বুকে পোস্ট করায় যে সে পোল্যান্ড এ খুব ভাল আছে।
পরে সে আরো বহু লোককে বিদেশে পাঠানোর নামে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। কিছু দিনের মধ্যেই সাদ্দামের নজর পড়ে বিভিন্ন সুন্দরী মেয়ের উপর। মেয়েদের পটানোর কৌশল হিসেবে সে নিজের লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করে ফেলে।
সে একেক মেয়ের কাছে একেক নাম এবং একেক পেশার পরিচয় দেয়। তার মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসএপ আইডি হতে দেখা যায় যে সে একেক মেয়ের কাছে একেক নাম এবং একেক পেশার পরিচয় দিয়ে তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিথ্যা কথা বলে তাদের কারো কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে আবার কারো কারো কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মেয়েদের আকর্ষণ করতে সে অনলাইনে বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়াতে এড দেয়। 'আকাশে তারা' নামে একটি আইডির সাথে মেসেঞ্জার এ চ্যাটিং এর সময়ে সে নিজেকে সদ্য এমবিবিএস এবং এফসিপিএস পাশ ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন। '
সিল্ফ' নামে পরিচালিত আরেকটি মেসেঞ্জার আইডির সাথে চ্যাটিং এর সময় সে নিজেকে অবিবাহিত অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসকারী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেয়।
তাকে আকর্ষণ করার জন্য অস্ট্রেলিয়াতে তার একটা সুপার সপ আছে বলে মিথ্যা কথা বলে। 'সুরাইয়া সবনম' নামের আরেক আইডি এর সাথে চ্যাটিং এর সময় নিজেকে প্রবাসী উল্লেখ করে এবং তার আসল বাড়ী নওগাঁ বলে মিথ্যা কথা বলে। '
নাজু এখন রানু' নামের আরেক আইডির সাথে নিজেকে একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হিসেবে পরিচয় দেয়। 'ডলি হক' নামের আরেকটি মেসেঞ্জার আইডির সাথে চ্যাটিং এর সময় নিজেকে কামরুল হাসান পরিচয় দেয় এবং বলে যে সে সলিমুল্লাহ মেডিকেল থেকে এমবিবিএস এবং চীন থেকে মেডিসিন এ এফসিপিএস করেছে। '
অরিন বর্ষা' নামের আরেক আইডির সাথে চ্যাটিং এর সময় নিজেকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পরিচয় দেয়। 'বিথী আক্তার' নামে অপর আরেকটি মেসেঞ্জার আইডির সাথে চ্যাটিং এর সময় নিজেকে আমেরিকান সিটিজেন হিসেবে পরিচয় দেয়।
এভাবে বিভিন্ন মেয়ের কাছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পেশার পরিচয় দিয়ে তাদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সর্বোচ্চ লুটে নেয়। সে মেসেঞ্জার এ পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর লোগো পরিহিত মাস্ক এবং ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি পাঠায় যাতে মেয়েরা তাকে বিশ্বাস করে।
নওগাঁ জেলার এক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মেজো ছেলে মারা যাওয়ায় তিনি মানুষিক বিষন্নতায় ভুগছিলেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ প্রতারক তার সাথে মোবাইল এ মা সম্পর্ক বানিয়ে তার কাছে যাতায়াত শুরু করে।
সে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে নিজেকে একজন এএসপি হিসেবে পরিচয় দেয়। তাকে বিভিন্নভাবে বিশ্বাস করায় যে তার সাথে সরকারের উচ্চ মহলের খুব ভালো সম্পর্ক আছে।
প্রতারক তাকে উপজেলা চেয়ারম্যানের টিকিট নিয়ে দেওয়ার কথা বলে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে গত বছরের নভেম্বরে তিন লাখ টাকা নেয়।
টাকা নেওয়ার পর থেকে সে উক্ত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। সে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়।
এরপর থেকে উক্ত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ প্রতারককে ধরার জন্য সুযোগ খোঁজতে থাকে। গতকাল সে জানতে পারে যে প্রতারক সাদ্দাম তার স্ত্রীকে নিয়ে নওগাঁ সদরে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছে।
এরপর সে বিষয়টি নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার প্রকৌশলী জনাব আব্দুল মান্নান বিপিএমকে জানালে তিনি তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নওগাঁ সদর থানার অফিসার ইন চার্জকে নির্দেশ দেন।
সদর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে উক্ত জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য লোকের উপস্থিতিতে প্রতারক সাদ্দামকে তার স্ত্রীসহ গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পর সুকৌশলী প্রতারক সাদ্দাম পুলিশের কাছে একের পর এক মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
সে নিজেকে যশোরের এম এম কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স করা একজন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের কৌশলের কাছে তার প্রতারণার সাম্রাজ্য ধ্বসে পড়তে থাকে। সে কোন রকমে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করে প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়ে।
তার বখাটেপনায় অতিষ্ঠ হয়ে বাবা তাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর তাদের দুটি সন্তান হওয়ার পর সে আরো বড় ধরনের প্রতারণা শুরু কর। সে অনলাইন ম্যারেজ মিডিয়াগুলোতে কখনো আমেরিকান সিটিজেন, কখনো অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, কখনো এসপি, কখনো ডাক্তার, কখনো আর্মি অফিসার, কখনো বড় ব্যবসায়ী পরিচয়ে নিজেকে অবিবাহিত দেখিয়ে বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজার বিজ্ঞপ্তি দেয়।
এরপর বিভিন্ন সুন্দরী মেয়ের সাথে চ্যাটিং এর শুরুতেই তাদের ছবি নেয়। এরপর বাকপটু প্রতারক তার কথার মাধুর্য দিয়ে দ্রুত মেয়েদের পটিয়ে তাদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
টাকার পাশাপাশি সে ঐ সব মেয়েদের কাছ থেকে ব্লাংক ব্যাংক চেকও নিয়ে রাখে। পাশাপাশি সে মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্কেরও ভিডিও ধারণ করে রাখে। ফলে প্রতারিত মেয়েরা পরবর্তীতে ভয়ে এবং লজ্জায় মুখ খুলতে চান না। আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধারকৃত স্ত্রীও ঠিক এরকম প্রতারণার শিকার। প্রায় একবছর পূর্বে তার সাথে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তার