পোরশায় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ বাকইল মহীউস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায়
নাহিদ পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর পোরশায় এক দাখিল মাদ্রাসায় নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে কোন কারণ ছাড়াই বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৩জন প্রার্থী বাদী হয়ে পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপারসহ মোট ৮জনকে বিবাদী করে নওগাঁ জজ আদালতে একটি মামলা করেছেন। এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য আবেদন করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে, পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের বাকইল মহীউস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাকইল মহীউস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির যোগসাজশে গত বছর ০৩/০২/২০২০ইং তারিখ দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় ১জন নিরাপত্তা কর্মী ও ১জন আয়া পদে মোট ২জন লোক নিয়োগ করা হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়ায় নতুন করে সভাপতি ও সুপার নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ১০/০৮/২০২০ইং তারিখ রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকায় একই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করান। দুই পদে উক্ত মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপারের দুই পদে দুইজন প্রার্থীসহ মোট প্রার্থী ছিলেন ১৬জন। ০৩/০২/২০২০ইং তারিখ দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রার্থীরা আবেদন করলেও কোন প্রার্থী নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহনের কার্ড পাননি।
প্রায় ৬মাস পর পুনরায় ১০/০৮/২০২০ইং তারিখ দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকায় একই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ঐ বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রার্থীরা নতুন করে আবেদন করেন। এবং একই বছরের ডিসেম্বর মাসে তারা নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়ার জন্য চিঠি পান। চিঠিতে এ্যাডমিড কার্ড দেওয়া হয়। এ্যাডমিড কার্ডে ১৯/১২/২০২০ইং তারিখ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্য়ালয়ে উপস্থিত হয়ে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য জানানো হয়। পরিক্ষার দিন সকালে মাদ্রাসা সুপার পরীক্ষার্থীদের জানান যে, উপর থেকে নিয়োগ পরীক্ষ স্থগিত করা হয়েছে।
পরে আবারো ১০/০৮/২০২০ইং তারিখ দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকায় একই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়া দেখে প্রার্থীরা আবারো আদেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ০১/০২/২০২১ই তারিখ বাকইল মাদ্রাসায় নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত হবার জন্য সকলকে লিখিত এ্যাডমিড কার্ড দেওয়া হয়। এরই মধ্যে জানা জানি হয় যে, মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপারের মনোনিত দুই প্রার্থীকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এম খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে ১৬জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪জন প্রার্থী ঐ নিয়োগ পরীক্ষা বর্জন করেন। সর্বশেষ গত ২৭/০৬/২০২১ নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদ্রাসায় নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়। ঐ নিয়োগ পরীক্ষায় পূর্বের ১৪জন প্রার্থী আবারো বর্জন করেন। এতে সভাপতি ও সুপারের মনোনিত ২জন প্রার্থীকে আইনিভাবে টেকাতে তারা নতুন করে ৬জন প্রার্থীকে হাজির করে পরীক্ষা দেওয়ান। এবং তাদের মনোনিত ঐ দুই প্রার্থীকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে নিয়োগ প্রদান করেন।
নিরাপত্তাকর্মী পদে আবেদন করে পরীক্ষা বর্জনকারী মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা যখন জানতে পারি যে, মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতি বিপুল পরিমানে অর্থের বিনিময়ে তাদের মনোনিত প্রার্থীদের নিয়োগ দিচ্ছেন, তখনই আমরা পরীক্ষা বর্জন করি। এবং আদালতে মামলা করি।
এ ব্যাপারে বাকইল মহীউস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা সুপার কামাল হোসেন জানান, আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করেছি। নিয়োগ পরিক্ষা তারা কেন বর্জন করলো তা আমার জানা নেই। আর পরীক্ষা বর্জনকারী কেউ আমাকে কোন অভিযোগও করেননি। মাদ্রাসার সভাপতি সুলতান মাহমুদ রিপনের মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্ঠা করেও ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সংশিস্নষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান ফখরম্নদ্দীন আলী আহম্মদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ মাদ্রাসায় বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য চলছে। এ নিয়োগের ব্যাপারে তার কাছে সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে বলেও তিনি জানান।
আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেন পরীক্ষার্থী আব্দুল করিম। ঐ আবেদন পত্র রিসিভ করে সিল ও স্বাক্ষর করেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। এর পরেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াজেদ আলী মৃধা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে মোবাইল ফোনে কোন কথা বলতে রাজি নন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হামিদ রেজা বিষয়টি জানেন বলে স্বীকার করেন। তবে শেষ পর্যন্ত এটি কি অবস্থায় আছে তা তার জানা নেই বলেও তিনি জানান।