আমার খুব কাছের একজন মানুষের কথা বলছি। পেশায় দেশের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। নামটা তার না-ই বলি। নিজের মহতী পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। আমাদের দেখা সত্যিকারের ভালো মানুষদের মধ্যে একজন এই ডাক্তার। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মহান আল্লাহ তা’আলার দরবারে দোয়া করছি, তিনি যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন।
আমরা চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আল্লাহর। এজন্য রাসুল (স.) রোগে-শোকে আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন- ‘হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর কর এবং আরোগ্য দান কর, তুমিই আরোগ্য দানকারী। তোমার আরোগ্য ব্যতিত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য, যা বাকী রাখে না কোনো রোগ।’ দোয়াটি আল্লাহ তা’আলা ওই প্রিয় মানুষটির জন্য কবুল করুন। তিনি যেন ফিরে এসে আবার তার মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন।
আমি সবচেয়ে অবাক হয়েছি, এই মানুষটি ১০ দিনের বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে অনেকবার তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। অথচ একবারও বলেননি তিনি এই রোগে আক্রান্ত! কেন বলেননি জানেন? একথা শুনে আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবো মনে করে তিনি আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চাননি। যেন আমি টেনশন না করি।
একজন মানুষ কি পরিমাণ বিশাল মনের অধিকারী হলে কি পরিমান মহৎ হলে নিজের মধ্যে এত বড় একটি কষ্ট বয়ে নিয়েও আরেকজনের সুখের জন্য নিজের দুঃখকে আড়াল করে রেখেছেন। টেনশন বা দুশ্চিন্তা করবো বলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর গোপন করেছেন। স্যালুট আপনাকে। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। দোয়া করি খুব শীঘ্রই আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে তুলবেন ইনশাআল্লাহ।আপনার আর আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। আল্লাহ আপনার পরিবারের সকলকে হেফাজত করুক।
আমার শুভানুধ্যায়ী বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের মধ্যে অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সকলের সুস্হতা কামনা করি। একই সঙ্গে সারাদেশে যারা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন তাদের সবার রোগ মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন সবাইকে সুস্থ করে দেন এবং সারাদেশের মানুষকে এই মহামারি থেকে মুক্তি দেন।
পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে, যারা অন্যকে চিন্তাগ্রস্ত করতে চায় না বলে নিজের দুঃখ-বিপদ লুকিয়ে রাখে। অথচ তারপরও তাদের মুখে এক চিলতে হাসি। আমার জীবনেও এমন কিছু মানুষ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। নাম না-বলা এই কাছের মানুষগুলোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।আপনারাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। আপনারা এবং আপনাদের পরিবারের প্রতি রইল শুভ কামনা।
ভৌতিক দূরত্ব যতই হোক- এমন মানুষের সান্নিধ্য আমাকে মুগ্ধ করে। এদের জন্যই সম্ভবত আঠারো শতকের কবি শেখ ফজলুল করিম বলেছেন-
‘প্রীতি-প্রেমের পুণ্য-বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়ে ঘরে।’