1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
ফরিদপুরে হরিলুটের অন্যতম খলনায়ক সত্যজিত-মোকাররম
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

ফরিদপুরে হরিলুটের অন্যতম খলনায়ক সত্যজিত-মোকাররম

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০, ৬.২০ পিএম
  • ২৪৭ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে ফরিদপুর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস সত্যজিত মুখার্জির। তিনি এখন কারাগারে। দুদকের মামলায় বিচারাধীন ফরিদপুর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত ত্রাণ সম্পাদক মোকাররম মিয়া বাবুও। সম্প্রতি ফরিদপুরে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারি ও সন্ত্রাসীকাণ্ডের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের মূল হোতা এই সত্যজিত ও মোকাররম বাবু। তাদের হাত ধরেই একসময়ের বিএনপি ক্যাডার ও খোকন রাজাকারের ভাগনে বরকত ও রুবেলের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য জানা যায়।
ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেই থেকেই সত্যজিত মুখার্জি ও মোকাররম মিয়া বাবুর দৌরাত্ম্য শুরু হয়। গোটা ফরিদপুরে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসীকাণ্ডের রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপরত হন তারা। এসব কাজে অন্তরায় হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কূটচালের মাধ্যমে কোণঠাসা করে ফেলেন। নিজেদের অপকর্মের সুবিধার জন্য বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের একে একে দলে অনুপ্রবেশ করান। গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসানো হয় তাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পারিবারিকভাবে কপর্দকশূন্য ছিলেন সত্যজিত মুখার্জি। ফরিদপুর শহরে কোনো ঘরবাড়ি ছিল না তাদের। পরিবার থাকতো শ্রী অঙ্গনে (আশ্রম)। সত্যজিতের বড় হয়ে ওঠা সেখানেই। সেই সত্যজিত রাজনীতির ‘আশীর্বাদে’ অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থে শহরে বহুতল ভবনের মালিক হয়েছেন। গড়েছেন হাজার কোটি টাকার বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। অপর দিকে রাজনীতির ছত্রছায়ায় ‘ভবঘুরে’ মোকাররম মিয়া বাবুও বনে গেছেন শত শত কোটি টাকার মালিক।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুর শহরের সরকারি তিতুমীর মার্কেটের দোকান বরাদ্দ নিয়ে চরম হরিলুটের নজির স্থাপন করেন সত্যজিত ও মোকাররম বাবু। আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬৭ ব্যবসায়ীর ক্ষতিপূরণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত প্রকল্পের দোকান বরাদ্দে তারা অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করেন। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যদের নামে নতুন দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও সত্যজিত ও মোকাররম বাবু সে নিয়ম ভাঙে। দখলে নেন শত শত দোকান। মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে কিছু ব্যবসায়ী দোকান বরাদ্দ নিতে পারলেও বাকিরা বঞ্চিত হন।
অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের অভিযোগও আছে সত্যজিত মুখার্জি ও মোকাররম বাবুর বিরুদ্ধে। তাদের ক্ষমতার দাপটে একসময় ফরিদপুর শহরে কেউ মুখ খুলতে পারত না। ২০১৫ সালে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করার পর ভুক্তভোগীরা আইনের দারস্থ হন। বিচারের দাবিতে তারা মামলা করেন।
সত্যজিত ও মোকাররম বাবুর বিপুল সম্পদের অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুজনের পাহাড়সম অবৈধ সম্পদের তথ্য। শুধু ফরিদপুরেই নয়, ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর এবং আদবর এলাকায় ফ্ল্যাট আছে সত্যজিত মুখার্জির। আছে একাধিক প্লট, ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৯ জুন সত্যজিতের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক। গত ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ওই মামলার রায়ে সত্যজিতের ৭ বছরের কারাদণ্ডসহ ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৬ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও সত্যজিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুই ডজনের বেশি মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তারও হন তিনি। বর্তমানে দুদকের মামলায় তিনি সাজা ভোগ করছেন।
একইভাবে ‘ভবঘুরে’ থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া মোকাররম মিয়া বাবুরও অপকর্মের অন্ত নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ম হালিমকে পেটানোর অভিযোগ আছে মোকাররম মিয়া বাবুর বিরুদ্ধে। নিজের বোন জামাইকে অধ্যক্ষ করতে না পারায় প্রবীণ অধ্যাপককে পিটিয়ে জেদ মিটিয়েছিলেন বাবু। অবৈধ উপায়ে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণও কম নয়। ফরিদপুরের গোয়ালচামটে চারতলা বাড়ির মালিক কার্যত পেশাহীন মোকাররম বাবু। এর বাইরে ফরিদপুর শহরের তিতুমীর মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে নামে বেনামে দোকান, জায়গা, ব্যাংকে নগদ টাকার মালিক হয়েছেন খুবই কম সময়ে। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগে অভিযুক্ত এই বাবু ঢাকার রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে কসমোপলিটন ড্রিমের দ্বিতীয় তলায় কোটি টাকা মূল্যের ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মালিক। শ্যামলীর আদাবরেও একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে এসব ফ্ল্যাট নিজের নামে কেনেননি তিনি। স্ত্রী কিংবা নিকটাত্মীয়দের নাম ব্যবহার করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে মোকাররম মিয়া বাবু ও তার স্ত্রীরসহ নামে-বেনামে এসব বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান মিলেছে। এই সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ আয়ের উৎস মোকাররম মিয়া ও তার স্ত্রী মোছা. নাজনীন সুলতানার কাছে ছিল না। গত ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল দুদক রমনা থানায় তাদের দুজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। মামলায় মোকাররম বাবুর বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ৫৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়। মামলাটি বিচারাধীন আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews