গায়ে হলুদের দিন শহরময় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ‘ভাইরাল’ ফারহানা আফরোজ। যার বিয়ে হয়েছিল আরও তিন বছর আগে। রয়েছে দেড় মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তানও।
বিয়ের অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করতে না পারায় ছেলে জন্মের পর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সে অনুষ্ঠানকে ঘিরেই শখ পূরণ করেন লেডি বাইকার ফারহানা। তবে তার এ কাজকে ভালোভাবেই দেখছেন বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। তাদের দাবি ফারহানা স্বাধীনচেতা মানুষ। কিন্তু নেটিজেনরা তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন।
ফারহানার বান্ধবী নওরীন মোক্তাকি জয়া গণমাধ্যমকে বলেন, যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ফারহানার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। এরপর যশোর আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজেও এক সঙ্গে পড়েছি। উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য দু’জন দুই শহরের বাসিন্দা হলেও যোগাযোগ এবং বন্ধুত্ব ছিল অটুট। ফারহানা খুব ভালো মনের মানুষ, মিশুক। সবার উপকার করে। যেহেতু ও (ফারহানা) মোটরসাইকেল চালাতে পারে, তাই শখ ছিল নিজের বিয়েতে বাইক রাইডিং করার। ও শো-আপ চায়নি। নেটিজেনরা বানোয়াট কথা বলে ওকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন।
জয়া আরও বলেন, ফারহানার তো তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছে। ও এখন এক বাচ্চার মা। গত ৩০ জুন ওর ছেলে সন্তান হয়েছে। ফারহানা ওর বিয়ের সময় অনুষ্ঠান করতে পারেনি। ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিল। তবে এতদিন পর সেই শখ পূরণ করতে বিয়ের অনুষ্ঠান করছে, তাতে অন্যদের সমস্যাটা কী?
ফারহানার বন্ধু প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফার তরু খান বলেন, ফারহানা আমার কলেজ পর্যায়ের বন্ধু। সে সময় ও আমাদের সঙ্গে মোটরসাইকেল চালাতো। ও একজন ভালো বন্ধু, ওর সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করা যায়। ফারহানার স্বাধীনচেতা মেয়ে। তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আমরা বন্ধুরা ১৫/২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শহর ঘুরেছি। এতে দোষ কোথায়? লোকজন নেগিটিভ মন্তব্য করছে, তাতে খারাপ লাগছে। আমাদের প্রত্যাশা, প্রত্যেকে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেবে।
ফারহানার প্রতিবেশী তমাল আহমেদ বলেন, ফারহানার মতো মেয়েই হয় না। ও খুব ভালো মেয়ে। তার বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। পারিবারিকভাবে মেনে নেওয়া নিয়ে জটিলতা ছিল। বিয়ে মেনে নেওয়ার পর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নেটিজেনরা যা করছেন তা ঠিক না।
তমাল বলেন, যশোরে মেয়ে তানিয়া পাইলট হিসেবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী। নারীরা অনেক বিষয়ে এখন অগ্রগামী। ফারহানার ব্যাপারে এতো কনজারভেটিভ কেন বুঝি না। এটা ফারহানার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার শামিল।
তমাল আরও বলেন, ফারহানার পরিবারটি অনেক আগে থেকেই সংস্কৃতি মনা ও প্রগতিশীল। বাংলাদেশের অভিনয় জগতের তিন নক্ষত্র সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। এরা সম্পর্কে ফারহানার চাচাতো ফুফু। ফলে সে স্বাধীনচেতা হিসেবে বড় হয়েছে।
এর আগে, ১৪ আগস্ট পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন রাফির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন যশোর শহরের সার্কিট হাউজ এলাকার মেয়ে ফারহানা আফরোজ। এর আগের দিন ১৩ আগস্ট ছিল ফারহানার গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদের দিনে শহরজুড়ে বন্ধু-বান্ধব ও সাথীদের নিয়ে বাইক র্যালি (মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা) করেন কনে ফারহানা। ওই শোভাযাত্রার ছবি এ কাজে নিযুক্ত ফটোগ্রাফার তার অনুমতি নিয়েই ফেসবুকে দেন। এরপর ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের ছবি ভাইরাল হয়।
ফারহানা আফরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, সবাই নেচে-গেয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান উদযাপন করেছি। আমি যেহেতু মোটরসাইকেল চালাতে পারি, তাই চালিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। ব্যতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থেকেই এমন আয়োজন। এটি আমার নিজস্ব উদ্যোগে করেছি। অনেক আনন্দ করেছি বন্ধু-বান্ধব ও সাথীরা।
যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারহানা। এখন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) থেকে এইচআর-এ এমবিএ করছেন ফারহানা।
তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সাল থেকে বাইক চালাই। মূলত বাড়িতে সাইকেল ও প্রাইভেটকার চালানো শেখা হয় ছোট বেলাতেই। বাবার মোটরসাইকেলটিও চালানোর একটা ঝোঁক ছিল। তাই বাবার অজান্তেই কোনো প্রশিক্ষক ছাড়াই মোটরসাইকেল চালানো শিখি। ২০১৩ সালে ঢাকায় আসার পর বন্ধুদের মোটরসাইকেলে হাত পাকাই। এরপর নিজে স্কুটি কিনি। ওই স্কুটিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করি।
ফারহানা আরও বলেন, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার ছবি ফেসবুকে আসার পর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। তারা আমার মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। ফলে তারা ছবি ও ভিডিও দেখে বেশ আনন্দ করেছেন। কিন্তু নেটিজানরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না। তারা আমার চারিত্রিক সনদ দিচ্ছেন। এটা আমি মানতে পারছি না। যে কারণে ছবি ভাইরাল হবার পর আমি নিজেই বাইক র্যালির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করি।
তিনি আরও বলেন, সুযোগ পেলে আমি হেলিকপ্টার চালানোও শিখতাম। আমি সবকিছুই চালানো শিখতাম। স্বামীর পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের আপত্তি নেই।
তবে তার স্বামী হাসনাইন রাফির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ফারহানা তাকে সংবাদমাধ্যমে না টানার জন্য অনুরোধ করেন। তার স্বামী বর্তমানে গাজীপুরে
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy