চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ
নগরায়নের অপরিহার্য বিষয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা করা।
সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কর্মজীবীদের
নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ যাতায়াত ও আবাসন নিরাপত্তা সুবিধা সুনিশ্চিত করা।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরজুড়ে রয়েছে কর্মব্যস্ত বন্দর, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি। জীবনের তাগিদে মানুষ শহরমুখী হয়েছে এবং হচ্ছে। নগরে বাড়ছে মানুষ। যাতায়াতে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে যান্ত্রিক
যোগাযোগ ব্যবস্থায়। নাগরিকদের নির্বিঘেœ ও নিরাপদে চলাচলের জন্য সড়কের পাশে নির্মিত যে ফুটপাত তাতে আজ আর নাগরিকদের হাঁটার অবস্থা নেই।
ফুটপাতে হকারদের ফেলা আবর্জনায় অনেক সময় অসহনীয় হয়ে উঠে। অনেক সময় নাক চেপে ঝুকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয় পথচারীদের।
রীতিমত ফুটপাতকেই মার্কেট বানিয়ে ফেলেছে হকাররা। চট্টগ্রাম নগরীর উত্তরে সিটি গেট থেকে কালুরঘাট, দক্ষিণে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়কে ৬৩৫ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন শহরমুখী গুরুত্বপূর্ন মহাসড়ক অলংকার মোড় জুড়ে ফুটপাতে রয়েছে ছোট ছোট টং এর দোকান। যার মধ্যে রয়েছে চায়ের দোকান, ভাতের দোকান, কাপড় ও নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান। একেখান ও অলংকার মোড় এলাকার রাস্তার দুই ধারে সারি সারি দাড়িয়ে আছে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি। ফুটপাতে আছে তাদের বাস কাউন্টার। যার ফলে মহাসড়কের ব্যস্ততম গাড়ি চলাচলের মধ্যে যাত্রি ও নাগরিকদের
ফুুটপাত থেকে নেমে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে হয়।
নগরীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি
এলাকার ফুটপাত এবং রাস্তা দখলদারদের দখলে। জি.ই.সি, দুইনম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন মোড় ঘুরে দেখা যায় ফুটপাতে রয়েছে চায়ের দোকান, ভাতের দোকান, ফলের দোকান, মোবাইল ও ইলেক্ট্রনিক্স এর দোকান ও রাস্তা জুড়ে আছে বিভিন্ন রোডের ছোট বড় অনেক গাড়ির স্ট্যান্ড। তাছাড়া চকবাজার, বহদ্দারহাট, জুবিলীরোড, রেয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, আমতলা, স্টেশনরোড, আন্দরকিল্লা, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আসদগঞ্জ, ফিরিঙ্গিবাজার, লালদীঘি, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়ক, ষোলশহর, অক্সিজেন,
বড়পুল মোড়, ইপিজেডসহ নগরজুড়ে ফুটপাত দখল করে চলছে রমরমা ব্যবসা।
অলংকার মোড়ে এক মহিলা পথচারী সুর্যোদয়ের প্রতিবেদককে বলেন,
জনগুরুত্বপুর্ন ও যাত্রিদের জন্য ঝুকিপূর্ন এলাকা অলংকার মোড়। নগরীর যাত্রি ছাড়াও বিভিন্ন জেলার যাত্রিরা এই এলাকার ফুটপাত ও সড়ক পাশ ঘেষে হাটতে হয়।
নগরীর বাস ও আন্তজেলা বাস, ট্রাক, মিনিবাস, টেম্পু, টেক্সি চলাচল করে।
মানুষকে অনেক ঝুকি নিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়। হকারদের কবলে ফুটপাত দখল হওয়ায় পাড়াপাড় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত যাত্রিদের হয়রানি অনেক বেড়ে গেছে। বিকাল নামলেতো ফুটপাত দিয়ে হাটাই যায়না।
২নং গেটে ফটিকছড়ি থেকে আগত রফিক নামে এক যাত্রি বলেন, ফুটপাত ও মুল সড়কের অর্ধেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে। মানুষ চলাচল করা খুবই কষ্টকর। কাউকে যেন বলার ইেন।
আগ্রাবাদে হকারদের দখলে থাকায় সড়ক দিয়ে চলতে যেয়ে এক পথচারী বলেন, পুরো নগরীর ফুটপাত ও রাস্তা দখলের কারনে নগরীর প্রতিটি মোড়ে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। ফুটপাত দখলের কারনে মানুষের চলাচল হয় সড়কে যার ফলে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশু, বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রি, প্রতিবন্ধি ও নারীদের।
বহদ্দার হাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, পথচারীদের কেনাকাটার সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে হকার উচ্ছেদ অভিযান চললেও দিন কয়েক পর তা আবারও আগের রূপে ফিরে আসে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের ফুটপাত হকারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শৃঙ্খলায় ফিরছেনা হকাররা। তারা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে ফুটপাতকে নিজের সম্পত্তি মনে করে দখল করে দোকান বসায়।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, নগরে হকার রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করছে নগরীর কয়েকটি হকার সংগঠন। এর বাইরেও রয়েছে আরও ৫ হাজার ভাসমান হকার। তারা বিভিন্ন গাড়িতে করে এবং অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে পণ্য বিক্রি করেন। আগ্রাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৯টার পর থেকেই হকাররা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে। এতে বাধ্য হয়ে পথচারীরা নামছেন রাস্তায়।
ফুটপাত দখলের পেছনে কারন জিজ্ঞাসা করলে ফুটপাত দখলকারী কয়েকজন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জানা যায়, ফুটপাত দখলের পিছনে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা পরিচয়ে ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নানা ধরনের পণ্যসামগ্রীর দোকান থেকে তোলা হচ্ছে বিপুল অঙ্কের চাঁদা। এই চাঁদার ভাগ পাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তাও। একাধিকবার সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও পরে আবারো ফুটপাত চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদদেই হকাররা ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ পান বলে জানা যায়। তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার পেছনে পুলিশেরও ভূমিকা আছে। এ জনগনের সহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় অনিয়মের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে নগরের ফুটপাত। এই অবৈধ, অনৈতিক ও অনিয়ম যাঁরা
করছেন তাঁদের পেছনে ক্ষমতাধর শক্তির সমর্থন রয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, হকারদের পুনর্বাসন না করে তাদের উচ্ছেদ করলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। কেননা এতে অনেকের স্বার্থ জড়িত।
বর্তমান সিটি মেয়র এম. রেজাউর করিম চৌধুরী ফুটপাত মুক্ত করা ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে মাঠে নামিয়েছেন। অভিযান পরিচালনা করছেন। কিন্তু দেখা যায়, উচ্ছেদের পর পর দুএকদিন যেতে না যেতে ফুটপাত আবার রহস্যজনক ভাবে দখল হয়ে যায়। নগরের পথচারীদের অভিমত, ফুটপাত স্থায়ীভাবে নাগরিকদের চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হলে, ফুটপাত দখল মুক্ত করে তদারকির জন্য গঠনমূলক ও স্থায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে।