সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে থেকে থেকে শোনা যাচ্ছে কোকিলের কুহুতান। কোকিলের মধুর সুরের ধ্বনিতে বসন্তের আগমনী বার্তা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রকৃতিতে ফাগুনের আগাম বার্তা ধ্বনিত হলেও বইমেলায় বইয়ের বিকিকিনিতে ফাগুনের কোনো চিহ্নই নেই। মেলার সপ্তম দিনে বইপ্রেমীদের হাতে হাতে বই শোভা পাওয়ার কথা।
তবে গতকাল অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিনের চিত্রটি ছিল উল্টো। বিকালে মেলা প্রায় জনশূন্য থাকলেও সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। তবে এদিনের মেলায় আগতদের বেশির ভাগই ছিলেন দর্শনার্থী। মেলায় প্রকৃত বইপ্রেমীদের ভিড় খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি।
সাত দিন পার হওয়ার পরেও বেচাকেনা ঢিলেঢালা জানতে চাইলে অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পরেই মানুষ বই কিনবে। মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেই হিমশিম খাচ্ছে; বই কিনবে কীভাবে। তবে কিছু কিছু প্রকাশনা সংস্থার সামনে প্রচুর ভিড় ছিল। আর তাদের বিক্রিও ছিল আশাপ্রদ।
জোনাকী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মূলধারার সাহিত্যিকদের বইয়ের চেয়ে ফেসবুক সেলিব্রেটিদের বই বেশি চলে। আমাদের কিছু প্রকাশক নিজেদের স্বার্থে ফেসবুক সেলিব্রেটিদের বই প্রকাশ করে বাণিজ্যের লোভে শিল্পকে ধ্বংস করছেন। এটা মেলার জন্য, বাংলা সাহিত্যের জন্য এবং একুশের চেতনার জন্য একটি অশনিসংকেত। গতকাল মেলার সপ্তম দিনেও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-সংলগ্ন গেটটি খোলেনি। এ কারণে অনেক বইপ্রেমী মেলায় প্রবেশ না করেই বাসায় ফিরে গেছেন।
এ বিষয়ে জোনাকী প্রকাশনীর প্রকাশক মঞ্জুর হোসেন বলেন, এমনিতেই মেলায় মানুষ আসে না। তার ওপর নিরাপত্তার নামে পুলিশের বাড়াবাড়ি মেলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন- সংলগ্ন গেটটি বন্ধ থাকাতে বইপ্রেমীরা মেলায় আসতে পারছেন না। এই গেটটি বন্ধ পেয়ে অনেকেই মেলায় প্রবেশ না করেই ফিরে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেকও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-সংলগ্ন গেটটি বন্ধ রাখায় একুশের চেতনা তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আজ (গতকাল) সকালে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। মেলায় জনসাধারণের অবাধ প্রবেশে গেটটি খোলা রাখার জন্য আমরা পুলিশকে অনুরোধ করেছি।
নতুন বই : গতকাল মেলার সপ্তম দিনে নতুন বই এসেছে ১০৪টি। এর মধ্যে গল্প ১৩টি, উপন্যাস ১৬টি, প্রবন্ধ ২টি, কবিতা ৩১টি, গবেষণা ২টি, ছড়া ১টি, শিশুসাহিত্য ২টি, জীবনী ৫টি, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ৩টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান ৩টি, ভ্রমণ ১টি, ইতিহাস ১টি, রাজনীতি ১টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১টি, রম্য/ধাঁধা ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ২টি, সায়েন্সফিকশন ১টি ও অন্যান্য ১৩টি।
মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : মাহবুব তালুকদার’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজী রহমান। এ সময় ‘স্মরণ আলী ইমাম’ শীর্ষক আহমাদ মাযহার লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন মোকারম হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন ড. নিমাই মণ্ডল, আমীরুল ইসলাম এবং ওমর কায়সার। সভাপতিত্ব করেন ফরিদুর রেজা সাগর।
দুটি স্টল বন্ধে টাস্কফোর্সের সুপারিশ : নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে ‘রাবেয়া বুক হাউস’ ও ‘গ্রন্থ প্রকাশ’ নামে দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল বন্ধের সুপারিশ করেছে অমর একুশে বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটি। এ ছাড়া প্রথমা, পাঠক সমাবেশ, মিজান পাবলিশার্স ও আকাশকে নীতিমালা মানাতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর মা সেরা, জ্ঞান বিতান, মৌ প্রকাশনী, বঙ্গজ প্রকাশন, গাজী প্রকাশনী, মেধা পাবলিকেশন্স ও দেশজ নামের ৭ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেলা পরিদর্শনের পর রাতে বইমেলা পরিচালনা কমিটিকে লিখিত চিঠিতে এ অবস্থানের কথা জানায় টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি অসীম কুমার দে বলেন, পাইরেটেড বই বিক্রির অভিযোগে এই দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।