আব্দুল্লাহ্ আল নোমান শুভ, চট্টগ্রামঃ
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘ভ্রমণবৃত্তান্তের একটা মস্ত সুবিধা এই যে, তার মধ্যে অবিশ্রাম গতি আছে অথচ প্লটের বন্ধন নেই– মনের একটি অবারিত স্বাধীনতা পাওয়া যায়।’ সে স্বাধীনতা থেকে এখনো অনেকেই অবদান রাখছেন ভ্রমণসাহিত্যে। যার কোনোটি র্স্পশ করে পাঠকের মন। বইয়ের পাতায় পাতায় লেখকের সঙ্গে ভ্রমণ আনন্দে শামিল হন পাঠকও। নিজের চোখেই যেন বিশ্ব দেখেন পাঠক।
১৮২ বছর আগে বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘কালনা থেকে রংপুর’। বলা হয়ে থাকে, এটিই প্রথম বাংলা ভ্রমণসাহিত্য। অবশ্য প্রথম সার্থক ভ্রমণসাহিত্য হিসেবে স্বীকৃত সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৈয়দ মুজতবা আলীসহ অসংখ্য সাহিত্যিকের হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা ভ্রমণ সাহিত্য।
চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে বইমেলা। মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার স্টলে মিলছে ভ্রমণকাহিনি বিষয়ক গ্রন্থ। অবশ্য এবার প্রকাশিত ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থের সংখ্যা কম। মেলা ঘুরে দেখা গেছে পাঠকের আগ্রহের তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য ভ্রমণকাহিনি বিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে– ‘আবদুর রহিম’এর ‘টোকিও হতে ইস্তাম্বুল’, রফিক আহমদ খান এর ‘মালায়ুর দেশে’, মুনতাসির মামুনের ‘পৃথিবীর পথে বাংলাদেশ : সাইকেলে আলাস্কা থেকে টরোন্টো’, আশিক সারওয়াররের ‘পুণ্ড্রবর্ধনের স্মৃতিকথা’, ‘যাযাবরের চোখে বাংলাদেশ’, হাসান আকবরের ‘দূরের টানে বাহির পানে’, মাহবুব তালুকদারের ‘সুপ্রভাত আমেরিকা’ এবং সঞ্জয় দে’র ‘রিগা থেকে সারায়েভো’।
গবেষক ও পরিব্রাজক মোহাম্মদ আবদুর রহিমের ভ্রমণগ্রন্থ ‘টোকিও হতে ইস্তানবুল’ এ লেখক তুরস্ক, চীন, জাপান, মালদ্বীপ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরের অনন্য স্থাপত্যকলা, ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। প্রত্যেকটা ভ্রমণ কাহিনির সঙ্গে কিউআর কোড স্ক্যান করে নিদর্শনগুলোর ভিডিও দেখা যাবে।’
আবদুর রহিম বলেন, পেশাগত কারণে তুরস্কের ইস্তানবুল হতে জাপানের টোকিও, গণচীনের বেইজিং, সিঙ্গাপুর সিটি, মালয়শিয়ার গেনটিং, হাইল্যাণ্ডস, আরবসহ ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। সেই সুযোগে এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক যে নির্দেশনগুলো আমার দৃষ্টিতে ভাল লেগেছে তা আমার প্রিয় মানুষদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি।
‘মালায়ুর দেশে’ এর লেখক রফিক আহমদ খান মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের পথঘাট, শপিংমল, বাসে–ট্রেনে ঘুরেছেন আর দশজন পথিকের মতোই। মালয়েশিয়ার জাতীয় ও স্থানীয় নানা অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন আকুল আগ্রহী হৃদয়ে। তবে তাঁর ভেতরে ছিল লেখক–মন। সংঘবদ্ধ–দলগত ও বন্ধুর সাথে পথচলার মধ্যেও থেকেছেন একা, জানা–বুঝায় নিমগ্ন–মনে। মালয়েশিয়াকে আর মালয়েশিয়ার মানুষকে জেনেছেন গভীর মনোযোগ সহকারে। লক্ষ্য করেছেন তাদের দৈনন্দিন যাপিত–জীবনের খুঁটিনাটি। মালয়েশিয়াকে যেভাবে দেখেছেন, জেনেছেন, অনুভব করেছেন তার নির্যাসটুকু তুলে ধরেছেন ‘মালায়ুর দেশে’। এদিকে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে মঈনুস সুলতানের ‘নানাদেশের হানাবাড়ি ও রহস্যময় ঘোড়ারগাড়ি’। এ গ্রন্থের মধ্য দিয়ে সমবয়সী কিশোর–কিশোরীর সঙ্গে পাঠকের ঘোরা হবে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া ও সিয়েরা লেওনের হানাবাড়িতে। ঘটবে ভুতুড়ে ঘটনা, অনুভব করা যাবে অনেক বছর আগে মৃত মানুষের নিঃশ্বাস–প্রশ্বাস।
এদিকে ভ্রমণসাহিত্যের বাইরে মাঈন উদ্দিন জাহেদ এর ‘মনন মৌমাছি’ এবং রাজীব রাহুল এর ‘ওয়ারেন্ট পেপার’ ঘিরে পাঠকের আগ্রহ দেখা গেছে। ওয়ারেন্ট পেপার এর কাহিনিতে আছে টান টান উত্তেজনা। রুম্মান নামে এক কিশোর মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আত্মহত্যা করে। যার ভাই পুলিশের সহকারী কমিশনার। একই মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া আরেক কিশোরের নাম সাদাব। তাকেও পুলিশ খুনি সন্দেহে গ্রেপ্তার করে। দীপ একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। সাদাসিধে জীবন তার। হঠাৎ একদিন পুলিশ এসে তাকে বলে থানায় যেতে হবে, ওয়ারেন্ট আছে। দীপের সাথে থানায় দেখা হয় সাদাবের। লক–আপ থেকে বের হওয়ার কিছুদিন পর সাদাবও খুন হয়। তারপর একে একে রহস্যের জাল বিস্তৃত হতে শুরু করে। মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। এরমধ্যে খুন হয় থানার ওসি, কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ী। সবগুলো খুনের ধরন একই। এসব খুন কারা করছে কেউ জানে না। পুলিশ প্রশাসন দিশেহারা। তাদের উপর চাপ বাড়তে থাকে। খুনীদের ধরতে তদন্তে নামেন ডিবি অফিসার ফাহমিদা। সাথে ডিটেকটিভ এজেন্ট রাকিবও। ঘটনা মোড় নিতে থাকে নানা দিকে।’
বইমেলা মঞ্চের আয়োজন,গতকাল বইমেলা মঞ্চে ছিল ‘নারী উৎসব’। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন। চসিক প্যানেল মেয়র আফরোজা কালামের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সোহানা শারমিন তালুকদার। বক্তব্য রাখেন চসিক সংরক্ষিত কাউন্সিলর নীলু নাগ, মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী শারমিন ফারুক সুলতানা, মমতাজ খান, কবি শবনম ফেরদৌসী ও বিশিষ্ট লেখিকা রেহেনা চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বই মেলা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ।