শাহরিয়ার কবির,খুলনা
শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য খুলনার পাইকগাছার জেলে পল্লীগুলোতে নতুন ট্রলার তৈরি ও মেরামতের ধুম পড়েছে।দিন রাত কাজ আর ব্যস্ততায় মালোপাড়ায় উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া, হিতামপুর, মাহমুদকাটী, নোয়াকাটি, কপিলমুনি, কাটিপাড়া, রাড়ুলী, শাহাপাড়া, বাঁকাসহ বিভিন্ন গ্রামের জেলে পল্লীতে নতুন ও পুরাতন ট্রলার তৈরির কাজে ধুম পড়েছে। নৌকা তৈরিতে কাঠ মিস্ত্রি ব্যস্ত সময় পার করছেন।দিনরাত কাঠ চিরানো,তক্তা ও গুড়া বানানো, কাঠ মসৃণ করা, তক্তা জোড়া লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঠ মিস্ত্রিরা।এসব কাজে সহযোগিতা করছেন পরিবারের লোকজন। মিস্ত্রিদের হাতুড় বাটালের আওয়াজে মুখরিত হচ্ছে মালোপাড়া।
উপজেলার বোয়ালিয়া মালোপাড়া সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,মালোপাড়ায় ৬টি নতুন ট্রলার তৈরীর কাজ চলছে ও পুরাতন ট্রলারগুলি মেরামত করার কাজ চলছে। মিস্ত্রীরা দিন রাত ট্রলার তৈরী কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ট্রলার তৈরী নিয়ে মালোপাড়ায় তৈরি হয়েছে উৎসব মূখর পরিবেশ। ট্রালার তৈরি করতে বিভিন্ন স্থান থেকে মিস্ত্রী আনতে হয়।পাইকগাছার মিস্ত্রি সিরাজুল ইসলাম সহ ৫ জন সহকারি মিস্ত্রী ট্রলার তৈরির কাজ করছে। ট্রলার তৈরিতে মিস্ত্রীদের থাকা খাওয়া বাদে প্রতিটি নতুন ট্রলার তৈরী বাবদ মজুরী ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ৬০ ফুট লম্বা ১৭ ফুট চওড়া একটি ট্রলার তৈরি করতে প্রায় ৫শ সেফটি কাঠ লাগছে। সব কাট দিয়ে ট্রলার তৈরি হয় না। এলাকায় পাওয়া যায় এমন চম্বল, বাবলা, লিছু, ছবেদা, মেহগনী ও খৈ কাঠ দিয়ে তারা ট্রলার তৈরি করছে। প্রতি সেফটি খৈ বাবলা ও চম্বল কাঠ ৬শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা দরে ক্রয় করেছে। নতুন ট্রালার তৈরির পর তাতে রং করতে প্রায় ২শত কেজি আলকাতরা লাগে। পুরাতন ট্রলার মেরামত করতে ৩০-৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। একটি নতুন ট্রলারে প্রায় ৩ মন পেরেক, ১শ কেজি জলই/পাতাম প্রয়োজন হয়। ট্রালার তৈরি পর ইঞ্জিন বসাতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
মালোপাড়ার রবিন বিশ্বাস, প্রজিৎ বিশ্বাসসহ কয়েক জন নতুন ট্রলার তৈরী করছে। তাছাড়া দিপংকর বিশ্বাস, সিতেরাম বিশ্বাস, তাপস বিশ্বাস, দয়াল মন্ডল তাদের পুরাতন ট্রলারগুলি মেরামত করছে। কপোতাক্ষ নদের তীরে বোয়ালিয়া ব্রীজের দুই পাশে ট্রলার তৈরী ও মেরামতের কাজ চলছে। বোয়ালিয়া মালোপাড়ার বিশ্বজিত বিশ্বাস জানায়, সমুদ্রে মাছ ধরতে য়েতে ১টি ট্রলার তৈরি করছে। নতুন ট্রলার তৈরী করতে সর্বমোট খরচ পড়ছে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছে, সাগরে মাছ ধরে তা বিক্রি করে টাকা শোধ করবে বলে তিনি জানান।
মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে ভয়ংকর,বিক্ষুদ্ধ উত্তাল ঢেউয়ের সংগে যুদ্ধ করে জেলেদের জাল ফেলে মাছ ধরতে হয়। জেলে পল্লী মানুষের আয়ের উৎস্য সমুদ্রে মাছ ধরা। এতো বিপদের সংগে লড়াই করে তাদের জীবিকা অর্জন করতে হয়।তবে এটা যেন তাদের নেশা ও পেশা হয়ে দাড়িয়েছে।তাই জেলে পল্লীর নারী-পুরুষ সবাই মিলে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র তৈরী ও গোছাতে দিন রাত কাজ করছে। এই নিয়ে জেলে পল্লীগুলোতে সাগর যাত্রার মহাকর্মযজ্ঞর প্রস্তুতির চলছে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy