নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈশ্বিক মহামারিরূপে আবির্ভূত করোনা ভাইরাসের কারণে স্থবিরতার মধ্যেই মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে নগরীর অন্তত শতাধিক স্পটগুলোতে। চলছে রমরমা মাদকের কারবার। নীরবে মাদক সরবরাহ করছে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা। করেনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধির জন্য মাস্ক, টুপি ও গ্লাস ব্যবহার করে প্রশাসন ও স্থানীয়দের দৃষ্টি আড়াল করে দেদারছে নগরীতে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাজা বিক্রি করে চলছে মাদক বিক্রেতারা। নিজেদের আড়াল করে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে পরিচালনা করছে মাদক ব্যবসা। এনিয়ে একাধিক পুলিশ সূত্র জানায়, অনেক সময় পাশ থেকে গেলেও বোঝা সম্ভব হয়ে উঠেনা যে আমরা ওকেই খুজতেছি। তবে ফেন্সিডিল, গাজা ও মদসহ অন্যান্য মাদকের মধ্যে ইয়াবা এখন মাদকের রাজ্যে রাজত্ব করছে। সহজে বহনযোগ্য ও গোপন করার মতো হওয়ায় নগরজুড়ে চলছে রাজত্ব। এনিয়ে বরিশাল মেট্টো ডিবির সহকারি পুলিশ কমিশনার নরেশ বলেন, করোনার শুরুতে আমাদের অনেকে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন কিংবা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলো। তবে এখন অনেকেই আবার সুস্থ্য হয়ে কর্মে যোগদান করেছে। এ সুযোগে হয়তো মাদক কারবারিরা একটু মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। সমস্যা নেই কারণ এখন অনেকেই সুস্থ্য হয়ে উঠছেন। আর আমি নিজেও করোনা থেকে সুস্থ্য হয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে ফিরতেছি। শীঘ্রই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে। সূত্র জানায়, নগরীতে মাদকের শতাধিক স্পট রয়েছে। এখানে ভ্রাম্যমাণ স্পটই সংখ্যায় বেশি। পুরুষ ও নারীরা যৌথভাবে এসব স্পটে মাদক ব্যবসা করছে। এর মধ্যে নগরীর বেলভিউ গলিতে হাতকাটা জাহাঙ্গীর, ফকিরবাড়ি রোড এলাকার কামালউদ্দিন হীরা, কাউনিয়া এলাকার রিয়াজ, কাউনিয়া সেকশন এলাকার রমযান, রোকেয়া আজিম সড়কে বাবু, সুন্নিয়া মসজিদ গলিতে হাত কাটা মিজান ও রাজা ওরফে কাউয়া রাজা, জোড় মসজিদ এলাকার জিতু, বেলতলার বাবু, ভাটিখানা টিবির মাঠে সাব্বির, তারা সাগর কাজি বাড়ি মসজিদ পিছনের গলি ও মাতৃমন্দির স্কুল গলিতে জিতু, লুৎফর রহমান সড়কস্থ শিক্ষা বোর্ডের পিছনে মাদ্রসা সংলগ্ন এলাকার মিঠু, বিএম স্কুল সড়কে কালু, কলেজ রো এলাকার নলি ওরফে রাজিব, আতলার মোড় এলাকার জিদনি, সাগরদি সিকদার পাড়া এলাকার আজিম, বিসিকের শুভ ও রুজবেল, জিয়া সড়ক লোহার পোল এলাকার বাবুল, গোড়াচাঁদ দাস সড়কে রচি ও রকি, পলিটেকনিক সড়কে কালা জাহিদ, বাংলা বাজারের রিফাত ও সিফাত দুই সহোদর, নাজিরুপুলে খাটো জামালসহ একাধিক মাদক কারবারিদের মধ্যে কেউ সরবরাহকারী ও বিনিয়োগকারী। এছাড়াও নগরীর উল্লেখযোগ্য স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে সাগরদি এলাকার কারিকর বিড়ি ব্রাঞ্চ রোড, ধান গবেষনা সড়ক, কলেজ এভেনিউ, কলেজ রো, বাংলাবাজার, পোর্ট রোড, কলাপট্টি, পুরানপারা, নথুল্লাবাদস্থ জিয়া সড়ক, চহুতপুর, রুপাতলীর আলতাফ খান গলি, পদ্দাবতী, লাইনরোড, অনামিলেন এবং নাজিরপুল এলাকা। সূত্রে আরো জানা গেছে, এসব এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নতুন করে উঠতি বয়সী তরুণ তরুণীরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। নগরীর একাধিক রিহ্যাব সেন্টার নাম অপ্রকাশের শর্তে বলেন, আগে নগরীতে ছেলেরাই বেশি আসতো আমাদের চিকিৎসা নেয়ার জন্য এখন মেয়েরাও চিকিৎসার নেয়ার জন্য ফোন করে। তবে তারা এসে ভর্তি হতে না চাইলেও নিজ নিজ বাসায় থেকে রিহ্যাব সেন্টারের চিকিৎসা নেয়ার জন্য অনুরোধ করে। এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: শাহাবুদ্দিন খান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের কয়েকটি ইউনিটের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশিং একটি অন্যতম মাধ্যম। কারণ এখানে জনতাই পুলিশ পুলিশই জনতা মর্মে কাজ করে এবং মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে একদম সচিত্র তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিরোধও গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে পুলিশ। করোনাকালীন এসময়ে আমরা আক্রান্ত হয়েও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মাদক কারবারিদের জীবন পাল্টাতে হবে অন্যথায় ভুখন্ড ছাড়তে হবে। এদিকে নগরীতে ইয়াবার রামরাজত্ব নিয়ে একাধিক সূত্র জানায়, সবচেয়ে আতংকের বিষয় হলো ইয়াবা বিক্রেতাদেরকে পুলিশ ২/৩বার আটক করে কিন্তু জামিনে এসে আবার সেই পুরানো জগতে ফিরে যায়। ইয়াবা কারবারীদের টাকার অভাব হয়না তাই এরা ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় দ্রুত জামিনে এসে আবার ইয়াবা বিক্রি করে। তাই এখন প্রয়োজন মাদক কারবারিদের শেষ করে দেয়া (ক্রশ ফায়ার) কারন ওদের পিছনে রাষ্ট্রের টাকা ব্যয় হয় আইনের আওতায় বারবার আনতে গেলে। কিন্তু এতে চালচিত্র পাল্টায় না, সেই ইয়াবার রাজত্ব থেকেই যাচ্ছে।